Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

বিলুপ্তপ্রায় লাউড় রাজ্যের হাওলি জমিদারবাড়ি

Icon

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৫:৪৬

বিলুপ্তপ্রায় লাউড় রাজ্যের হাওলি জমিদারবাড়ি

সুনামগঞ্জের হাওলি জমিদারবাড়ি। ছবি: প্রতিনিধি

দেশের প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে প্রায় ১২০০ বছর পূর্বের বিলুপ্তপ্রায় লাউড় রাজ্যের প্রাচীন নিদর্শন হাওলি জমিদারবাড়ি অন্যতম। ঐতিহাসিক ভগ্নপ্রায় এ প্রাসাদটিকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য ইতিহাস। যা ভ্রমণপ্রিয় মানুষকে মুগ্ধ করে। 

তবে স্থানীয়রা প্রাচীন নিদর্শন ভেঙে ৩০ একর জায়গায় দখল করে এখানে বসবাস করছে। হাওলি জমিদারবাড়িটি সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ বড়দল ও উত্তর বড়দল ইউনিয়নের হলহলিয়া ও ব্রাহ্মণ্যগাঁও গ্রামে এর অবস্থান। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, লাউড় রাজ্যের চতুর্সীমা ছিল পশ্চিমে ব্রহ্মপুত্র নদ, পূর্বে জয়ন্তিয়া, উত্তরে কামরূপ সীমান্ত ও দক্ষিণে বর্তমানে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পর্যন্ত। বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এই লাউড় রাজ্যের প্রাচীন নিদর্শন হাওলি জমিদার বাড়িটি ছিল রাজধানীর প্রধান কেন্দ্র। 

রাজা বিজয় সিংহ আজ থেকে প্রায় ১২০০ বছর পূর্বে এই বাড়িটি তৈরি করেন। প্রায় ৩০ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত রাজবাড়িটিতে ছিল বন্দিশালা, সিংহদ্বার, নাচঘর, দরবার হল, পুকুর ও সীমানা প্রাচীর যার কিছু অংশ এখনো আছে। ঐতিহাসিক এই জমিদারবাড়িটির ইতিহাস বেশ বৈচিত্র্যময়। 

কেশব মিত্র সিংহ নামে এক ব্রাহ্মণ এ রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। কৌনজগোত্র থেকে খ্রিষ্টীয় দশম বা একাদশ শতকে তিনি এখানে আসেন। এখানে রাজত্ব করতেন বিজয় মাণিক্য নামের একজন নৃপতি। বঙ্গ বিজয়ের পর রাঢ় অঞ্চল মুসলমানদের হাতে চলে যাওয়ায় সেখানকার বিতাড়িত ও পরাজিত সম্ভ্রান্তরা জীবন বাঁচানোর জন্য বিভিন্ন স্থানে চলে যান। এদেরই একজন এখানে এসে রাজত্ব গড়ে তোলেন। লাউড় রাজ্যের রাজধানী লাউড় ছাড়াও জগন্নাথপুর ও বানিয়াচংয়ে আরও দুটি উপরাজধানী ছিল।

সম্রাট আকবরের শাসনামলে লাউড় রাজ্য খাসিয়াদের আক্রমণের শিকার হলে কিছুদিনের জন্য এর রাজধানী বর্তমান হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংয়ে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। পরে লাউড় রাজ্যের গোবিন্দ সিংহ তা পুনরুদ্ধার করে আবার রাজধানী হিসেবে স্ব-স্থানে পুনঃস্থাপন করেন।

ঐতিহাসিক হান্টারের মতে ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে মুঘল অধিকারের পর লাউড় রাজ্য প্রথমবারের মতো তার স্বাধীনতা হারায় এবং মুঘলদের বশ্যতা স্বীকার করে নেয়।

২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তাহিরপুরের লাউড় রাজ্যকে প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শনের জন্য সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। পরে ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর রাজ্যের প্রাথমিক খনন কাজ শুরু করেছিল সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর। ওই সময় প্রত্নতত্ত্ববিদরা জানিয়েছিলেন, এখানে অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া গেছে।

এর পর ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি দুর্গে দ্বিতীয় ধাপের প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধান কাজ শুরু হয়। খনন ও অনুসন্ধান কাজের নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক ড. আতাউর রহমান। সে সময় তিনি জানিয়েছিলেন, প্রাচীন লাউড় দুর্গে আমরা যে নিদর্শন পেয়েছি তা কয়েক যুগকে একত্রিত করবে। খনন ও গবেষণার পাশাপাশি পর্যটন শিল্প বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় প্রকল্প প্রস্তাব প্রস্তুতের কাজ চলছে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, সীমান্তঘেঁষা তাহিরপুর উপজেলার প্রায় সব এলাকা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে খ্যাত। এর মধ্যে টাঙ্গুয়ার হাওর, ট্যাকেরঘাট শহীদ সিরাজ লেক, যাদুকাটা নদী, শিমুল বাগান ও এর পাশেই হলহলিয়া জমিদারবাড়ি। এর আশপাশে বেশ কিছু খাস জমিও রয়েছে, জমিগুলোতে পর্যটনের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের কাজ করা হবে। এতে করে লাউড় রাজ্যের পুরাকীর্তি হাওরাঞ্চলের পর্যটনের নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫