Logo
×

Follow Us

তথ্যকোষ

দেশে দেশে স্বৈরশাসকের পতন

Icon

তৌসিফ আহমেদ

প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৪, ১৭:০৭

দেশে দেশে স্বৈরশাসকের পতন

কলম্বোয় প্রেসিডেন্টশিয়াল সেক্রেটারিয়েট প্রাঙ্গণে সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীদের জমায়েত। ছবি: রয়টার্স

নানা কারণে পৃথিবীর দেশে দেশে স্বৈরশাসকদের আবির্ভাব ঘটে। এসব স্বৈরশাসকের উত্থান হয় মূলত সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে; তবে কেউ কেউ বিপুল জনপ্রিয়তা নিয়েও ক্ষমতায় আসীন হয়। মানুষ অনেক আশা নিয়ে তাদের ভোট দেয়। কিন্তু ক্রমেই একসময় স্বৈরশাসক হয়ে উঠতে থাকেন তারা। ক্ষমতার দাপটে ক্রমেই উন্মত্ত হয়ে ওঠেন। এরপর জনগণের ওপর চালাতে থাকেন নানা ধরনের নির্যাতন। স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি তখন তাদের প্রধান কাজ হয়ে ওঠে। যে জনগণ তাদের ভোট দিয়েছেন, তাদের সামান্য সমালোচনাও আর সহ্য করতে পারেন না এই স্বৈরশাসকরা। নতুন নতুন গণতন্ত্রবিরোধী আইন জারি করে জনগণের ওপর চালান নির্যাতনের স্টিমরোলার।

প্রথম দিকে জনগণ নীরব থাকলেও আস্তে আস্তে তারা প্রতিবাদী হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত ঘটে গণজোয়ার। সে জোয়ারে খড়কুটোর মতো ভেসে যায় স্বৈরশাসকেরা, ঘটে বিপ্লব, গণ-আন্দোলন। যুগে যুগে এমন নির্মম ঘটনার নীরব সাক্ষী হয়ে থাকে ইতিহাস। একজন স্বৈরশাসকের পতন ঘটাতে কোন কৌশল সবচেয়ে বেশি কার্যকরী? সহিংস প্রতিবাদ নাকি অহিংস আন্দোলন? আর ক্ষমতা থেকে কোনো রাজনীতিককে সরাতে এ রকম বিক্ষোভ কত বড় হতে হবে? 

হার্ভার্ডের এক গবেষক এরিকা চেনোওয়েথ এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গবেষণা চালিয়েছেন বিগত কয়েক দশকে বিশ্বের দেশে দেশে যেসব গণ-আন্দোলন-গণবিক্ষোভ হয়েছে সেগুলোর ওপর। এই গবেষণার ভিত্তিতে তিনি বলছেন, কোনো জনগোষ্ঠীর মাত্র ৩ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ যদি গণবিক্ষোভে যোগ দেন, তাতেই তারা সফল হতে পারেন।

বিগত কয়েক দশকে বিশ্বে স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার পতন ঘটানোর সফল আন্দোলনের অনেক নজির আছে। ১৯৮০-এর দশকে কমিউনিস্ট শাসনামলের পোল্যান্ডে হয়েছিল সলিডারিটি আন্দোলন। এর নেতৃত্বে ছিল শ্রমিকদের ইউনিয়নগুলো। দক্ষিণ আফ্রিকায় দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে চলেছে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলন। চিলির স্বৈরশাসক অগাস্তো পিনোশের পতন ঘটেছিল গণ-আন্দোলনের মুখে। সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোসেভিচকে ক্ষমতা থেকে সরানো হয় সফল আন্দোলনের মাধ্যমে। একেবারে অতি সাম্প্রতিককালের উদাহরণও আছে। তথাকথিত আরব বসন্তের সূচনা হয়েছিল তিউনিসিয়ায় স্বৈরশাসক জিনে আল-আবেদিন বেন আলিকে ক্ষমতা থেকে সরানোর মাধ্যমে। সেখানে এই গণ-অভ্যুত্থানের নাম দেওয়া হয়েছিল ‘জাসমিন বিপ্লব।’ এ রকম আরেকটি সফল বিপ্লবের উদাহরণ হচ্ছে সুদান। সেখানে আন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে ওমর আল-বশিরকে। একইভাবে আলজেরিয়ায় ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছে আবদেল আজিজ বুতেফ্লিকাকে। 

আরেক স্বৈরশাসক শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসে। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে শ্রীলঙ্কায় গণতান্ত্রিক শাসন চলছে, কখনো সামরিক অভ্যুত্থান ঘটেনি। এর মধ্যে উত্থানপতন ছিল, সরকার পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু সেখানকার রাজাপাকসের পরিবার প্রায় সব সময়ই ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল। কিন্তু করোনা মহামারির সময় থেকে শ্রীলঙ্কার প্রধান আয়ের উৎস পর্যটন শিল্পে ধস নামে। কোনো পথেই রাজাপাকসেরা তার সমাধান বের করতে পারেননি। বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কট, খাদ্য সঙ্কট, জ্বালানি সঙ্কটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল শ্রীলঙ্কার সাধারণ মানুষ। তারা একযোগে রাস্তায় নেমে আসে। দখল করে নেয় প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন।

আমাদের স্মরণকালের মধ্যেই ঘটেছে এসব সফল গণ-আন্দোলন। আর এই আন্দোলনের পথ ধরে এসব দেশে বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন ঘটেছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫