
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের যৌথ আয়োজনে চলমান আইসিসি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার-৮-এ থেমেছে বাংলাদেশের অভিযাত্রা। আসরে বাংলাদেশ পেয়েছে তিনটি জয়; যা ক্রিকেটের ক্ষুদ্র সংস্করণের বিশ্বকাপে টাইগারদের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জয়ের রেকর্ড। তবু কাঠগড়ায় চন্ডিকা হাথরুসিংহের দল।
‘ডি’ গ্রুপে থাকা বাংলাদেশের বিশ্বকাপ শুরু হয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে ২ উইকেটে হারিয়ে। দ্বিতীয় ম্যাচে দুর্ভাগ্যজনকভাবে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৪ রানে হেরে যায় টাইগাররা। তবে পরবর্তী দুই ম্যাচে হল্যান্ড আর নেপালকে হারিয়ে বাংলাদেশ পা রাখে সুপার-৮ পর্বে। এক বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দুটি করে জয় পেয়েছে ২০১৪, ২০১৬, ২০২১ ও ২০২২ সালে। কয়েকটা ম্যাচে তীরে এসে তরী ডুবেছে বাংলাদেশের। যার মধ্যে রয়েছে ২০১৬ ও ২০২২ সালে ভারতের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ। ২০২১ বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষেও এক অঙ্কের রানে হেরেছে টাইগাররা। চলতি বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয়টা হাতছাড়া হয়েছে ভাগ্য বিড়ম্বনায়। ২০তম ওভারের পঞ্চম বলে কেশভ মহারাজের বলে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দুর্দান্ত শট বাউন্ডারির ঠিক সামনে থেকে লুফে নেন মার্করাম।
বিশ্বকাপের শুরু থেকেই বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল সুপার-৮। লক্ষ্যটা বিস্তৃত হতে পারত। হয়নি। বরাবরের মতো একাদশ নির্বাচনে ভুল করা, অধিনায়ক নাজমুল হাসান শান্তর শিশুসুলভ ভুল সিদ্ধান্ত ডুবিয়েছে বাংলাদেশকে। একই সঙ্গে শান্ত, লিটন দাস, তানজিদ হাসান তামিম আর সাকিব আল হাসানদের বাজে পারফর্ম্যান্স ছিল দৃষ্টিকটু।
সুপার-৮-এ বৃষ্টি আইনে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ২৮ রানে হেরে যাওয়া নিয়ে বলার কিছু নেই। কিন্তু ভারতের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ নিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন। অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে টস জিতেছিলেন শান্ত। সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি বেছে নেন ফিল্ডিং। অথচ এই মাঠের ইতিহাস প্রথমে ব্যাট করাদের পক্ষে। শুধু তাই না, ভারত বরাবর স্পিনে পারদর্শী। সেই ভারতের বিপক্ষে শান্ত শুরু করেন মেহেদি হাসান আর সাকিবকে দিয়ে। ফলাফল উড়ন্ত সূচনা পাওয়া ভারত গড়ে ১৯৬ রানের স্কোর। বাংলাদেশের পরাজয়ের পর ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক মাইকেল ভন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখেন, ‘দিনে খেলা এবং সেখানে বোলিং করার সিদ্ধান্ত! ভারতের দুজন ব্যাটার যারা স্পিনে দুর্দান্ত খেলেন তাদের সামনে দুজন স্পিনার দিয়ে বোলিং কীভাবে শুরু করল বাংলাদেশ।’
বড় লক্ষ্য তাড়ায় ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটারদের মধ্যে জয়ের ক্ষুধাই দেখা যায়নি। যেমন-ওপেনার তানজিদ ৩১ বলে করেছেন ২৯ রান। অথচ পাওয়ারপ্লেতে যখন মাত্র দুজন ফিল্ডার বাউন্ডারিতে থাকতে পারেন, এই সময়েই দ্রুত রান তুলে লক্ষ্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন ব্যাটাররা। কিন্তু ব্যাটিং পিচেও তানজিদ ১৩টি ডট খেলেছেন। এটা নাকি টি-টোয়েন্টি! পুরো আসরে ৭ ম্যাচে সাকল্যে তিনি করেছেন ৭৬ রান। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে ৭ ম্যাচে ১০০ রানের সীমা পেরিয়েছেন তাওহিদ হৃদয়, লিটন, শান্ত আর সাকিব। হৃদয় সর্বাধিক ১৫৩ রান করেছেন বাংলাদেশের পক্ষে। বোলিংয়ে ৭ ম্যাচে ১৪ উইকেট নিয়ে চমক দেখিয়েছেন রিশাদ হোসেন। এ ছাড়া তানজিম সাকিবের সংগ্রহ ১১ উইকেট। অভিজ্ঞ সাকিব মাত্র ৩ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপ শেষ করেছেন। গড়েছেন প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ৫০ উইকেট দখলের কীর্তি। কিন্তু সাকিব হারিয়েছেন সেরা সময়, এটা স্পষ্ট।
বিশ্বকাপে বাংলাদেশ তিনটি জয় পেয়েছে। এটাই সান্ত্বনা। খোদ সাবেক অধিনায়ক সাকিব আর বিসিবি কর্তারাও বাংলাদেশকে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ‘শিশু’ বলে মানেন। অথচ একই বিশ্বকাপে আফগানিস্তান হারিয়ে দেয় নিউজিল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার মতো পরাশক্তিকে। গড়ে সেমিফাইনালে ওঠার ইতিহাস। আফগানদের শিকার হয়েছে বাংলাদেশও। আসলে বাংলাদেশের অ্যাপ্রোচেই রয়েছে গলদ। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মারমার কাটকাট খেলা; যা শেখেননি বাংলাদেশের ব্যাটাররা। কালেভদ্রে কেউ দুই-এক ম্যাচ ভালো করে ফেললে তাকে মাথায় তুলে নাচা হয়। দিনের পর দিন বাজে ফর্মে ভুগলেও দল থেকে বাদ বা বিশ্রাম দেওয়ার কথা ভাবা হয় না। আবার তামিম ইকবালদের মতো ওপেনারদের সময়ের আগে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নির্বাসনে। হ্যাঁ, এটাই বাংলাদেশ।