-14-63ec66a9c8551.jpg)
জুট মিল। ছবি: প্রতিনিধি
আড়াই বছর ধরে নেই কোলাহল, তাঁতের খটখট শব্দ, আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মব্যস্ততা। কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। এ চিত্র বন্ধ হয়ে যাওয়া খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি জুট মিলের। এদিকে বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আঞ্চলিক কার্যালয়টিও যেন এক নিঝুম বাড়ি।
কার্যালয়ের ১৪টি কক্ষের ৭টিই বন্ধ। বাকি ৭টি কক্ষে দাপ্তরিক কাজ চললেও পড়েছে ঝুলকালি। অভ্যর্থনা কক্ষটির চেয়ার, টেবিল, সোফাতেও জমেছে ধুলো-ময়লা। কবে মিল চালু হবে জানে না বিজেএমসির কেউ।
বিজেএমসি সূত্র জানায়, ক্রমাগত লোকসানের কারণে ২০২০ সালের ২৫ জুন খুলনা অঞ্চলের নয়টিসহ দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ২৫টি জুট মিল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। এর পর ২০ জুলাই মিলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই দীর্ঘ সময়ে অযত্ন অবহেলায় নষ্ট হতে বসেছে মিলগুলোর ৫ হাজার ৮৩টি তাঁত।
বিজেএমসির সূত্র মতে, তাঁতগুলোর বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া মিলগুলোর মোট জমি রয়েছে ৫৫০ একর। এই বিশাল জমির অধিকাংশই পড়ে আছে অব্যবহৃতভাবে।
সূত্রমতে, রাষ্ট্রায়ত্ত ৯টি জুট মিল বন্ধ থাকলেও মিলগুলোর পেছনে সরকারের প্রতিবছর ব্যয় হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। বর্তমানে নয়টি জুট মিলে ১ হাজার ৪৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। দেড় বছরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ সরকারের ব্যয় হয়েছে ৬৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। এ হিসেবে গত আড়াই বছরে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন বাবদ ব্যয় হয়েছে প্রায় ১১০ কোটি টাকা।
এছাড়া মিলগুলোর নিরাপত্তায় বিজেএমসির ২২৯ জন নিরাপত্তারক্ষী ও ৯৮ জন আনসার নিয়োজিত রয়েছেন; তাদের পেছনেও প্রতিবছর খরচ হচ্ছে কোটি টাকা। বিদ্যুৎ বিল বাবদ ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ৫০ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এছাড়া রয়েছে যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণসহ আনুষঙ্গিক অন্যান্য খরচ। যার হিসেব বিজেএমসির খাতায় এখনো তোলা হয়নি।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের ৩ নম্বর ইউনিটের তাঁত বিভাগের স্থায়ী শ্রমিক ছিলেন মো. ইব্রাহিম। তিনি বলেন, মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অর্ধাহারে-অনাহারে আমার পরিবারের দিন কাটছে। পুনরায় মিল চালু হলে খেয়ে-পরে বেঁচে থাকতে পারতাম।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক সোহরাব হোসেন বলেন, বন্ধের সময় সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল মিলগুলোর যন্ত্রপাতি সংস্কার (বিএমআরই) করে তিন মাসের মধ্যে পুনরায় চালু করা হবে। এর পর প্রায় তিন বছর হতে চললেও মিলগুলো চালু করা হয়নি। অনেক শ্রমিক এখনো তাদের পরিপূর্ণ বকেয়া পায়নি। অনেক শ্রমিক অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাচ্ছে।
বাংলাদেশ জুট মিল করপোরেশনের (বিজেএমসি) আঞ্চলিক সমন্বয়কারী গোলাম রব্বানী বলেন, বন্ধ মিলগুলো বেসরকারি খাতে পুনরায় চালুর ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ভাড়া দেওয়ার জন্য বেশকিছু টেন্ডারও পড়েছে। বর্তমানে সেগুলো যাচাই-বাছাই চলছে। এ কাজগুলো শেষ হলে কয়েকটি মিল চালুর সম্ভাবনা রয়েছে।