
ফাইল ছবি
সঞ্চয়পত্র নিয়ে অনেকেরই আগ্রহ রয়েছে কারণ ব্যাংকের যে কোন ফিক্সড ডিপোজিটের মুনাফার বাৎসরিক হারের চেয়ে এর মুনাফা অনেক বেশি। সরকারি বা বেসরকারি ব্যাংকগুলো বর্তমানে ফিক্সড ডিপোজিটে যেখানে ৫-৭% দিচ্ছে সেখানে আপনি ৩ মাস অন্তর সঞ্চয়পত্র বা পরিবার সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে ১১% এর বেশি মুনাফা পাবেন। তাছাড়া সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ খুব বেশি নিরাপদ, বাংলাদেশ সরকার জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরোর মাধ্যমে জনসাধারণের নিকট হতে ছোট ছোট সঞ্চয়গুলো জমা করে সরকারি কাজে বিনিয়োগ করে থাকে।
সঞ্চয়পত্র কি?
সঞ্চয়পত্র একটি সঞ্চয় স্কিম যা জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরোর মাধ্যমে সরকার জনসাধারণের নিকট হতে গ্রহণ করে থাকে। জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরোর অফিস প্রতিটি জেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশ সরকার তফসিলি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র বিক্রি করছে। এক্ষেত্রে ব্যাংক শুধু বিক্রেতা, জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরোর মাধ্যমেই আপনার সঞ্চয় সঞ্চিত থাকে। সোনালী, অগ্রণী, রুপালী ব্যাংক ছাড়াও বেসরকারি ব্যাংকগুলোতেও সঞ্চয়পত্র পাওয়া যায়।
মুনাফা কি পোস্ট অফিসে গিয়ে তুলতে হবে?
না। ব্যাংকে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করলে আপনাকে আর পোস্ট অফিসে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে ইন্টারেস্ট বা মুনাফা তুলতে হবে না। বয়স্ক মানুষদের লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা না তুলতে ব্যাংক হতে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে উৎসাহিত করা প্রয়োজন। যদি ব্যাংক হতে সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা হয় তবে প্রতি মাসে মুনাফার অর্থ ব্যাংক হিসাবে চলে আসবে। গ্রাহক যে কোন ব্যাংকের শাখা অথবা ডেবিট কার্ডের মাধ্যমে এ মুনাফা তুলতে পারবেন।
সঞ্চয়পত্রের ডকুমেন্টসমূহ
১। সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের আবেদন ফরম
সঞ্চয়পত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে আপনার আবেদনপত্রটি ব্যাংক বা সঞ্চয় ব্যুরোর অফিস হতে সংগ্রহ করুন। আপনি চাইলে অনলাইন হতেও প্রিন্ট করে ব্যবহার করতে পারেন। বর্তমানে সঞ্চয়পত্র ক্রয় সহজীকরণে এক পাতার ফরম প্রকাশ করেছে। এখানে ক্রেতা ও নমিনির তথ্য প্রদান করতে হবে। ফরম ক্রেতা বা নমিনির ক্ষেত্রে ২টি অংশ থাকবে, চাইলে দুজন ক্রেতা মিলে বা দুটি নমিনি ব্যবহার করা যাবে। তবে একজন ক্রেতা এবং ১ জন নমিনির ক্ষেত্রে ১ নং ক্রেতা এবং ১নং নমিনি অংশ পূরণ করতে হবে। ২নং ক্রেতা এবং ২নং নমিনির অংশ ফাঁকা থাকবে।
২। গ্রাহকের NID+ছবি দুই কপি
গ্রাহক বা যিনি ক্রেতা তার দুটি ছবি যুক্ত করতে হবে। ফরমের উপরে দুটি ছবি স্ট্যাপলার দিয়ে যুক্ত করতে হবে। মনে রাখবেন ছবিতে অবশ্যই নাম লিখে দিতে হবে। ছবি পাসপোর্ট সাইজের দিতে হবে। এক পাতার ফরম হওয়ায় পাসপোর্ট সাইজের ছবি বড় হয়ে যায়; দেখতে অনেকটা বেমানান লাগে তবুও পাসপোর্ট সাইজেরই ছবি সংযুক্ত করতে হবে।
৩। নমিনির NID+ছবি এক কপি
নমিনি মানে হচ্ছে গ্রাহকের মৃত্যুর পর তার সঞ্চয়কৃত অর্থের মালিক কে হবে তার তথ্য। নমিনির তথ্য পূরণ করবেন এবং তার স্বাক্ষর গ্রহণ করে নিবেন। যদি নমিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক হয় তবে তার জন্য অন্য একজন প্রতিনিধির তথ্য দিবেন জাতীয় পরিচয়পত্র অনুসারে। ছবি এখানেও পাসপোর্ট সাইজের দিতে হবে। ফরমের ডানপাশে মাঝ বরাবর স্ট্যাপলার করে দিতে হবে। তবে ফরমের সাইজ ছোট হওয়ায় ছবিটি যথাস্থানে রাখা সম্ভব হয় না।
৪। গ্রাহকের TIN সার্টিফিকেট
বর্তমানে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে টিআইএন সার্টিফিকেট লাগবে না। অর্থাৎ একলাখ +একলাখ= দুই লাখ বা একসাথে সর্বোচ্চ বা সর্বমোট আপনি দুই লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে আপনাকে কোন টিআইএন বা ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বারসহ সার্টিফিকেট দাখিল করতে হবে না। টিআইএন থাকলে প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। তাই আপনার মোট সঞ্চয়পত্রের পরিমাণ ২ লাখ টাকার অধিক হলেই আপনি টিআইএন সংগ্রহ করে নিন। যে কোন কম্পিউটার নিয়ে বসে থাকা দোকান হতেই আপনি টিআইএন তৈরি করে নিতে পারেন।
৫। নমিনি নাবালক হলে একজন প্রত্যয়নকারীর NID+ছবি এক কপি
নমিনি যদি নাবালক বা অপ্রাপ্তবয়স্ক হয় তবে অন্য কোন ব্যক্তি তার চাচা, দাদা, খালু, খালা ইত্যাদি যে কোন ব্যক্তি এনআইডি ও তার তথ্য ও স্বাক্ষর গ্রহণ করতে হবে। অন্যথায় এটি এড়িয়ে যান।
৬। হিসাবের চেক বই
আপনার যে ব্যাংক হিসাব রয়েছে সেই একাউন্টের চেক বইয়ের উপরের পৃষ্ঠার ফটোকপি নিতে হবে। একলাখ টাকার বেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আপনার একাউন্টে টাকা জমা সাপেক্ষে চেক লিখে সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে উপস্থিত হতে হবে। মোট কথা টাকার অংক লেখা ও স্বাক্ষরসহ আপনি একটি চেক ফরমের সাথে জমা দিবেন। এক্ষেত্রে যার নামে চেক ইস্যু হবে তার নাম বা ঐ ঘর ফাঁকা থাকবে।
৭। পেনশনার হলে মঞ্জুরীপত্র/আনুতোষিক কপি/পিপিও/পিএসসি-২ ফরম/ইপিপিও কপি
পেনশনার সঞ্চয়পত্র ক্রয়ে আপনি মুনাফা আরো বেশি পাবেন। তাছাড়া পেনশনার সঞ্চয়পত্রে কোন প্রকার আয়কর কর্তন করা হয় না। সেক্ষেত্রে পেনশনার বা তার পরিবার সে অর্থ দিয়ে যদি পেনশনার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করে থাকে তবে তার জন্য উপযুক্ত প্রমাণ দাখিল সাপেক্ষে পেনশনার সঞ্চয়পত্র ক্রয় করতে পারবে।
বি:দ্র: সোনালি ব্যাংকের ক্ষেত্রে এ ব্যাংকে হিসাব থাকতে হবে। TIN সার্টিফিকেট ব্যতীত ২,০০,০০০ (দুই লক্ষ) টাকার একটি সঞ্চয়পত্র ক্রয় করা যাবে। সঞ্চয়পত্রের মুনাফার টাকা গ্রাহকের হিসাবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে জমা হবে।