‘গল্প শক্তিশালী হলে সেই সিনেমাও শক্তিশালী হবে’

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:০৬

সুদীপ্ত সাইদ খান পেশায় একজন সাংবাদিক। কিন্তু এ বছর বড় পর্দায় প্রথম গল্প লিখে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ছবির নাম ‘জান্নাত’। বাংলা চলচ্চিত্র এবং তার ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেছেন মাহমুদ সালেহীনের সঙ্গে।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। আপনার অনুভূতি কী?
আমি কখনোই ভাবিনি জীবনের প্রথম লেখা সিনেমার গল্পেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবো। এই পুরস্কার প্রাপ্তি অবশ্যই আনন্দের। এই আনন্দ আসলে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।
প্রথম ছবির গল্প লিখে জাতীয় পুরস্কার পেলেন। এই ছবি সংশ্লিষ্ট সবার কথা শুনতে চাই।
‘জান্নাত’ সিনেমার পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক ভাইকে আমি ধন্যবাদ জানাবো আমাকে সুযোগ দেয়ার জন্য। প্রযোজক সেলিম ভাই ঝুঁকি নিয়ে সিনেমায় লগ্নি করেছেন তার কাছেও আমার কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।
এই সিনেমার চিত্রনাট্য করেছেন আসাদ জামান, নায়ক সাইমন সাদিক, নায়িকা মাহিয়া মাহি, আলিরাজ ভাইসহ সব কলাকুশলী অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সিনেমার গল্পটিকে ফুটিয়ে তুলেছেন। মূলত একটি গল্পকে কলাকুশলীরাই জীবন্ত করে তোলেন। ফলে সিনেমাটির সঙ্গে যুক্ত সবার ব্যাপারে একটা কথা বলবো, তারা একটি গল্পকে নিজেদের ভেতর ধারণ করে তার স্বার্থক বাস্তবায়ন ঘটিয়েছেন।
চলচ্চিত্র নিয়ে আপনার সামনের পারিকল্পনা কী?
জীবনের নানা পর্যায়ে গিয়ে নানা ধরনের পরিকল্পনা মাথায় ভর করে। পুরস্কার পাওয়ার আগেও ভেবেছিলাম, ঢাকা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাব। কোনো একটা ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করবো। আর পাশাপাশি নিভৃতে নিজের লেখালেখিটা চালিয়ে যাবো।
কিন্তু পুরস্কার পাওয়ার ফলে সেই পরিকল্পনাটা বাদ দিতে হলো। যেহেতু পুরস্কার পেয়েছি ফলে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে আরো কিছু দেয়ার প্রবণতা নিজের ভেতর কাজ করছে। তাই এই মুহূর্তের পরিকল্পনার প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে সিনেমাই। এখন সিনেমাকে ঘিরেই আমার সব পরিকল্পনা আবর্তিত হচ্ছে।
প্রায়ই দর্শক অভিযোগ করেন দেশের চলচ্চিত্রে ভালো গল্পের খুব সংকট। এ সম্পর্কে আপনার অভিমত কী?
দর্শকের অভিযোগ সম্পর্কে আমি শতভাগ একমত। বাংলাদেশের সিনেমায় ভালো গল্পের খুবই সংকট। তবে এটা গল্পকারের অভাবে নয়, চলচ্চিত্র পরিচালক-প্রযোজকদের সদিচ্ছার অভাবেই সিনেমায় ভালো গল্পের সংকট তৈরি হচ্ছে। আমাদের দেশে প্রচুর মেধাবী গল্পকার আছেন কিন্তু তাদের প্রযোজক-পরিচালকরা সঠিকভাবে মূল্যায়ন করছেন না, যে কারণে ভালো গল্পকাররা সিনেমার গল্প লিখতে আসছেন না। ফলে ভালো গল্পের অভাব দেখা যাচ্ছে।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাই, আমাদের বেশিরভাগ প্রযোজক-পরিচালকই নকল ও রিমেক গল্পের পেছনে ছুটছেন। এটা সবচেয়ে বড় সীমাবদ্ধতা ও সংকট। হাতেগোনা দু’চারজন প্রযোজক-পরিচালক মৌলিক গল্প নিয়ে কাজ করেন। এটা এতটাই নগণ্য যে, উল্লেখ করার মতো নয়।
দিনের পর দিন ধরে গল্পকারদের মূল্যায়ন না করা, আর্থিকভাবে তাদের বঞ্চিত করার ফলে ভালো গল্পকাররা প্রযোজক-পরিচালকদের দ্বারস্থ হতে চান না। আমি নিজেও তেমন প্রযোজক-পরিচালকদের দ্বারস্থ হই না। কেউ যদি ডাকেন তো কাজ করি। এ যাবৎ যাদের সঙ্গে কাজ করেছি, তারা সবাই বন্ধু-বান্ধব। মূলত আত্মসম্মানবোধের জায়গা থেকেই সব ধরনের প্রযোজক-পরিচালকের দ্বারস্থ হই না।
এই সংকট উত্তরণের উপায় কী?
আমি আগেই বলেছি, প্রযোজক ও পরিচালকদের সদিচ্ছার অভাবেই ভালো গল্পকার ও চিত্রনাট্যকারের সংকট দেখা দিয়েছে। তবে আশার খবর যে, এখন অনেকেই উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, ব্যতিক্রমী গল্প ও নতুন চিন্তা নিয়ে সিনেমায় হাজির হতে হবে। এ বছরের জানুয়ারিতে বেশ কয়েকটি প্রজেক্ট নিয়ে মিটিং করেছি, সবাই জান্নাতের মতো ভিন্ন গল্প নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
তথাকথিত রিমেক বা বাণিজ্যিক সিনেমার বাইরে গিয়ে সিনেমা বানাতে চাইছেন। আশা করি সিনেমা শিল্পের জন্য এটা সুখবর। সেই সঙ্গে প্রযোজক ও পরিচালকদের অনুরোধ করব, নতুন গল্পকারদের প্রফেশনালি গড়ে তোলার জন্য, তাদের নিয়ে কাজ করার পাশাপাশি তাদের দক্ষতা উন্নয়নেও সাহায্য করেন।
আর সিনেমায় যে সংকটগুলো আছে সেগুলো থেকে উত্তরণ লাভ করতে অনেক বিষয়ের ওপর নজর দিতে হবে। সমন্বিত সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। প্রথমে যেটা করতে হবে সেটা হচ্ছে প্রযোজক পরিচালকদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। পুরনো চিন্তা-চেতনা থেকে বেরিয়ে সময়োপযোগী চিন্তা করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, মৌলিক গল্পের দিকে জোর দিতে হবে। গল্প যদি শক্তিশালী হয় তাহলে সেই সিনেমাও শক্তিশালী হবে।
তৃতীয়ত, সবচেয়ে বড় যে সমস্যা সেটা হলো হলের পরিবেশ। মানসম্মত সিনেমা হল নির্মাণ করতে হবে। পুরনো সিনেমা হলগুলো বন্ধ হয়ে গেলে অনেকেই দুশ্চিন্তা করেন, কিন্তু আমি পুরনো হলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়াকে ইতিবাচকভাবে দেখছি। কারণ জরাজীর্ণতা মুছে গেলেই নতুন কিছুর জন্ম হয়। পুরনো হলগুলোর পরিবেশ ভালো না, যুগের পর যুগ ধরে সেগুলোর সংস্কারও করা হয় না।
সেসব গোয়ালঘরের মতো সিনেমা হল থাকার চেয়ে না থাকায় ভালো। এই সিনেমা হলগুলো ভেঙে দিয়ে নতুন মাল্টিপ্লেক্স নির্মাণ করতে হবে। ই-টিকেটিং সিস্টেম চালু করতে হবে। নতুন সিনেপ্লেক্স নির্মিত হলেই কেবল বাংলাদেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির সংকটগুলোর প্রকৃত উত্তরণ সম্ভব, পুরনো সিস্টেমে সিনেমার কোনো উন্নয়নই সম্ভব নয়।