নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৪:৫২ পিএম
আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৫:০৩ পিএম
কুমিল্লায় নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে যুবদল নেতা মো. তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর ঘটনার দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। আজ শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এক বিবৃতিতে সরকারের এই নির্দেশনার কথা জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে যেকোনো ধরনের নির্যাতন ও হত্যার কঠোর নিন্দা জানায়। জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মানবাধিকারের সুরক্ষা নিশ্চিত করাই এই সরকারের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, যেখানে দেশের শীর্ষ মানবাধিকার কর্মীরা সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন।
প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কুমিল্লায় গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে আহত অবস্থায় তরুণ তৌহিদুল ইসলামকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, ওই দিন ভোররাতে তার বাড়ি থেকে আটক করার পর তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হন।
তৌহিদুলের মৃত্যুর বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে।
দেশে এ ধরনের অপরাধের বিচারিক প্রক্রিয়া সংস্কারের লক্ষ্যে সরকার ইতোমধ্যে একাধিক কমিশন গঠন করেছে। এসব কমিশনের বেশির ভাগই তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ, অপরাধ ব্যবস্থাপনা এবং বিচারিক প্রক্রিয়ায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের সব সুযোগ নির্মূল করতে সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে গঠনমূলক সংলাপ করবে বলে প্রেস উইং জানায়।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই সংস্কার কর্মসূচি কার্যকর করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
যুবদল নেতা তৌহিদুর রহমানের পরিবারের সূত্রে জানা যায়, তিনি চট্টগ্রাম বন্দরে একটি শিপিং এজেন্টে চাকরি করতেন। গত রবিবার তার বাবা মোখলেছুর রহমানের মৃত্যুর খবরে তিনি বাড়ি আসেন। শুক্রবার বাবার কুলখানি হওয়ার কথা ছিল। তৌহিদুলের মা প্রায় ২০ বছর আগে মারা গেছেন। সংসারে তার স্ত্রী ও চার কন্যাসন্তান রয়েছে।
তৌহিদের ভাই আবুল কালাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তার বাবা চার দিন আগে মারা গেছেন। বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে সেনাবাহিনীর ৩টি গাড়ি ও একটি লাল রঙের গাড়ি বাড়িতে আসে। তৌহিদুল ইসলামের কাছে অস্ত্র আছে— এমন অভিযোগে তাকে ধরে নিয়ে যায়।
আবুল কালাম বলেন, আমার ভাই কখনই অস্ত্র আনতে পারে না। তার সম্পর্কে আমাদের পুরো এলাকা খুব ভালো করে জানে। আমরা বারবার বলার পরেও তারা নিয়ে যায় আমার ভাইকে। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ আমাদের জানায়, তাকে গোমতী পাড়ের গোমতী বিলাশ নামক স্থান থেকে তারা উদ্ধার করেছে। সে নাকি হাসপাতালে আছে। আমরা কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখি তার লাশ। তার শরীরের বেদম মারের আঘাতের চিহ্ন।
এদিকে এ ঘটনায় বিচার দাবি করে ফেসবুকে পৃথক পোস্ট দিয়েছেন বিএনপি ও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। যুবদল নেতার মৃত্যুতে জড়িত সেনা সদস্যদের বিচার চেয়েছে দলটি।
এদিকে তৌহিদুলের মৃত্যুর ঘটনায় নিজেদের অবস্থান জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘গত ৩১ জানুয়ারি রাত ৩টায় সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে যৌথবাহিনীর অভিযানে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলা হতে মো. তৌহিদুর রহমানকে (৪০) আটক করা হয়। এদিন সাড়ে ১২টায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। এই অনাকাঙ্ক্ষিত ও দুঃখজনক ঘটনাটি তদন্তে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে, উক্ত সেনা ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডারকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে।’
এতে আরও বলা হয়, ‘মৃত্যুর সঠিক কারণ উদঘাটনের জন্য একটি উচ্চপদস্থ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সেনা আইন অনুযায়ী যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh