একের পর এক ছিনতাইয়ে রাজধানীবাসীর মধ্যে যখন নিরাপত্তাহীনতা চরমে, সে সময় এমন একটি ঘটনা ঘটেছে যা বিশ্বাস করতে পারছে না খোদ ভুক্তভোগীই।মোটরসাইকেলে করে যাওয়ার সময় এক নারীকে কোনো কারণ ছাড়াই ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়েছে।
হামলাকারী কোনো কিছু ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেনি, তার সঙ্গে কোনো বাকবিতণ্ডাও হয়নি, হামলাকারীকে তিনি চিনতেনও না, তার সঙ্গে অন্য কোনো বিষয়ে অন্য কারও সঙ্গে বিরোধ নেই যে তিনি কোনো প্রতিশোধের শিকার হতে পারেন।
“হঠাৎ আমার পায়ে কোপ বসাল। সঙ্গে সঙ্গে পা জ্বলে উঠল এবং জুতো পুরাটা রক্তে ভিজে গেল।”
তার সঙ্গে কী হয়েছিল, সাম্প্রতিক দেশকাল নিউজকে বলছিলেন আইডিয়াল ল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস।
গত রবিবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের আল্লাহ করিম মসজিদের কাছাকাছি। সেখানে সড়ক বিভাজকে দাঁড়িয়ে থাকা একজন তরুণ তার পায়ে কোপ দেয়।
“আমরা চলন্ত মোটরসাইকেলে ছিলাম। আর এই পয়েন্টে ছিনতাই করাও কঠিন। তবে কেন আমার পায়ে কোপ দিয়েছে জানি না। আমি তাকে চিনিও না। আমার এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না আমার সঙ্গে প্রথম এমন কিছু একটা ঘটেছে”, বলেন জান্নাতুল।
ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গোড়ালি রক্তাক্ত হয় সেদিন। আরও বেশি ক্ষতি হয়নি, সেটিতেই সান্ত্বনা নিচ্ছেন তিনি।
“কপাল খুব ভালো, পায়ের রগটা কাটে নাই।”
কী ঘটেছিল
সেই সন্ধ্যায় ইফতারের পরপর বন্ধু আবদুল্লাহ কাফির মোটরসাইকেল চেপে আসাদ গেট থেকে মোহাম্মদপুর যাচ্ছিলেন জান্নাতুল। রাস্তায় গাড়ির চাপ ছিল না বললেই চলে।
মোটরসাইকেলটি মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের আল্লাহ করিম মসজিদের কাছাকাছি সড়ক বিভাজকে ১৬ থেকে ১৭ বছর বয়সী এক তরুণকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন তিনি।
“তার হাতে লম্বা কিছু একটা ছিল। কী ছিল তা প্রথমে বুঝতে পারিনি। মোটরসাইকেলটি তাকে পার করতে হঠাৎ আমার পায়ে কোপ বসাল।”
রক্তাক্ত হয়ে বন্ধুকে মোটরসাইকেলটি থামাতে বলেন জান্নাতুল। কিছুদূর এগিয়ে সেটি থামল। বাইক থেকে নেমে পায়ের অবস্থা দেখে তার কান্নাকাটি অবস্থা।
“কপাল খুব ভালো, পায়ের রগটা কাটে নাই। কোপটা বাইকে লাগার পর আমার পায়ে লেগেছে, কোপটা যদি সরাসরি পায়ে লাগত তাহলে আমার রগ কেটে যেত” বলছিলেন তিনি।
বন্ধু আবদুল্লাহ কাফি দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন, ‘’বাইক থামিয়ে দেখি তার পা থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। বুঝলাম তাকে কেউ ধারালো কিছু দিয়ে কোপ দিয়েছে।”
সে সময় সড়ক বিভাজকে থাকা সেই তরুণের দিকে তাকান কাফি।
“দেখলাম সেই লোকটা খুব সাধারণ গতিতে রাস্তা পার হয়ে হেঁটে যাচ্ছে এবং তখন তার হাতে ধারালো লম্বা একটা ছুরি ছিল। সে রাস্তা পার হয়ে চলে গেল।”
বন্ধু রক্তাক্ত অবস্থায় কাতরাচ্ছে, এমন সময়ও তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া কাফির কিছুই করার ছিল না।
অভিযোগ করে কী হবে, তাই যাননি থানায়
গত কয়েক মাস ধরে ঢাকায় নারীদের চলাচলে হুমকি ও হামলার নানা ঘটনা জানেন জান্নাতুল। আইনের আশ্রয় চাওয়ার সুযোগ সীমিত বলেই ভাবছেন তিনি। তাই এই ঘটনায় থানায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করতে চাননি তিনি।
“সত্যি বলতে আমরা কাউকে শনাক্ত করতে পারিনি। ঘটনার ওপর নির্ভর করে মামলা করাই যায় কিন্তু অহরহ একই ধরনের ঘটনা ঘটছে, তাই বিষয়টাকে তেমন একটা গুরুত্ব দেইনি।”
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh