
তারেকুজ্জামান রাজীব। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের (মোহাম্মদপুর) কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবের বাসা ও কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
তবে এ অভিযানে শুধুমাত্র পাঁচ কোটি টাকার চেক ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। র্যাবের ধারণা, আগে থেকেই সতর্ক থাকায় রাজীব আর্থিক লেনদেনের আলামত সরিয়ে ফেলেছেন।
রাজীবকে গ্রেপ্তারের পর তাকে সঙ্গে নিয়ে তাঁর মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটি এলাকার বাসায় অভিযান শুরু করেন র্যাব সদস্যরা।
র্যাব-২ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, রাজীবকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই তার মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটির ১ নম্বর রোডের ৩৩ নম্বর বাড়িটি ঘিরে রাখে র্যাব। পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে বাসাটিতে অভিযান শুরু করা হয়।
বন্ধুর বাসায় আত্মগোপনে থাকা রাজীবকে শনিবার রাতে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় ওই বাসা থেকে সাতটি বিদেশি মদের বোতল, একটি পিস্তল, একটি ম্যাগজিন, তিন রাউন্ড গুলি, নগদ ৩৩ হাজার টাকা ও একটি পাসপোর্ট জব্দ করা হয়।
র্যাব জানায়, সন্ত্রাসবাদ, চাঁদাবাজি এবং দখলদারিত্বের মতো সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে রাজীবকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
অভিযান শেষে র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, ‘আমরা মোহাম্মদপুরে তাঁর বাসা ও অফিসে তল্লাশি করেছি। সেখানে তেমন কিছু পাইনি। কারণ আমরা যা বুঝতে পেরেছি তার বাড়িতে আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত যেসব ডকুমেন্ট ছিল সেগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে তারই একজন সহযোগীর আত্মীয় বাড়ি থেকে একটি চেকবই উদ্ধার করা হয়েছে। বইটিতে দেখা গেছে, ব্র্যাক ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে একদিনে (তিনটি চেকের মাধ্যমে) পাঁচ কোটি টাকা জমা দেওয়া হয়েছে। আমরা এগুলো তদন্ত করে দেখছি কোথায় টাকা জমা দিয়েছেন, টাকাগুলো কোথায় গিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আপাতত তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে দু’টি মামলা হবে। অর্জিত আয়ের উৎস ও অর্থ পাচারের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও এই অর্থ তিনি কোথায় খরচ করেছেন দেখা হবে। যদি এখানে মানিলন্ডারিংয়ের কোনো বিষয় থাকে তখন তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হবে।’
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘রাজীবের সহযোগী ও তাঁর সঙ্গে জড়িত রয়েছে এমন আত্মীয় বা অনাত্মীয় প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমার তো আসলে তাঁর বৈধ আয়ের কোনো কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। তাঁর যে একটি রাজকীয় বাড়ি রয়েছে এ বাড়িটির বাজারমূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা। বাড়ির আসবাবপত্র থেকে শুরু করে প্রত্যেকটা জিনিস সে বিদেশ থেকে আমদানি করে এনেছে। এসব তাঁর জ্ঞাত আয়ের বহির্ভূত বলে আমাদের মনে হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, কাউন্সিলর হওয়ার আগ পর্যন্ত তার দৃশ্যমান কোনো ধরনের ব্যবসা বা পেশা ছিল না। বর্তমানে সিটি করপোরেশন থেকে যে সম্মানি পান সেটা তার একমাত্র প্রধান আয়। এছাড়া যে অবৈধ লেনদেনেরর বিষয়গুলো রয়েছে, সেসব তদন্ত সাপেক্ষে বেরিয়ে আসবে।’
২০১৫ সালে কাউন্সিলর নির্বাচনে তিনি ছিলেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী। দলীয় প্রার্থী ও মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি শেখ বজলুর রহমানকে হারিয়ে নির্বাচিত হন তিনি।
মোহাম্মদপুর এলাকায় যুবলীগের রাজনীতি দিয়েই রাজীবের রাজনৈতিক জীবন শুরু। অল্পদিনেই নেতাদের সান্নিধ্যে মোহাম্মদপুর থানা যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পদ বাগিয়ে নেন। এরপর অভিযোগ আছে, কেন্দ্রীয় যুবলীগের এক নেতাকে এক কোটি ২০ লাখ টাকা দিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন রাজীব।
এক মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করার অভিযোগে রাজীবকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে আবার ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হন তিনি।
আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী জানিয়েছেন, রাজীব নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তান ছিলেন। তাঁর বাবা রডের মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর চাচা ছিলেন রাজমিস্ত্রি। কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই রাজীবের পরিবর্তন শুরু হয়। কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর রাজীব বস্তির ছেলেদের নিয়ে বাহিনী গড়ে তোলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, রাজীব তাঁর বাহিনী দিয়ে জমি দখল ও চাঁদাবাজি করাতেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদা সংগ্রহের জন্য তাঁর আলাদা বাহিনী করে দেওয়া ছিল। এছাড়া গত কয়েক বছরে তিনি ১৫-২০টি জায়গা বা ফ্ল্যাট দখল করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।