Logo
×

Follow Us

অন্যান্য

এক লাফেই পার হওয়া যায় যে নদী

Icon

এহতেশাম শোভন

প্রকাশ: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৪৬

এক লাফেই পার হওয়া যায় যে নদী

হুয়োলাই নদী। ফাইল ছবি

এক লাফেই নদী পার হওয়া কি সম্ভব? সম্ভব। এর জন্য আপনাকে কোনো সুপার হিরো হতেও হবে না। অবাক হলেও সত্য, বিশ্বে এমন এক নদী আছে, যা কি না এক লাফেই পার হওয়া যায়। অদ্ভুত এই নদীটি চীনের উত্তরের ইনার মঙ্গোলিয়ার গিয়ার তৃণভূমিতে অবস্থিত। হুয়োলাই নামের এই নদীটি চীনের সবচেয়ে সরু নদী হিসেবে পরিচিত। মাত্র ১৫ সেন্টিমিটার গড় প্রস্থের এই নদীটির সবচেয়ে সরু পয়েন্টটি মাত্র চার সেন্টিমিটার চওড়া। তবে লম্বায় গুনে গুনে ১৭ কিলোমিটার।

‘হোলাই’ একটি মঙ্গোলীয় শব্দ, চীনা ভাষায় যার অর্থ ‘গলার চোখ’। হোলাই শব্দটি থেকেই হুয়োলাই নামটির উৎপত্তি। এই নদীটি ডোলেনর হ্রদ থেকে উদ্ভূত। এই নদীর জলপ্রবাহ সারা বছরই স্থিতিশীল থাকে। পুরোপুরি প্রাকৃতিক এই নদীটি কখনোই কৃত্রিমভাবে খনন করা হয়নি। নদীটি তার সংকীর্ণ খালের কারণে অনেক চীনা এবং বিদেশি পর্যটককেও আকর্ষণ করে। গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস সংকীর্ণ এই নদীটিকে ‘বিশ্বের সবচেয়ে সরু নদী’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।

হুয়োলাই নামকরণের পেছনে একটি লোককথা জড়িত আছে। সেটি হলো একটি ছেলে নদী পার হওয়ার চেষ্টা করার সময় ছিটকে পড়ে। এ সময় হুয়োলাইয়ের সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশগুলোর একটিতে তার বইটি পড়ে যায়। পড়ে যাওয়া বইটিকে পিঁপড়েদের একটি দল নদীর এপার থেকে ওপারে যাতায়াত করতে সেতু হিসেবে ব্যবহার করে। তারপর থেকেই নদীটির নাম বুক ব্রিজ রিভার হিসেবে প্রচলিত হয়ে আসছে।

যদিও কেউ কেউ এটিকে একটি ছোট খাদ বলে অভিহিত করে। তবে এটি প্রকৃতপক্ষে একটি প্রাকৃতিকভাবে গঠিত নদী। হুয়োলাই নদীটি দেখতে অনেকটা সাপের মতো, যা এঁকেবেঁকে প্রবাহিত হয়। ভূগোল বিশেষজ্ঞরা এই নদীটিকে ‘¯েœক সং’ বলে থাকেন। 

তবে দুঃখের বিষয় যে, ক্রমাগত খরার কারণে এই নদীটি অদূর ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ডোলেনর হ্রদের এলাকা ক্রমাগত হ্রাসের ফলে এর উৎস এলাকায় জলপ্রবাহও হ্রাস পাচ্ছে। যার ফলস্বরূপ নদী দ্বারা ব্যবহৃত জল স্বাভাবিকভাবেই শুষ্ক অবস্থায় পড়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, এটি আগামী কয়েক বছরের মধ্যে চিরতরে অদৃশ্য হয়ে যাবে।

নদীটি অদৃশ্য হয়ে গেলে এর চারপাশের তৃণভূমির পরিবেশও প্রভাবিত হবে। কারণ তৃণভূমিতে পর্যটনের বিকাশ নদীর ওপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলে। অতএব, স্থানীয় পর্যটনের বিকাশ বন্ধ করা অপরিহার্য এবং একই সঙ্গে এই পরিস্থিতি পুনরুদ্ধারের জন্য কিছু কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।

কিন্তু একটা নালার আকৃতির এই জলপ্রবাহকে কেন নদীর তকমা দেওয়া হলো? আসলে, নদী হতে যেসব শর্ত মানতে হয়, সেগুলো মেনেই নদীর মর্যাদা পেয়েছে হুয়োলাই। এক লাফে পার হওয়া যায় বলে এটাকে খাটো করে দেখার জো নেই। কারণ চীনা বিশেষজ্ঞদের মতে, ১০ হাজার বছর ধরে হুয়োলাইতে পানির প্রবাহ একই রকম আছে। মাটির তলায় থাকা একটি স্রোত থেকেই এ নদীর উৎপত্তি। এর পর থেকে কখনই এর প্রবাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়নি, নদী শুকিয়েও যায়নি। নদীর পানি এঁকেবেঁকে গিয়ে পড়েছে হেক্সিগট্যান গ্রাসল্যান্ড ন্যাচার রিজার্ভের দালাই নুর লেকে। সারা বছরই হুয়োলাইতে স্রোত থাকে। গভীরতা গড়পড়তায় ৫০ সেন্টিমিটার হলেও এর পানি একদম স্বচ্ছ, যা দিয়ে আশপাশে সেচের কাজ তো হয়ই, বুনো প্রাণীরাও আসে এর স্রোত থেকে পান করতে।

পৃথিবী বিস্ময়ে পরিপূর্ণ এবং কেউ কল্পনাও করেনি যে পৃথিবীতে এমন নদী থাকবে যেগুলোকে একটি বই দিয়ে সেতু করা যেতে পারে। কেবল বলা যেতে পারে যে এটি প্রকৃতির জাদুকরী উদাহরণ।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫