
বাংলা সিনেমার একটি ক্রান্তিলগ্ন আমরা পার করছি। করোনার কারণে গত বছর তেমন কোনো ছবি মুক্তি পায়নি। গত কয়েক বছর ধরেই সিনেমা হল থেকে দর্শকরা একরকম মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। সিনেমা হলের মধ্যে ভালো পরিবেশ নেই, ভালো গল্পের সিনেমা নেই এ রকম নানা অভিযোগ করে আসছিল দর্শক। সিনেমার মন্দাবস্থার কারণে একের পর এক সিনেমা হলগুলো বন্ধ করে দিচ্ছেন হল মালিকরা।
ঠিক এমন একটি সময়ে ৩০০ সংসদীয় আসনে সরকারি সহযোগিতায় সিনেপ্লেক্স নির্মাণ নিয়ে কথা বলছেন সিনেমাপ্রেমী একজন মানুষ। একাধারে চলচ্চিত্রের অভিনেতা, প্রযোজক, নির্মাতা হাবিবুল ইসলাম হাবিব। দীর্ঘ দিন ধরেই তিনি ৩০০ সংসদীয় আসনে সিনেপ্লেক্স করার দাবি জানাচ্ছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে। তার এই দাবিটির প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে সমর্থন করেছেন।
যেখানে চলচ্চিত্রের সংখ্যা কমে গেছে, অনেক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, সেখানে আপনি এই ধরনের আন্দোলন করে কতটুকু সফলতার মুখ দেখবেন? এ প্রশ্নের জবাবে হাবিবুল ইসলাম হাবিব অকপটে জানান, বাংলা চলচ্চিত্রে সুদিন ফিরিয়ে আনতেই আমার এই উদ্যোগ। প্রথমে আমি একাই এই কাজ শুরু করেছিলাম। বিভিন্ন গণমাধ্যমে কথা বলার মাধ্যমে এখন আমার পাশে আরও সিনেমাপ্রেমী যুক্ত হচ্ছেন। যারা সুন্দর একটি পরিবেশে হলে গিয়ে সিনেমা দেখতে চান।
তিনি আরও বলেন, রাজধানী ঢাকাসহ যে দু-একটি সিনেপ্লেক্স আছে সেগুলোতে কিন্তু ছবি মুক্তি পেলে দর্শকরা দেখতে যাচ্ছে। দর্শক কিন্তুআর আগের মতো টর্চ লাইট জ্বালিয়ে নিম্নমানের পর্দায়, গরমের মধ্যে, ছাড়পোকাযুক্ত ভাঙা চেয়ারে বসে সিনেমা দেখতে চায় না। তারা চায় সিনেপ্লেক্সের মতো ঝকঝকে বড় পর্দায় সুন্দর পরিবেশে ছবি দেখতে।
আপনি কি মনে করেন, ৩০০ আসনে সিনেপ্লেক্স তৈরি হলে দর্শক আগের মতো হলমুখী হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, হ্যাঁ আমি এটা বিশ্বাস করি। ভালো পরিবেশ পেলে দর্শক হলমুখী হবে। আসলে একটি সিনেপ্লেক্স কে ঘিরে অনেক বাণিজ্যিক বিষয় জড়িত থাকবে। দর্শক শুধু সিনেমা দেখতে আসবে তা নয়। সিনেমা দেখাকে কেন্দ্র করে শপিংমলে কেনাকাটা করতে আসবে। আড্ডা দিতে আসবে তারা।
প্রযুক্তির যুগে এখন বিভিন্ন অ্যাপস তৈরি হচ্ছে, ওয়েবসিরিজ বা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম জনপ্রিয় হচ্ছে। নেটফ্লিক্সে সম্প্রতি নবাব এলএলবি মুক্তি পেয়েছে। দর্শক মোবাইলে সব কিছু দেখতে পারছে। প্রযুক্তির এই বিপ্লবকে হাবিবুল ইসলাম হাবিব হুমকি মনে করেন না। তিনি মনে করেন সিনেমা একটি বড় বিনোদন মাধ্যম। ডিজিটাল সাউন্ড, বড় পর্দায় দর্শক যে ছবিটি দেখবে, সেটির স্বাদ কিন্তু টেলিভিশন কিংবা ছোট মোবাইলে পাবে না। দর্শকদের সিনেপ্লেক্স উপহার দিতে পারলে অবশ্যই সব শ্রেণি দর্শক হলে এসেই ছবি দেখবে।
সর্বশেষ তিনি জানান, একদিকে তিনশ’ সংসদীয় আসনে তিনশ’ সিনেপ্লেক্স তৈরি , অন্যদিকে ভালো সিনেমা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহনে সরকার বিশেষ নজর দেবেন, এমন আকাঙ্ক্ষা চলচ্চিত্র শিল্পের সকলের। চলচ্চিত্রের সকলেই ঐকমত্য পোষণ করেন যে সিনেমা দেখার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে।