মাদ্রাসায় শিশু শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত, শিক্ষক চাকরীচ্যুত

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০:৩৩
-63ea4a4d056ff.jpeg)
শিশু শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি
মাদ্রাসায় থাকতে না চাওয়ায় মাত্রা ৮ বছর বয়সী শিশু শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে বেত্রাঘাত করেছেন শিক্ষক। এতে ওই শিক্ষার্থীর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখমসহ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এ নিয়ে শিশু শিক্ষার্থীর পরিবারের মাঝে ক্ষোভ এবং উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
আজ সোমবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নগরীর আমানতগঞ্জ এলাকায় দারুন নূর আজিজিয়া মাদ্রাসায় এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর পরই আত্মগোপনে চলে যান অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মাদ তৈয়ব হোসাইন।
তবে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতের ঘটনায় তার পরিবারের দাবির প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
মাদ্রাসা শিক্ষকের নির্মম বেত্রাঘাতের শিকার শিশু শাহাদাৎ সিকদার বরিশাল সদর উপজেলার চরকাউয়া ইউনিয়নের নয়ানি গ্রামের দপ্তরি বাড়ির বাসিন্দা সাহিন সিকদারের ছেলে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও শিশুর শিক্ষার্থীর চাচি শ্রাবনী আক্তার বলেন, সকাল ১১টার দিকে আমি ও আমার স্বামী ইউসুফ আলী সিকদার ভাতিজা শাহাদাৎকে আমানতগঞ্জ এলাকায় তার মাদ্রাসায় দিয়ে আসার জন্য যাই। শাহাদাৎ ছোট হওয়ায় সে একা মাদ্রাসায় থাকতে চাচ্ছিল না।
তিনি বলেন, শাহাদাৎকে মাদ্রাসায় রেখে আসতে চাইলে সে অনেক কান্নাকাটি করে। এ জন্য মাদ্রাসার শিক্ষক মোহাম্মদ তৈয়ব হোসাইন তাকে শান্ত করতে না পেরে আমার সামনেই শাহাদাৎকে নির্মমভাবে বেত্রাঘাত করেন। এতে তার শরীরের বিভিন্ন জায়গায় জখম হয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এক মাস হয়নি শাহাদাৎকে আমানতগঞ্জ এলাকার দারুন নূর আজিজিয়া মাদ্রাসায় হাফিজিতে ভর্তি করেছি। ভর্তির পরে গত এক মাসে মাদ্রাসা শিক্ষকরা তাকে নাকি একাধিকবার এমনভাবে বেত্রাঘাত করে। আজ আমার সামনে যে ঘটনা ঘটেছে তাতে ওর পূর্বের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। আমরা এই ঘটনার বিচার চাই।
এদিকে শাহাদাতের চাচা ইউসুফ আলী সিকদার বলেন, খবর পেয়ে আমি মাদ্রাসায় ছুটে যাই। গিয়ে দেখতে পাই শাহাদাতের সমস্ত শরীরজুড়ে বেত্রাঘাতে ফলে গেছে। ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করে স্থানীয়রাও মাদ্রাসায় গিয়ে এর প্রতিবাদ জানাই।
পরে মাদ্রাসার সুপার এবং অভিযুক্ত শিক্ষক দুজনেই আমাদের কাছে এই ঘটনার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। এ নিয়ে আইনি সহায়তা না নেওয়ার জন্য বলেন। পাশাপাশি অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকরি থেকে বের করে দিবেন বলে মাদ্রাসা সুপার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
অভিযোগ প্রসঙ্গে দারুন নূর আজিজিয়া মাদ্রাসায় অভিযুক্ত শিক্ষক মোহাম্মদ তৈয়ব হোসাইনের বক্তব্য জানতে মাদ্রাসায় গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। এমনকি তার ব্যবহৃত মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়েই কল কেটে দেন।
তবে মাদ্রাসার অপর শিক্ষক হাসিবুর রহমান বলেন, সকাল ৯টার পরে মাদ্রাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ঘুমের সময়। এসময় প্রায় সময় অভিভাবকরা ফোন করে বিরক্ত করেন।
আজ সোমবার সকালে শিশু শিক্ষার্থীকে যখন মাদ্রাসায় নিয়ে আসে তখন শিক্ষকরা সবাই ঘুমে ছিলেন। শাহাদাৎ মাদ্রাসায় থাকতে চাইছিল না। মাদ্রাসার শিক্ষক ও সহকারী বোডিং সুপার মোহাম্মদ তৈয়ব হোসাইন ঘুম থেকে জেগে শিশুটিকে আনতে যান। তখন ওই শিশু শিক্ষার্থী হুজুরকে লাথি এবং দাড়ি ধরে টানাহেচড়া করেন। তখন হুজুর রেগে গিয়ে শিশুটিকে বেত্রাঘাত করেন। তবে যে ঘটনা ঘটেছে সেজন্য অভিযুক্ত শিক্ষকসহ আমরা সবাই দুঃখ প্রকাশ করছি।
জানা গেছে, গত দুই বছর পূর্বে আমানতগঞ্জ এলাকায় ভাড়া বাড়িতে শুরু হয় দারুন নূর আজিজিয়া মাদ্রাসায় মাদ্রাসার কার্যক্রম। মাদ্রাসাটির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও সুপার রফিকুল ইসলাম। তিনি নগরীর বাজার রোড খাজা মাঈন উদ্দিন চিশতী (রা.) মাদ্রাসার শিক্ষক।
এ প্রসঙ্গে মাদ্রাসা সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটির জন্য আমরা দুঃখ প্রকাশ করছি। তাছাড়া শিক্ষার্থীর পরিবারের দাবি ছিল ওই শিক্ষক যাতে আর এই মাদ্রাসায় না থাকে। সেজন্য তাদের দাবির প্রেক্ষিতে ঘটনার পর থেকেই তাকে মাদ্রাসা থেকে চাকরীচ্যুত করা হয়েছে। পাশাপাশি ঘটনাটি আমরা নিজেরাই সমাধান করেছি। তবে মাদ্রাসাটিতে শিক্ষার্থীদের ওপর নিয়মিত নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।