
প্রতীকী ছবি
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী সরকারের আমলে নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে গঠিত গুম কমিশনের মেয়াদ সাড়ে তিন মাস বাড়িয়েছে সরকার।
নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ১৫ মার্চ শেষ হওয়ার কথা থাকা এই কমিশন কার্যকর থাকবে আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত।
সোমবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা ৩ মাস বাড়ানোর বিষয়টি উল্লেখ করা হয়।
তুমুল গণ-আন্দোলনের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকা শেখ হাসিনা ভারতে উড়ে যাওয়ার ২২ দিন পর ২৭ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে এই গুম কমিশন গঠন করে।
কমিশনকে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে গুমের ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
পাঁচ সদস্যের এই কমিশনের প্রধান করা হয় হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে।
অন্য সদস্যরা হলেন হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন।
পরে ওই প্রজ্ঞাপন বাতিল করে ১৫ সেপ্টেম্বর নতুন প্রজ্ঞাপনে প্রতিবেদন জমা দিতে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় ঠিক করে দেওয়া হয়। সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই ৩ ডিসেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে কমিশনের মেয়াদ তিন মাস বাড়িয়ে ১৫ মার্চ করা হয়।
কমিশন ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সরকার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থা, তদন্ত সংস্থা এবং অনুরূপ যে কোনো বাহিনীর দ্বারা গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে তথ্য সংগ্রহের কাজ করছে।
সরকারি বাহিনীর সহায়তায় বা সম্মতিতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টির মাধ্যমে ‘আয়নাঘর’ বা যে কোনো স্থানে বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, বলপূর্বক গুমের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ করবে কমিশন।
বলপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় আইন সংস্কারের সুপারিশ করতেও বলা হয়েছে কমিশনকে।
গত ১৪ ডিসেম্বর এই কমিশন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে একটি অন্তর্বর্তী একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। পরদিন এ প্রতিবেদনের কিছু অংশ প্রকাশও করা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গুমের’ ঘটনায় হাসিনা প্রশাসনের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (চাকরিচ্যুত) জিয়াউল আহসান এবং আওয়ামী লীগ শাসনামলে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম ও হারুন অর রশীদের নামও উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
কমিশন ১ হাজার ৬৭৬টি অভিযোগ পেয়ে ৭৫৮ জনের অভিযোগ যাচাই-বাছাই করেছে জানিয়ে কমিশনের প্রধান মইনুল ইসলাম চৌধুরী সেদিন বলেন, “গুমের সাথে ‘জড়িত কর্মকর্তারা’ কাজটি এমনভাবে করেছে যাতে এগুলো শনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়। বিভিন্ন ফোর্স নিজেদের মধ্যে ভিকটিম বিনিময় করেছে এবং পরিকল্পনা ভিন্ন ভিন্নভাবে বাস্তবায়ন করেছে।”
গুমের শিকার অনেকে এখনও শঙ্কামুক্ত হতে পারছেন না জানিয়ে তিনি আরও বলেন। তাদের ওপর এতটাই ‘ভয়াবহ নির্যাতন’ চালানো হয়েছিল যে তারা এখনও ট্রমায় ভুগছেন
আয়নাঘর’ নামে পরিচিতি পাওয়া গোপন বন্দিশালা পরিদর্শনে প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধও করা হয় এই প্রতিবেদনে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি মুহাম্মদ ইউনূস তিনটি ‘গোপন বন্দিশালা’ পরিদর্শন করার সময় কমিশনের সদস্যরাও সঙ্গে ছিলেন।
গুমের’ ঘটনায় বিচার-প্রক্রিয়া শুরু এবং র্যাব বিলুপ্তির সুপারিশও করা হয় কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে।