
শাবনাজ ও নাঈম
নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় জুটি শাবনাজ- নাঈম। এহতেশামের চাঁদনী ছবির মাধ্যমে এই জুটির বড় পর্দায় অভিষেক হয়। ওই সময়ে ঢাকাই সিনেমার অন্যতম মিষ্টি ও সফল জুটি তারা। দর্শকদের হৃদয়ে ভালোবাসার একটি জায়গা তৈরি করতে পেরেছিলো এই জুটি।
ঢাকার নবাব পরিবারের সন্তান নাঈমের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন মিষ্টি মেয়ে শাবনাজ। সেই সম্পর্ককে তারা পূর্ণতা দেন ১৯৯৪ সালের ৫ অক্টোবর। আজ ২০২১ সালের ৫ অক্টোবর তাদের বিয়ের ২৭ বছর পূর্ণ হলো।
তারকাদের বিয়ে বিচ্ছেদ দেখতে দেখতে সাধারণ দর্শকরা ক্লান্ত ও বিরক্ত, সেখানে নাঈম-শাবনাজ ২৭ বছর একসঙ্গে পার করে দিলেন। সুখে-শান্তিতে বসবাস করছেন।
আজ ৫ অক্টোবর ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন এই দম্পতি। সেখানে রয়েছে দুটি ছবি। যার একটি তাদের বিয়ের, অন্যটি বর্তমান সময়ের। ছবি দুটির ক্যাপশনে তারা লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, একসাথে পথ চলার ২৭টি বছর পার করলাম। সুখ, দুঃখ, আনন্দ, ত্যাগ, ভালোবাসা মিলে মিশে কাটানো সম্ভব হয়েছে একই মন মানুষিকতা ও আল্লাহ রহমতের কারণে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে নেক হেদায়েত দান করুন। আমিন’।
বিয়ের পর সিনেমা থেকে দূরে সরে যান তারা। সংসার জীবনেই মনোযোগী হন এ জুটি। তাদের নামিরা ও মাহাদিয়া নামের দুটি সন্তান রয়েছে। নাঈম-শাবনাজ বসবাস করছেন টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার থানার পাথরাইলে গ্রামের বাড়িতে।
মান-অভিমান আর ভালোবাসায় কেমন কাটছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে টেলিফোনে তারা জানান, কখনো অনেক ঝগড়াঝাঁটি হয়, আবার অনেক সময় গেছে অনেক আনন্দে। দুজনে একসঙ্গে বাইরে ঘোরাঘুরি করেছি, আনন্দ করেছি। বাচ্চা হওয়ার পরের জীবন আরেক রকম। বহু রাত আমরা না ঘুমিয়ে একসঙ্গে কাটিয়েছি।
তাদের ২৭ বছরের সংসারে মান-অভিমানের দৈর্ঘ্য ছিল মাত্র ৩০ মিনিট। শাবনাজ বলেন, মেয়েরা তো একটুতেই রেগে যায়। এখনো আমার রাগ হলে নাঈম ‘সরি’ বলে। আমি খুবই কম ‘সরি’ বলি। এটা নিয়ে আমার মেয়েরাও বলে, ‘মা, তোমার দোষ থাকলেও তুমি একদমই সরি বলো না’। যখন নাঈম ও মেয়েরা মিলে ধরে, তখন আমি বাধ্য হয়ে ‘সরি’ বলি। আমি রাগ করলেও নাঈম আগে এসে কথা বলে। নাঈম চায় না, বাসার ভেতর কোনো রাগারাগি থাকুক। রাগ করলে এখনো সে আমাকে ময়না বলে রাগ ভাঙায়। ‘বিষের বাঁশি’ ছবিতে আমার চরিত্রের নাম ছিল ময়না। সেই থেকে আজও নাইম ময়না বলেই ডাকে।
শখ করে সিনেমায় এসেছিলেন শাবনাজ ও নাঈম। চেয়েছিলেন, প্রথম ছবি ‘চাঁদনী’ যদি ব্যবসাসফল হয়, তাহলে তারা সিনেমায় নিয়মিত কাজ করবেন। ছবিটি ব্যবসাসফল হলো।
শাবনাজ বললেন, ‘আমরা দুজনই অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের সন্তান ছিলাম। সিনেমায় কাজ করে খেতে হবে, এ রকম কোনো চাপ ছিল না। আমরা এসেছিলাম শখ করে। চাঁদনী করার পর অন্য কোনো ছবিতেও যুক্ত হইনি। কারণ, দেখতে চেয়েছিলাম, ছবিটা কেমন হয়। ওই ছবি ফ্লপ করলে আমরা আর ছবিই করতাম না। পরে দেখা গেল ছবি হিট। তারপর আমরা প্রফেশনালি কাজ শুরু করলাম।’
নিজেদের প্রথম ছবি চাঁদনী দেখতে শাবনাজ-নাঈম প্রেক্ষাগৃহে যান ছবি মুক্তির দ্বিতীয় সপ্তাহে। দর্শকেরা চিনে ফেলেন দুজনকেই। আরও কাছ থেকে তাদের দেখার জন্য রীতিমতো জটলা পাকিয়ে ফেলেন তারা। সেদিন চাঁদনি চকে পুলিশ মোতায়েন করে প্রেক্ষাগৃহ থেকে বের করতে হয় শাবনাজ-নাঈমকে।
প্রথম ছবির পর এই জুটি এতই জনপ্রিয় হয়ে গেলেন যে দুজনের বাড়ির সামনে সব সময়ই মানুষ দাঁড়িয়ে থাকত। ওই সময়ের স্মৃতিচারণা করে শাবনাজ বলেন, ‘আমি তখন লালমাটিয়ায় থাকতাম। প্রতিদিন ছেলেরা আমাদের বাসার গেটে দাঁড়িয়ে থাকত। আমাকে দেখার জন্য অপেক্ষা করত। ঢাকার বাইরে একবার গেলাম শুটিং করতে, সেখানেও হাজার হাজার মানুষ আমাদের দেখতে এসেছিল।’
মেয়েদের চোখে তাদের তারকা মা–বাবাই আদর্শ দম্পতি। শাবনাজ-নাঈমের বড় মেয়ে নামিরা নাঈম পড়ছেন কানাডায়। চলচ্চিত্র নির্মাণের আগ্রহ আছে তার। করোনা মহামারির কারণে এখন তিনি দেশে, মা-বাবার কাছে। ছোট মেয়ে মাহাদিয়া নাঈম দেশে পড়াশোনা করছেন। গান করা, গল্প লেখার প্রতি টান আছে। ইউটিউব ঘাঁটলেই তার গান শোনা যাবে। মা-বাবা যে এত জনপ্রিয়, সেটা দুই বোনের কেউই অনেকদিন পর্যন্ত জানতেন না। একবার তাদের সঙ্গে বাইরে বের হয়ে টের পেলেন, মানুষ তাদের কত ভালোবাসে।
তাদের ভাষ্য, ‘বাসায় মা-বাবাকে দেখছি যেন দুটি মাটির মানুষ। তারকা তারা ঘরের বাইরে। বাইরে গেলেই বুঝি মা-বাবা কত জনপ্রিয়’। মা-বাবার পথে হাঁটতে চান না দুই বোন। বরং ক্যামেরার পেছনে কাজ করতে চান।
শাবনাজ-নাঈম জুটি হয়েছিলেন ২০টি ছবিতে। ‘জিদ’, ‘লাভ’, ‘চোখে চোখে’, ‘অনুতপ্ত’, ‘বিষের বাঁশি’, ‘সোনিয়া’, ‘টাকার অহংকার’, ‘সাক্ষাৎ’ ও ‘ঘরে ঘরে যুদ্ধ’। নব্বই ও পরের দশকে এই ছবিগুলো ছিল ভীষণ জনপ্রিয়।