Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

দেবে যাচ্ছে খুলনা-মোংলা রেল সংযোগ প্রকল্পের স্থাপনা

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:০৩

দেবে যাচ্ছে খুলনা-মোংলা রেল সংযোগ প্রকল্পের স্থাপনা

খুলনা-মোংলা রেল সংযোগ প্রকল্পের স্থাপনার কাজ চলছে। ছবি: সংগৃহীত

প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার আগেই দেবে যাচ্ছে খুলনা-মোংলা রেল সংযোগ প্রকল্পের বেশ কিছু স্থাপনার বিভিন্ন অংশ। রেলস্টেশন ভবন নির্মাণে নিম্নমানের দরজা, জানালা, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন সামগ্রী ব্যবহারের কারণে এমনটা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এদিকে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০২৪ সালে। তিন বছরের কাজ গড়িয়েছে ১৪ বছরে। আরা এক হাজার ৭০০ কোটি টাকার কাজের ব্যয় বেড়ে চার হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। 

বাংলাদেশ রেলওয়ের বাস্তবায়নাধীন ‘খুলনা হতে মোংলা পোর্ট পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের এসব অসঙ্গতি এখন চোখের সামনে জ্বল জ্বল করছে। আর এ চিত্র উঠে এসেছে খোদ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) পরিদর্শন প্রতিবেদনেও। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রকল্পের বাস্তবায়নে ধীরগতি করা হয় অর্থ লোপাটের জন্য, যা এ প্রকল্পের ক্ষেত্রে প্রমাণিত। এটি দেশের সম্পদের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। এ সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

প্রকল্পের নথি থেকে জানা যায়, প্রকল্পটি ২০১০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদনের সময় প্রকল্পের ব্যয় ছিল ১ হাজার ৭২১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এরপর প্রকল্পের মেয়াদ চার দফায় ১২ বছর বাড়ে। নতুন করে আরও এক বছর সাত মাস ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। পঞ্চমবারে এসে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ ব্যয় বেড়েছে ২ হাজার ৫৩৯ কোটির টাকার বেশি, যা অনুমোদিত ব্যয়ের চেয়ে আড়াইগুণ বেশি। অতিরিক্ত এ টাকা দিয়ে ফরিদপুরের মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত নির্মিত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প, আখাউড়া-আগতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ) ও ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পের পুরো ব্যয় বহন করা সম্ভব ছিল। এ তিন প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৫৮ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নের ধীরগতি ও ব্যয় বৃদ্ধি বাংলাদেশের সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে সরকারের অর্থ অপচয় হচ্ছে। কাজ ঠিকমতো বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না সেটা দেখার জন্য মনিটরিং আরও জোরদার করতে হবে। সাধারণত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগসাজশে অর্থ লোপাট হয়ে থাকে। সে জন্য প্রকল্পের নিজেদের পছন্দমতো ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। অর্থ লোপাট বন্ধ করতে ঠিকাদার নিয়োগের সব প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে হবে। সঠিক মনিটরিং হলে এ প্রকল্পের কাজে নিম্নমানের আসবাবপত্র ব্যবহার করতে পারত না সেতুর এমব্যাংকমেন্টও দেবে যেত না।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, অক্টোবর ২০২২ মাস পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি হয়েছে ৯৬ দশমিক ২০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৮৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

আইএমইডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ২৫ মিটার দীর্ঘ ১০নং সেতু পরিদর্শনে সেতুর উভয় পাশের এমব্যাংকমেন্টের মাটি এখনই দেবে যাওয়ার কারণে নির্মিত সেতুটির মারাত্মক কারিগরি ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়।

নির্মিত রেললাইন খুলনা-বাগেরহাট জেলার অনেকটা জলাভূমি বরাবর নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে এমব্যাংকমেন্টের মাটি বসতে অনেক বেশি সময় লাগছে। এছাড়াও কোথাও কোথাও অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। এ জন্য বারবার ডিজাইন সংশোধনের প্রয়োজন হচ্ছে। এটি প্রকল্পের দুর্বল ফিজিবিলিটি স্টাডির কারণেই হয়েছে।

আইএমইডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রকল্পের আওতায় নির্মিত রেলস্টেশন ও সার্ভিস এরিয়ার ভবনগুলো পরিদর্শনে দেখা যায় ভবনে ব্যবহৃত কাঠ, দরজার, হ্যাজবে পক, জানালার গ্রিল ইত্যাদি অত্যন্ত নিম্নমানের। প্রকল্পের কাজ শেষ পর্যায়ে থাকলেও এখনও কক্ষগুলোর ফিটিংস কমোড, বেসিন ইত্যাদি সংযুক্ত করা হয়নি। এটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মনিটরিংয়ের অভাবেই হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. আরিফুজ্জামান বলেন, এ প্রকল্প যখন নেওয়া হয় তখন ডিটেইল ডিজাইন করা হয়নি। ডিটেইল ডিজাইনে প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি না করায় কাজে এত সময় লাগছে। আমাদের নতুন করে ডিটেইল ডিজাইন করতে হয়েছে। এছাড়া জলাভূমি এলাকা দিয়ে কাজ করায় মাটি বসতে সময় লাগছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫