আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে মাঠে গড়াচ্ছে। ওয়ানডে ফরম্যাটে আট দলের টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হবে পাকিস্তান আর সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ‘এ’ গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত, পাকিস্তান আর নিউজিল্যান্ড। ‘বি’ গ্রুপে খেলবে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা আর আফগানিস্তান। ৯ মার্চ গ্র্যান্ড ফাইনালের মধ্য দিয়ে পর্দা নামবে ‘মিনি বিশ্বকাপ’ নামে পরিচিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির।
ক্রিকেটের বড় আসরকে সামনে রেখে প্রতিযোগী আট দল ঘোষণা করেছে স্কোয়াড। নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বে বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের দলে জায়গা হয়নি সাকিব আল হাসান আর লিটন কুমার দাসের। বিশ্বসেরা অল রাউন্ডার সাকিব রয়েছেন আইসিসির বোলিং নিষেধাজ্ঞায়। তাই সুযোগ পাননি দলে। কিন্তু লিটনের বাদ পড়া অবাক করেছে ক্রীড়াপ্রেমীদের। এটা সত্যি, লিটন লম্বা সময় ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছন্দে নেই। বিগত ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে করেছিলেন ৬৬ রান। পরবর্তী ১৩ ইনিংসে নেই কোনো ফিফটি। আর সর্বশেষ সাতটি এক দিনের ম্যাচে তো পাননি দুই অঙ্কের রানের দেখা। ডিসেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তার স্কোর ২, ৪ ও ০ রান।
ব্যাট হাতে নিজেকে খুঁজে না পাওয়া নিয়ে লিটনকে নিয়ে সমালোচনার অন্ত ছিল না। তাই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে লিটনকে বাদ দিয়ে বিসিবি (বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড) ‘বোকামি’ করেছে বলা যাবে না। কিন্তু সমস্যা বাধিয়েছে চলমান বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) লিটনের ফর্ম। ঢাকা ক্যাপিটালসের ওপেনার ৯ ম্যাচেই করেছেন ৩৪৮ রান। পেয়েছেন দুটি হাফসেঞ্চুরি। দুর্বার রাজশাহীর বিপক্ষে রেকর্ডবুক তছনছ করেছেন। মাত্র ৫৫ বলে ১০টি চার আর ৯টি ছক্কায় করেন অপরাজিত ১২৫ রান। সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে লিটন সেঞ্চুরি পূরণ করেন ৪৪ বলে, যা বিপিএল ইতিহাসে বাংলাদেশিদের মধ্যে দ্রুততম। পাকিস্তানের আহমেদ শেহজাদ ২০১২ সালে ৪০ বলে গড়ে রেখেছেন দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড।
কেউ কেউ বলতে পারেন বিপিএল তো টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। আর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির খেলা হবে ওয়ানডে ফরম্যাটে। কিন্তু লিটনের বদলে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছে পারভেজ হোসেন ইমন। বাংলাদেশের হয়ে ইমনের ওয়ানডে ম্যাচ খেলার কোনো অভিজ্ঞতা নেই। টাইগারদের হয়ে সাতটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে করেছেন ৮৮ রান। আহামরি কিছু নয়। চলমান বিপিএলেও ৭ ম্যাচের ৭ ইনিংসে মাত্র ১৩৯ রান এসেছে ইমনের ব্যাট থেকে। সর্বোচ্চ ৩৯। স্ট্রাইকরেট ১২৫.৬০! তাহলে?
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্কোয়াডে ওপেনার হিসেবে দলে আছেন তানজিদ হাসান আর সৌম্য সরকার। তানজিদ বাংলাদেশের হয়ে ২১টি ওয়ানডে ম্যাচের সঙ্গে ১৮টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। এক দিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনটি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে তার। চলতি বিপিএলেও ১০ ম্যাচের ১০ ইনিংসে ঢাকার হয়ে টুর্নামেন্ট সর্বোচ্চ ৪২০ রান এসেছে তানজিদের ব্যাট থেকে। হাঁকিয়েছেন তিনটি হাফসেঞ্চুরি আর একটি সেঞ্চুরি। সৌম্য লম্বা সময় ইনজুরিতে ভুগেছেন।
অনেকেই মনে করেন, অভিজ্ঞ আর দারুণ প্রতিভাবান লিটনকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বিবেচনা করা উচিত ছিল। তিনি একাধারে ওপেনার, মিডল অর্ডার আর উইকেট রক্ষক। ৯৪টি আন্তর্জাতিক এক দিনের ম্যাচে লিটনের রয়েছে পাঁচটি সেঞ্চুরি। রান ২৫৬৯। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ২০২১ আর টেস্টে ২৭৮৮ রানের মালিক। ২০২৪ সালের আগস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে তার সেঞ্চুরি জনপ্রিয় ক্রিকেটভিত্তিক ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফোর বর্ষসেরার তালিকায় রয়েছে, যা ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে চরম বিপদে পড়া বাংলাদেশকে বাঁচানোর পাশাপাশি ঐতিহাসিক জয় এনে দিতে বড় ভূমিকা রাখে। আসলে লিটন জাত ক্রিকেটার। ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে তিনি দলকে ভরসা দিতে পারেন। যেকোনো খেলোয়াড়ের বাজে ফর্ম যাওয়া অস্বাভাবিক না। লিটনেরও বাজে ফর্ম গেছে। কিন্তু বিপিএলে তিনি ছন্দে ফিরেছেন। তাতে লিটনকে ছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশের ভরাডুবি হলে আফসোস বাড়বে বৈকি!
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh