জয়ের জন্য শেষ ওভারে ফরচুন বরিশালের দরকার ছিল ৮ রান। আগের ওভারের শেষ বলে সপ্তম উইকেট হিসেবে মোহাম্মদ নবী (৪) সাজঘরে ফেরায় চাপে পড়ে গিয়েছিল তারা। ম্যাচের ভাগ্য তখন পেন্ডুলামের মতোন দুলছে। তবে তামিম্ ইকবালদের বুক থেকে পাথরভার মুহূর্তেই সরিয়ে দেন রিশাদ হোসেন।
চিটাগাং কিংসের পাকিস্তানি পেসার হুসাইন তালাতের করা শেষ ওভারের প্রথম বলেই ছয় মারেন রিশাদ। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে তানভির ইসলামকে (০*) স্ট্রাইক দেন তিনি। ম্যাচ ততক্ষণে সমতায়। তানভিরকে কোনো কষ্টই করতে হয়নি। চতুর্থ বলে ওয়াইড দেন তালাত। তাতেই রোমাঞ্চকর জয় নিশ্চিত হয়ে যায় বরিশালের।
৩ বল হাতে রেখে চিটাগংকে ৩ উইকেটের হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার বিপিএল জিতলেন তামিমরা। লক্ষ্য তাড়ায় ৭ উইকেটে ১৯৫ রান করে বরিশাল। চিটাগং বড় লক্ষ্য দিয়েও স্বাদ পেলো না শিরোপার। ফ্র্যাঞ্চাইজিটি দ্বিতীয়বার ফাইনাল খেলতে নেমেছিল। সেটিও ২০১৩ সালের পর। বন্দর নগরের দলটি এবার ফাইনালের টিকিট কেটেছিল দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর জয়ে।
মিরপুরে আজ শিরোপা ধরে রাখার মিশনে টসে জিতে ফিল্ডিং নেন অধিনায়ক তামিম। তবে তাদের সেই সিদ্ধান্তকে ভুল প্রমাণিত করতে বেশিক্ষণ লাগেনি খাজা নাফি ও পারভেজ হোসেন ইমনের। চিটাগংয়ের দুই ওপেনার উদ্বোধনী জুটিতে করেন ১২১ রান। তার মধ্যে নাফি ৪৪ বলে করেন ৬৬ আর ইমন ৪৯ বলে অপরাজিত ছিলেন ৭৮ রানে।
নাফিকে ফিরিয়ে বরিশালকে ব্রেকথ্রু এনে দেন ইবাদত হোসেন। তারপরও থামেনি চিটাগংয়ের তাণ্ডব। দ্বিতীয় উইকেটে গ্রাহাম ক্লার্কের সঙ্গে ৭০ রানের জুটি গড়েন ইমন। শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ক্লার্ক ফেরেন ২৩ বলে ৪৪ রান করে। দুই বল পর আউট হন শামীম হোসেন পাটওয়ারিও (২)। পরের দুই বল খেললেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তালাত। চিটাগং ৩ উইকেটে করে ১৯৪ রান।
ফাইনালের জন্য লক্ষ্যটা বেশ বড়ই ছিল। তবে তামিমরা আগেরদিন কথা দিয়েছিলেন জিতলে ট্রফি নিয়ে লঞ্চে বরিশালে যাবেন। সেই কথা রাখতে যেন নিজেদের উজাড় করে দিলেন। লক্ষ্য তাড়ায় তামিম ও তাওহীদ হৃদয় ওপেনিং জুটিতে স্কোরবোর্ডে ৭৬ রান জমা করেন। ইনিংসের ৯ম ওভারের প্রথম বলে সেই জুটি ভাঙেন শরীফুল ইসলাম। তামিম ২৯ বলে ৫৬ রান করে ফেরেন খালেদের তালুবন্দী হয়ে। স্কোরবোর্ডে আর ২ রান জমা পড়তেই তিন বল পরে শরীফুলের দ্বিতীয় শিকার হয়ে বিদায় নেন ডেভিড মালানও (১)।
দলীয় ৯৬ রানে বিদায় নেন তাওহীদ (৩২)। তবে বরিশালের লঞ্চকে ডুবতে দেননি কাইল মেয়ার্স। ২৮ বলে ৪৬ রানের ইনিংস খেলেন ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার। দলের প্রয়োজনের সময় উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিম (১৬) ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ (৪) জ্বলে উঠতে পারেননি। শেষ দিকে নবীকে হারালে দমবন্ধ অবস্থা হয় বরিশালের। কিন্তু রিশাদ যে বোলিংয়ের পাশাপাশি বড় ছক্কা হাঁকাতেও ওস্তাদ, প্রয়োজনের সময় আজ আবারও সেটি দেখালেন। ৬ বলে অপরাজিত ১৮ রানের ইনিংস খেলে বরিশালকে পৌঁছে দেন জয়ের বন্দরে। ফ্র্যাঞ্চাইজিটির এটি দ্বিতীয় বিপিএল শিরোপা।
ফাইনালে ফিফটি করে ম্যাচসেরা হয়েছেন তামিম। আগেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়ায় আজ বিসিবি থেকে বিশেষ স্বীকৃতিও পেয়েছেন এই বাঁহাতি ড্যাশিং ওপেনার। টু্র্নামেন্ট সেরা হয়েছেন খুলনার অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ।