২০২৩ সালে এসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাতকে রেকর্ড ১৯৫ রানে হারিয়ে শিরোপা জয় করে যুবারা। ২০২৪ সালেও একই আসরের ফাইনালে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। ভেন্যুতে নেই কোনো পরিবর্তন। তবে প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশের সামনে মহাশক্তিধর ভারত। যারা ১৯৮৯ সাল থেকে প্রবর্তিত অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপের সর্বোচ্চ আটটি শিরোপার মালিক। যারা যুবাদের এশিয়া কাপ ফাইনালে উঠে কখনো হারেনি। ২০১৯ সালের ফাইনালে বাংলাদেশকেও হারিয়েছিল। প্রশ্ন ছিল একটাই, বাংলাদেশ কি পারবে ভারতকে ইতিহাসে প্রথমবার যুব এশিয়া কাপের ফাইনালে পরাজয়ের স্বাদ দিতে?
বাংলাদেশ পেরেছে। ৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ফাইনালে বাংলাদেশের কাছে ৫৯ রানে হেরেছে ভারত। প্রথমে ব্যাট করা বাংলাদেশ ৪৯.১ ওভারে গড়েছিল ১৯৮ রানের ইনিংস। জবাবে ৩৫.২ ওভারে ১৩৯ রানে থেমে যায় ভারতীয়দের লড়াই। টানা দ্বিতীয় এশিয়া কাপ জয়ের উল্লাসে মেতে ওঠে বাংলাদেশের যুবারা।
১১তম যুব এশিয়া কাপে অংশ নিয়েছিল আটটি দেশ। ‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশের সঙ্গী শ্রীলঙ্কা, নেপাল আর আফগানিস্তান। বিপরীতে ‘এ’ গ্রুপে পাকিস্তান, ভারত, স্বাগতিক আমিরাত আর জাপানের মধ্যে ছিল লড়াই। বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচেই ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন আফগানিস্তানকে ৪৫ রানে হারিয়ে শুভ সূচনা করে। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের জয় আসে নেপালের বিপক্ষে ৫ উইকেটের বিপক্ষে। তবে গ্রুপের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে ৭ রানে হারলেও সেমিফাইনালে উঠে আসে ইয়াং টাইগাররা। সেমিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটের জয় পায় বাংলাদেশ। অন্যদিকে ভারত চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট শুরু করে। পরের দুই ম্যাচে তারা বিধ্বস্ত করে জাপান আর আমিরাতকে। সেমিতে অপরাজিত শ্রীলঙ্কাকেও ৭ উইকেটে হারিয়ে বিদায় করে টিম ইন্ডিয়া। তবে ফাইনালে ইয়াং ম্যান ইন ব্লুরা পাত্তা পায়নি বাংলাদেশের দামাল যুবাদের কাছে।
ফাইনালে বাংলাদেশের জয়ের নায়ক ছিলেন অধিনায়ক আজিজুল হাকিম ও ইকবাল হোসেন ইমন। প্রতিপক্ষ ভারতের তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন তারা। ২৪ রানে ৩ উইকেট পাওয়া ইমন হয়েছেন ফাইনালের সেরা। সর্বোচ্চ ১৩ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরাও তিনি। পাকিস্তানের শাহজাইব খান করেছেন টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ৩৩৬ রান।
প্রতিযোগিতার শুরু থেকে ভারত ছিল হট ফেভারিট। বৈভব সূর্যবংশীর ওপর ছিল বাড়তি নজর। বয়স ১৪ পুরো হয়নি। এরই মধ্যে আইপিএলে তাকে এক কোটি ১০ লাখ রুপিতে কিনে নিয়েছে রাজস্থান রয়্যালস। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ ক্রিকেটের ইতিহাসে সে সবচেয়ে কম বয়সী কোটিপতি! বিগত এক বছরে হাঁকিয়েছে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে ৪৯টি সেঞ্চুরি। গত ১ অক্টোবর বেসরকারি টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিরুদ্ধে ৫৮ বলে শতরান করে। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ের লাল বলের ক্রিকেটে ভারতের হয়ে এটাই দ্রুততম শতরান। সব মিলিয়ে যুবাদের এশিয়া কাপে সবচেয়ে বড় তারকা হয়ে এসেছিল বৈভব। সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলেছে ৩৬ বলে ৬৭ রানের ইনিংস। ছয়টি চারের সঙ্গে মেরেছে পাঁচটি ছক্কা। আরব আমিরাতের বিপক্ষে করেছে ৪৬ বলে অপরাজিত ৭৬ রান, সেদিন ছক্কা মেরেছে ছয়টি।
তবে ফাইনালে পঞ্চম ওভারে ছন্দে থাকা বৈভবকে ফেরায় মারুফ মৃধা। ৭ বলে ৯ রান আসে ভারতীয় বিস্ময়বালকের ব্যাট থেকে। বৈভবকে বিদায় করেই বাংলাদেশ ফাইনাল জয়ের পথে অনেকটা এগিয়ে যায়।
বড় মঞ্চে পারছে না বাংলাদেশের জাতীয় দল। কিন্তু পাঁচ বছর ধরে ক্রিকেট দেখছে বাংলাদেশ উনিশের ‘দাপট’। গত চার যুব এশিয়া কাপে তৃতীয়বার ফাইনাল খেলেছে তারা। ২০১৯ যুব এশিয়া কাপে রানার্সআপ, ২০২৩ ও ২০২৪-এ চ্যাম্পিয়ন। মাঝে ২০২০ যুব বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন। অথচ জাতীয় দলে সুযোগ পেয়ে নিজেদের মেলে ধরতে পারছে না তরুণ ক্রিকেটাররা। সমস্যা কোথায়? খুঁজে বের করতে হবে কর্তাদের।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh