মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব গুড়িয়ে দিল বিসিসি

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ জানুয়ারি ২০২৩, ২০:০০
-63bec11b873cf.jpg)
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব রাতের আঁধারে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে বিসিসি। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি
দীর্ঘ ৮০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া সংগঠন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব রাতের আঁধারে ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন (বিসিসি)।
উচ্ছেদের নিয়ম না মেনেই মঙ্গলবার (১০ জানুয়ারি) মাঝরাতে ক্লাব কার্যালয়টি ভেঙে মাটির সাথে মিলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ঐতিহ্যবাহী এই ক্লাবটি ভাঙতে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ ক্লাব সদস্যদের। তবে এ নিয়ে নগরভবন কর্তৃপক্ষ কোন ব্যাখ্যা না দিলেও উচ্ছেদকে স্বাগত জানিয়েছেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান একেএম জাহাঙ্গীর হোসেন।
আর স্থানীয়রা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে ক্রীড়া কার্যক্রম বন্ধ থাকা মোহামেডান স্পোটিং ক্লাবটিতে চলে আসছিল রমরমা মাদকের ব্যবসা। ইতিপূর্বে একজন বিএনপি নেতার ভাইকে ফেনসিডিলসহ আটকও করা হয়েছিল ক্লাবটি থেকে।
জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের ক্রীড়াঙ্গনে একসময়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব প্রতিষ্ঠা হয় ১৯৪২ সালে। বরিশাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের উত্তর পার্শ্বে জেলা পরিষদের ৩০ শতাংশ জমি বরাদ্দের অনুকূলে ক্লাব কার্যালয়ে কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে আসছিল। মোহামেডান স্পোটিং ক্লাব এই অঞ্চলের ফুটবল, ক্রিকেটসহ জাতীয় ও স্থানীয় খেলায় বিশেষ অবদান রেখেছে।
প্রায় তিন শতাধিক নিবন্ধিত সদস্যের ভোটে পরিচালনা কমিটি গঠন হওয়ার বিধান থাকলেও নানান জটিলতায় ২০১৪ সালের পর নতুন কমিটি গঠন হয়নি। তবে এর আগে এই ক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন বিডি হাবিবুল্লাহ, লকিতুল্লাহ, সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুর রহমান বিশ্বাস, গোলাম মাওলা, বিসিবির বর্তমান পরিচালক আলমগীর হোসেন আলোর মত আলোচিত ব্যক্তিরা।
ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আহসান কবির হাসান বলেন, ঐতিহ্যবাহী ক্রীড়া ক্লাবটি ঢাকার মোহামেডান ক্লাব প্রতিষ্ঠার আগেই প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল। এটি কারোর একার নয়, এই অঞ্চলের মানুষের সম্পদ। কিন্তু সেটি রাতের আঁধারে গুড়িয়ে দেওয়ার দরকার ছিল না। সিটি কর্পোরেশন চাইলে ক্লাবটি সুন্দর করে পরিচালনা করতে পারতো বা আমরা যারা ক্লাবের সদস্য তাদের নিয়ে বসে গঠনমূলক যেকোনো সিদ্ধান্ত নিলে আমরা দ্বিমত করতাম না। কিন্তু এভাবে একটি ইতিহাসকে মাটির সাথে মিশিয়ে দেওয়া সঠিক কাজ হয়নি।
ক্লাবের সাবেক সভাপতি শফিকুল আলম গুলজার বলেন, উচ্ছেদের নামে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ক্লাবটিকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে। ওখানে ক্লাবের মূল্যবান কাগজপত্র, আসবাবপত্র ছিল। সেগুলোও আমরা রক্ষা করতে পারিনি। আমাদের কোন চিঠিও দেয়নি। সকালে উঠে শুনি গুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটি।
প্রত্যক্ষদর্শী ওই এলাকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত ১১ টা পর্যন্তও তারা ক্লাবটি দেখে গেছেন। সকালে এসে দোকান খুলতে গিয়ে দেখেন ক্লাবের চিহ্নই নেই।
এ প্রসঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফারুক আহমেদ বলেন, বিষয়টি ভালোভাবে জেনে বক্তব্য দিতে হবে। এজন্য ১০ মিনিট পরে কল দিতে বলেন। কিন্তু ১০ মিনিট পরে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, ক্লাবটি ভেঙে দেওয়া হয়েছে এটি খুব ভালো সংবাদ। ওখানে মদ-গাঁজা সেবন চলতো। সুতরাং এই উচ্ছেদে আমি সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে সাধুবাদ জানাই।