নারীরা পর্দা ছাড়া বের হলেই ধর্ষণ করার হুমকি এবং মেয়েদের দেখলেই হিজাব পরতে বলে ভিডিও তৈরি করার ঘটনায় আটক খালিদ মাহমুদ হৃদয়ের বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলার পর তাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার দুপুরে হৃদয়ের মামলা করার পর তাকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে পাঠায় সাভার মডেল থানা পুলিশ।
গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুকে হৃদয়ের করা বেশকিছু ভিডিও ভাইরাল হলে তাকে গ্রেপ্তারের দাবির মুখে সোমবার বিকালে সাভারের আমিনবাজার এলাকা থেকে তাকে আটক করে পুলিশ।
এই যুবকের বিষয়ে এখনও বিস্তারিত তথ্য জানায়নি পুলিশ। মামলায় তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়েও এখনও তথ্য মেলেনি।
পুলিশ জানিয়েছে, সাভার উপজেলার আমিনবাজার ইউনিয়নের হিজলা মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা তিনি।
সাভার মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আশিক ইকবাল বলেন, “মামলার বাদী এসআই ফয়সাল। দুপুরে ওই মামলায় আটক হৃদয়কে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে পাঠানো হয়েছে।”
হুদয়ের সম্পর্কে ‘বেশি কিছু জানা নেই’ উল্লেখ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, “তবে ভিডিও তৈরি করে প্রচারণা ছাড়া সে তেমন কিছুই করে না বলে জানতে পেরেছি।”
কী আছে হৃদয়ের ভিডিওতে
সম্প্রতি ফেসবুকে যে কয়টি ভিডিও প্রচার হচ্ছে, তার একটিতে দেখা যায়, তিনি স্কুল ড্রেস পরা এক তরুণীর পিছু নেওয়ার পর সেই তরুণী বিব্রত হচ্ছিলেন।
হাতে একটি লাঠি নিয়ে হৃদয় সেই তরুণীকে বলতে থাকেন, “ভালো আছেন? আমি কি আপনারে কিছু কইছি? ভয় পান কেন?”
“শোনেন না, ভয় পান কেন? আমি আপনারে কিছু বলছি, ভয় পান কেন”, বলে সেই তরুণীকে উত্ত্যক্ত করতেই থাকেন তিনি।
পরক্ষণে বলেন, “আপনি ভয় পাচ্ছেন কেন? আপনাকে অনেক সুন্দর লাগতেছে। … অনেক মেয়েরা তো অনেক বাজেভাবে বের হয়, কিন্তু সে অনেক সুন্দরভাবে বের হয়েছে। মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর লাগতেছে। আপনাকে অনেক সুন্দর লাগতেছে, আর কিছু বলব না। আপনি চলে যান।”
পরে অন্যদেরকে শুনিয়ে হৃদয় বলতে থাকেন, “ওনাকে অনেক সুন্দর লাগতেছে না? অনেকে অনেক বেহায়ার মতো বের হয় না?”
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, চারজন নারী হেঁটে যাচ্ছেন, হৃদয় গিয়ে তাদেরকে বলতে থাকেন, “ওনারে হিজাব পরাতে পারেন নাই? শত শত বোন হিজাব পরছে, ওনারে হিজাব পরাবেন, আপনারা পরছেন অনেক সুন্দর লাগতেছে, ওনারেও পরাবেন।”
সালোয়ার কামিজ পরা সেই তরুণীকে উদ্দেশ করে হৃদয় আরও বলেন, “আর ওড়না সুন্দর করে পরেন।”
পরক্ষণে অন্য নারীদের তিনি আবার বলেন, “আপনারা হিজাব পরছেন সুন্দর লাগতেছে, ওনারেও পরাবেন।”
আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, ফুচকা খাচ্ছেন এমন এক তরুণীকে হৃদয় গিয়ে বলেন, “আপা, আপনি হিজাব পরলে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগত। হিজাব পরবেন, হিজাব পরে বের হবেন।”
অন্য আরেকটি ভিডিওতে এক কিশোরীকে হৃদয় বলেন, “আপা, আপনি হিজাব পরলে আরও সুন্দর লাগবে। আপনি হিজাব পরবেন।”
“আমি তো হিন্দু”, জবাব দেয় সেই কিশোরী।
“হিন্দু, তাতে কী হয়েছে, এ জন্য কি মানুষদের দেখানো লাগবে বলো”, বলে হেয়ালির হাসি দেন হৃদয়।
অন্য আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায় এক তরুণ হৃদয়ের কলারে ধরে বলেন, “তুই ১৭ জনকে ধর্ষণ করছস, আমার হাত থেইক্যা আজকে তুই বাঁচতে পারবি না।”
“১৭ জন না, যারা বেপর্দাভাবে বের হবে সবাইরে আমি ধর্ষণ করুম”, পাল্টা হুমকি দেন হৃদয়।
এরপর দুই জনের মারামারি বাঁধে, হৃদয় সেই তরুণকে মাটিতে ফেলে বলতে থাকেন, “আমারে হারানোর শক্তি দুনিয়ার কারও নাই। যারা বেপর্দাভাবে বের হইব, সবাই ধর্ষণের শিকার হইব।”
“এখনও সময় আছে, বেপর্দাভাবে বাইর হওয়া বন্ধ করেন, তা না হলে. নেক্সট টার্গেট তুমি” বলে নারীদের প্রতি বার্তা দেওয়া হয় সেই ভিডিওতে।
এসব ভিডিও ছড়িয়ে দিয়ে গ্রেপ্তার দাবি করায় চটে গিয়ে হৃদয় আরেকটি ভিডিও ছাড়েন ফেসবুকে। এতে বলতে শোনা যায়, ভিডিও ছড়িয়ে তাকে হয়রানি করা হচ্ছে। যারা এটি করছে তাদের সবার বিরুদ্ধে মামলা করতে থানায় যাওয়ার হুমকি দেন তিনি। এর কিছুক্ষণ পরেই তাকে সাভার থানায় নেয় পুলিশ।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh