Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

পতিত জমিতে মিশ্র ফলের আবাদ, সফল কৃষি উদ্যোক্তা

Icon

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:৪৪

পতিত জমিতে মিশ্র ফলের আবাদ, সফল কৃষি উদ্যোক্তা

কবির হোসেন। ছবি: ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

পুকুর পাড়ের পতিত জমিতে মিশ্র ফল চাষ করে সফল হয়েছেন ঝিনাইদহে কৃষি উদ্যোক্তা কবির হোসেন। মাছ চাষের পাশাপাশি করছেন চায়না, দার্জিলিং কমলা, মাল্টা, পেয়ারা, ড্রাগন ও পেপের চাষ। ফলন ভালো হওয়ায় জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলাগুলোতেও বাজারজাত করা হচ্ছে। পতিত জমিতে এমন মিশ্র ফল চাষে কৃষিবিভাগের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে না পরামর্শ। সেই সাথে পুকুর পাড়ের পতিত জমিতে মিশ্র ফলের চাষ এবং বিলের বিশাল এরিয়া জুড়ে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র।

সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়,মহেশপুর উপজেলার করিঞ্চা গ্রামের উকড়ির বিলের পাশে মাছ চাষের পাশাপাশি পুকুর পাড়ের পতিত জমিতে করছেন মিশ্র ফল চাষ। বাগানে গেলে দেখা মেলে সারি সারি গাছের সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে ঝুলছে সবুজ ও হলুদ রংয়ের কমলা ও মাল্টা। কাঁচা অবস্থায় গাঢ় সবুজ ও পেকে ধারণ করেছে গাঢ় হলুদ রং। শীতের শুরুতে গাছ ভর্তি এমন ফল বাগানের সৌন্দর্য বৃদ্ধির সাথে সাথে তার স্বপ্ন যেন দোল খাচ্ছে। পুকুর পাড়ে মিশ্র ফলের আবাদ করে নিজে অর্থনৈতিকভাবে স্বালম্বি হওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন ৩০ থেকে ৩৫ জনের। তার এমন ব্যতিক্রমি চাষে আগ্রহী হয়ে অনেক কৃষকই ঝুকছে এমন চাষে। এই ব্যতিক্রমি মিশ্র চাষ করছেন মহেশপুর উপজেলার তৈলটুপি গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা কবির হোসেন।

কবির হোসেনের ১০০ বিঘা জমিতে ১৬টি পুকুরে রয়েছে যেখানে চাষ করা হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। তার পুকুর পাড়ে রয়েছে সাড়ে ৭০০ মাল্টা , ২ হাজার ৫০০ ড্রাগন, ৫০০ পেপে, ৩০০ চায়না কমলা ও ১০০ দার্জিলিং কমলা। প্রতিমাসে তার আয় কয়েক লাখ টাকা।

গ্রামের কৃষক আবুল কালাম বিশ্বাস জানান, তিনি প্রতিদিন পুকুর পাড়ে ঘাস কাটতে আসেন। এর আগে কখনো পুকুর পড়ে এতো ফল দেখেননি। তিন বছর ধরে এই ফল গাছ দেখছেন। যেখানে কমলা, মাল্টা, পেপে, ড্রাগন, পেয়ারা এই ফলগুলো পুকুর পাড়ে চাষ হচ্ছে।

পুকুরের পাহারাদার রেজাউল ইসলাম জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই পুকুর এবং বিল পাহারার কাজ করছেন। এর আগেও এখানে অনেক লোক আসছে মাছ চাষ করতে, তখন পাড়ে কিছুই হতো না বা কেউ এই ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। কিন্তু কোবির হোসেন ইজারা নেওয়ার পর থেকেই তিনি পুকুর পাড়ে মিশ্র ফলের চাষ করেছেন। এখন পুকুর পাড়গুলো দেখতেও অনেক ভালো লাগে আবার অনেক লোক ঘুরতেও আসছে। আশা করি কবির হোসেন অনেক লাভবান হবেন।

পুকুর প্রজক্টের ম্যানেজার মুক্তার আলী জানান, এর আগে তিনটা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন তিনি। কিন্তু কোথাও দেখেনি মাছচাষের পাশাপশি মাল্টা, চায়না কমলা, ড্রাগনসহ বিভিন্ন ফলের চাষ করতে। এই প্রথম তিনি পুকুর পাড়ে ফলের চাষ করতে দেখছেন। এখন এই পুকুর পাড়ে ও বিলে ঘুরতে এবং ফলের বাগান দেখতে প্রতিদিন শতশত মানুষ আসছে বলেও জানান তিনি।

উদ্যোক্তা কবির হোসেন বলেন, কৃষিকে আরো সমৃদ্ধ করতেই এমন উদ্যোগ। আগামীতে কৃষি থেকেই সর্বোচ্চ অর্থ আয় হবে বলে তার প্রত্যাশা। এই প্রজেক্টটা করা ব্যাক্তিগত উপার্জনে। ৬ বছরে জন্য সরকারের থেকে লিজ নিয়ে মাছচাষ শুরু করি। এখানে অনেকটাই অগোছালো ছিল, অনেক টাকা ব্যায় করে ১৩/১৪ ফুট পাড় বানিয়ে মাছ চাষ এবং ফল চাষের উপযোগী করি। এখানে মাটির বোন্ডিং বেশি ভালো নয় যার কারণে অনেক জায়গাই ভেঙে গেছে। তার ভিতর দিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি পাড় গুলো টিকিয়ে রাখার জন্য। একই সাথে চিন্তা করি মাছ চাষ করার পাশিপাশি পাড়ে এতো জায়গা পড়ে আছে, এই জায়গাই এমন কিছু করে দেখাব যা দেখে আরো অনেকেই উদ্ধুদ্ধ হবে। সেই দৃষ্টিকোন থেকে চায়না কমলা, মাল্টা বরি-১, দারজেলিং কমলা লাগিয়েছি। বর্তমানে চায়না কমলার বাম্পার ফলন হয়েছে। এখন অনেকেই দেখতে আসছে। অনেকেই আমার দেখাদেখি এই চাষ করতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। পাশাপাশি অনেক মানুষ আসার কারণে জায়গাটি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আমার ইচ্ছাও এখানে মাছ, ফলের বাগান এবং পাশের উকড়ির বিল সমন্ময় করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার।

তিনি আরো বলেন, আমি নিজের স্বার্থ না ভেবে সরকারি জমি এবং মালিকানা জমি লিজ নিয়ে ফলের গাছ লাগিয়েছি এবং মাছ চাষ করছি। আমরা যদি প্রত্যেকে সংকীর্ণ মানসিকতা নিয়ে থাকি তাহলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। চিন্তা করেছি আগে শুরু করি এবং আমি যদি এখানে চাষ করতে না পারি তাহলে আমার পরিবর্তে যে আসবে সে এইগুলো দেখাশুনা করবে বা তার হয়ে যাবে। আজ এখানে এই ফলের বাগান করেছি যার কারণে এখানে শতশত মানুষ আসছে এই বাগান দেখার জন্য এবং এমন বাগান করার জন্য উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমরা যখন বেশি পরিমাণ ফল উৎপাদন করি, সেগুলোকে বিক্রয় করা বা বাজার জাত করা বড় একটা সমস্য হয়ে দাড়ায়। সেই ক্ষেত্রে সরকার যদি বাজার জাত করার জন্য একটু মনোযোগী হয়, ফলটা যাতে পচে না যায় এবং কৃষক যেন তার সঠিক মূল্যটা পাই সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাহলে অনেকে কৃষি কাজে আগ্রহী হবে। সবশেষ উন্নত বাংলাদেশ দেখতে হলে কৃষির উপর সহযোগিতার মনোভাব এবং বিভিন্ন ধরনের সাহায্য সহযোগিতাও বাড়াতে হবে।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজগর আলী বলেন, পতিত জমি চাষ করতে উদ্বুদ্ধের পাশাপাশি সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। কবির হোসেনের পুকুর পাড়ের মাটি এঁটেলে মাটি এবং কমলা চাষের জন্য উপযোগি হওয়ায় সে কমলাটা চাষ করতে পরেছে। কমলার শেকড় অনেক গভীরে যায়, যার কারণে একবার পানি দিলে অনেক দিন পানি না দিলেও কোনো সমস্যা হয় না। আর এঁটেলে মাটিতে সবমসয় সেচ দেওয়া লাগে না।

তিনি আরো বলেন, পুকুর পাড়ে কমলা চাষ করায় গাছের শিকড়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পাই যে কারণে ভালো মানের ফল উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। তার উৎপাদন খরচ বলতে তেমন কোনো খরচ নেই। শুধু প্রথমে চারা রোপন করার জন্য যে টাকা খরচ হয়েছে এবং জৈব সার ব্যবহার করেই তিনি এই ফলন পাচ্ছেন। তবে তিনি মাছ চাষের পাশাপাশি একবার বিনিয়োগ করে ভালো একটা ফলন পাচ্ছেন। এই ধরনের চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে বলেন আশা করছি।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫