জুলাই অভ্যুত্থানের ১ বছর: কী ভাবছেন তারকারা

তারেক মোহাম্মদ ও এন আই বুলবুল
প্রকাশ: ১০ আগস্ট ২০২৫, ১২:৫৩

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, ৩৬ জুলাই। নতুন বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। এর এক বছর পূর্ণ হলো। জুলাইয়ে গণ-অভ্যুত্থানে দেশের শাসন ক্ষমতার পালাবদলে ছাত্র-জনতার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশগ্রহণ করেন শোবিজের পরিচিত কিছু মুখ। তাদের কয়েকজন বছর শেষে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি নিয়ে নিজস্ব ভাবনা তুলে ধরেছেন। সে সব নিয়ে সাম্প্রতিক দেশকালের পাঠকদের জন্য বিশেষ আয়োজন। লিখেছেন তারেক মোহাম্মদ ও এন আই বুলবুল...
সামাজিকমাধ্যমে ৫ আগস্ট স্বৈরাচার পতনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর সব স্বৈরাচার একসময় ভাবে তাদের ক্ষমতা চিরস্থায়ী। এরপর এরা হয়ে যায় এক একজন দানব। তারা ভুলেই যায় ওপরে একজন আছেন, তাঁর হিসাব অন্যরকম। আজকের এই বিশেষ দিনে স্মরণ করছি সেই সকল শহীদকে, যারা নিজেদের জীবন দিয়ে আমাদের দাম্ভিক, স্বৈরাচার, খুনির কবল থেকে মুক্ত করেছেন। আল্লাহ যেন তাঁদের জীবনদান সফল করেন। গণতন্ত্রে দ্রুত উত্তরণ হোক বাংলাদেশের। সবাইকে স্বৈরাচার পতনের প্রথম বর্ষপূর্তিতে শুভেচ্ছা।’
আজমেরী হক বাঁধন (অভিনেত্রী)
‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান সে সময়ে জরুরি ছিল। যার মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতন নিশ্চিত হয়। গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহত সকলের প্রতি সহমর্মিতা জানাই। আমি মানবিক ও ন্যায়বিচারের বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছি। স্বপ্ন খুব একটা পূরণ হয়নি। মাজার, ভাস্কর্য ভাঙা হচ্ছে, মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে, মব কালচার তৈরি হয়েছে, শিল্পীদের নামেও হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হচ্ছে। মিডিয়ায় একটি সিন্ডিকেট গিয়ে অন্য একটি সিন্ডিকেট এসেছে। বিনিয়োগ কমে গেছে। যার ফলে শিল্পীদের কাজ কমেছে। আমারও কিছু প্রজেক্ট স্থগিত হয়ে গেছে। আমাদের সামনে সাম্য, ন্যায়বিচার, মানবিক বাংলাদেশ গড়ার সুযোগ ছিল। সেটি কাজে লাগাতে পারিনি। হয়তো রাজনৈতিক সরকার এলে পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। আমি রাজনীতি করি না। স্বপ্ন দেখে যেতে চাই।’
আশফাক নিপুন (নির্মাতা)
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টে নির্মাতা আশফাক নিপুন তার আন্দোলনে যোগ দেওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘বহু বছর ধরেই আমার আন্দোলন চলছে, ১৫ বছর ধরেই চলছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের আগেও বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন করেছি। সাংবাদিক কাজল গুম, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বাতিল, কিশোর মুশতাকের ওপর অত্যাচার থেকে খাদিজাকে গ্রেপ্তার-সব ক্ষেত্রেই আমি রাস্তায় সরব ছিলাম। এমন না যে জুলাইয়ে হঠাৎ করে তাগিদ অনুভব করলাম। তাড়নাটা আগে থেকেই ছিল। বিশ্বের অনেক বড় বড় শিল্পী আছেন, যারা এক জীবনে রাষ্ট্র, সমাজ, রাজনীতি নিয়ে এত বড় গণ-অভ্যুত্থানের অংশ হতে পারেননি। সেখানে বাংলাদেশের মতো একটা জায়গায় একজন ক্ষুদ্র শিল্পী হিসেবে এত বড় মুভমেন্টের (আন্দোলন) সঙ্গে থাকতে পারলাম, এটা আমার জন্য বিরাট পাওয়া। আন্দোলনের কনসিকুয়েন্স (পরিণতি) ভালো-খারাপ যাই হোক, ওই সময় জুলাই অভ্যুত্থানটা সঠিক ছিল। নিজের সক্ষমতা দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছি, এই অভিজ্ঞতা আমার থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।’
কাজী নওশাবা আহমেদ (অভিনেত্রী)
“আন্দোলনের সময় এত কিছু ভাবিনি। দেশের মানুষের মৌলিক অধিকার ও বাকস্বাধীনতার কথা ভেবেছি। আমার প্রত্যাশা প্রথমে নিজের কাছে। তারপর চারপাশের মানুষের কাছে। আমরা ব্যক্তিগত এজেন্ডা নয়, দেশের মানুষের কথা নিয়ে যেন ভাবি। ভবিষ্যতে যারা আসবেন, তারা যেন ফ্যাসিস্ট না হয়ে ওঠেন। যারা গত বছর জুলাইয়ে শহীদ হয়েছেন তাদের কথা মনে রাখতে হবে। এ সময়ে এসে আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখতে পারছি। পরে হলেও অন্যায়ের কথা বলতে পারছি। আইনের শাসন জোরদার করার বিষয়ে জোর দিতে হবে যদিও। মব ভায়োলেন্স হচ্ছে। মানুষজন আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে। এটি থামাতে হবে। আমরা মানসিক নিরাপত্তা চাই। বোধের উদয় হওয়া দরকার। আমরা জাতিগতভাবে অবসাদের ভেতর দিয়ে যাচ্ছি। কারণ সহজে বিচার হচ্ছে না। শিল্পীদের স্বাধীনতা চাই। স্বাধীনতা মানে কিন্তু স্বেচ্ছাচারিতা নয়। পরিমিতিবোধের ভীষণ প্রয়োজন। আমি প্রায় ১১ মাস অপেক্ষার পর ৮ আগস্ট, জুলাই যোদ্ধাদের নিয়ে শিল্পকলায় মঞ্চস্থ করতে যাচ্ছি ‘আগুনি’। কাজটি এত কঠিন হবে ভাবিনি। তবুও আমি হাল ছাড়িনি।”
ফারিহা শামস সেওতি (অভিনেত্রী)
রাজনীতি নিয়ে আমার আগ্রহ নেই। কোটা আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের যখন মারা শুরু হলো তখন মনে হলো কিছু একটা করা দরকার। সে জায়গা থেকে এক রাতের মধ্যে গঠিত হলো ‘দৃশ্য মাধ্যম’। আমরা কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়, নতুন বাংলাদেশ গঠনের জন্য একত্রিত হয়েছিলাম; যাতে করে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারি। এখন স্বাধীনভাবে বলতে পারছি। লিখতে পারছি। ছোটখাটো আন্দোলন বা প্রতিবাদ হলেও কেউ গুম হচ্ছে না। ভয়ডরহীন কথা বলতে পারছি। ছোট ছোট পরিবর্তন থেকে বড় পরিবর্তন আসবে। এক বছরের প্রাপ্তির কথা বললে জানতে হবে গেল ৫০ বছরে মুক্তিযোদ্ধারা কী পেয়েছেন? তাদের সময়ের ভয়াবহতা ছিল অনেক বেশি। দেশের মানুষকে এক থাকতে হবে। নিজেরা শোধরাতে পারলে দেশ অর্ধেক শুধরে যাবে। মুক্তিযুদ্ধ বাদ দিয়ে বাংলাদেশ ভাবা সম্ভব নয়। সবাই এক থাকলে যেকোনো পরিবর্তন সম্ভব।