কলা চাষে ঝুঁকছেন টাঙ্গাইলের পাহাড়ি অঞ্চলের কৃষক

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১১:১৩
-11-63f6f6179e824.jpg)
অন্য ফসলের তুলনায় কম খরচে বেশি লাভের কারণে কলা চাষে ঝুঁকছেন। ছবি: প্রতিনিধি
টাঙ্গাইলের পাহাড়ি অঞ্চলের লালমাটি কলা চাষের জন্য উর্বর হওয়ায় কৃষকরা এককালীন ফলন হলেও অন্য ফসলের তুলনায় কম খরচে বেশি লাভের কারণে কলা চাষে ঝুঁকছেন।
জানা গেছে, জেলার লালমাটি অধ্যুষিত উপজেলা মধুপুর, ঘাটাইল ও সখীপুরের পাহাড়ি মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় কলা চাষের প্রতি স্থানীয় কৃষকদের মাঝে আগ্রহ বাড়ছে। ইতোমধ্যে অনেক কৃষক কলা চাষে অর্থনৈতিকভাবে সফলও হয়েছেন। তাছাড়া পাহাড়ি এলাকা অপেক্ষাকৃত উঁচু হওয়ায় সারা বছরেই কলার চাষ করা যায়।
জেলার মধুপুর, ঘাটাইল ও সখীপুর এ তিন উপজেলার উৎপাদিত কলা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে প্রায় ৭০-৮০ ভাগই চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা ছাড়াও ঢাকা, ময়মনসিংহ, জামালপুর, ফুলবাড়িয়া, সিলেট, ভৈরবসহ দেশের অন্য জেলাগুলোতে যাচ্ছে। স্থানীয় কলার পাইকারি বাজার মধুপুরের জলছত্র, গারোবাজার এবং সখীপুর উপজেলার কুতুবপুর বাজার কলার জন্য বিখ্যাত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসব বাজার বা হাটে পাইকাররা কলা কিনতে আসেন।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলে বারিকলা-১ ও বারিকলা-২ (আনাজিকলা), অমৃতসাগর, মন্দিরা, মন্দিরা সাগর, সবরি, চম্পা, চিনিচাম্পা, কবরি, মেহেরসাগর, বিচিকলা ইত্যাদি জাতের কলা চাষ হয়ে থাকে। প্রতি বিঘা জমিতে ৩৫০ থেকে ৩৮০টি কলাগাছ রোপণ করা হয়। একটি কলা গাছে রোপণ থেকে বাজারজাত পর্যন্ত ১৫০ থেকে ২০০ টাকা খরচ হয়। প্রতিটি কলার ছড়ি ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায় বিক্রি করা যায়। এ হিসেবে প্রতিবিঘায় প্রায় ৬০ হাজার টাকা কৃষকরা লাভের মুখ দেখেন।
সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় চার হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কলা আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কলা চাষ হচ্ছে মধুপুরে। মহিষমারা, শোলাকুড়ী, বেরীবাইদ, অরণখোলা, কুড়াগাছা, কাকরাইদ, ভবানীটেকী, গরমবাজার, কাউচি বাজারসহ মধুপুরের বিভিন্ন গ্রামেই দুই হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হচ্ছে।
এ বছর ঘাটাইল উপজেলায় ৯৫০ হেক্টর জমিতে কলা চাষ হয়েছে। সন্ধানপুর, সংগ্রামপুর, রসুলপুর, লক্ষিন্দর, ধলাপাড়া ও সাগরদীঘি ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি কলার আবাদ করা হয়েছে। এসব এলাকার কলার চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এর প্রভাব কলা চাষিদের মাঝেও পড়েছে। এ বছর উৎপাদিত কলা আগের বছরের চেয়ে কৃষকরা বেশি দামে বিক্রি করতে পারছেন। তবে এবারও কোনো কোনো এলাকায় পানামা রোগের প্রকোপ লক্ষ করা গেছে।
মধুপুরের মহিষমারা গ্রামের কৃষক ছানোয়ার হোসেন জানান, পৈতৃক জমি ও অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে তিনি বিভিন্ন ফলের চাষ করছেন। এবার পাঁচ বিঘা জমিতে ১৭০০টি কলার চারা রোপণ করেছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে ফলন এবং লাভ দুটোই ভালো হবে। এখন শীতকাল থাকায় কলার দাম একটু কম যাচ্ছে। গরম উঠলেই কলার বাজার অনেক বেড়ে যাবে।
মধুপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আল মামুন রাসেল জানান, এ বছর মধুপুর উপজেলায় কলা চাষ কিছুটা কম হয়েছে। কারণ একই জমিতে বারবার কলা চাষ করলে মাটির উর্বরতা কমে যায়। সেই সঙ্গে পানামা পোকার আক্রমণে কলা চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তারপরও এবার মধুপুর উপজেলায় দুই হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমিতে কলার চাষ হয়েছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ভালো ফলনের আশা করা হচ্ছে।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আহসানুল বাসার জানান, চলতি মৌসুমে টাঙ্গাইল জেলায় চার হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কলা আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কলা চাষ হচ্ছে মধুপুর উপজেলায়। এছাড়া ঘাটাইল ও সখীপুর উপজেলায়ও কলা আবাদ করা হয়েছে।