Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

চিরহরিৎ বন রক্ষায় সাফল্য

Icon

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৩:০১

চিরহরিৎ বন রক্ষায় সাফল্য

পাবলাখালী অভয়ারণ্য। ছবি: প্রতিনিধি

পার্বত্য চট্টগ্রামে বন উজাড় ও ধ্বংসের বিপরীতে ভিন্ন এক সাফল্যগাথার নাম পাবলাখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও পাবলাখালী গেম সেঞ্চুয়ারি রেঞ্জ। অসংখ্য সুউচ্চ বৃক্ষ, লতা গুল্ম ও প্রাকৃতিক ঝোপের কারণে বনটি চিরহরিৎ রূপ পেয়েছে। বন্যপ্রাণীর নিরাপদ বিচরণ ক্ষেত্রও হয়ে উঠেছে প্রায় ২শ বছরের পুরনো এই বন।

বন রক্ষা পাওয়ায় পুরো জনপদের জন্য তা আশীর্বাদ হয়ে উঠেছে! পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের আওতাধীন পাবলাখালী রেঞ্জ ও স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষ প্রায় ২শ বছরের পুরনো এই বন রক্ষায় কাজ করছে।  

পুরো বনজুড়ে চিরহরিৎ উদ্ভিদের প্রাধান্য। সম্প্রতি পাবলাখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও পাবলাখালী গেম সেঞ্চুয়ারি রেঞ্জ ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়। শীতের শুষ্ক মৌসুমেও পুরো বন সবুজ হয়ে উঠেছে। দৃষ্টিসীমাজুড়ে নানা প্রজাতির চিরহরিৎ বৃক্ষের সমাহার। বন টিকে থাকার পিছনে বন বিভাগের পাশাপাশি বড় ভূমিকা পালন করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা।

বন বিভাগের নিয়মিত নজরদারি, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে বন রক্ষার গুরুত্ব উপলব্ধি বৃদ্ধি পাওয়া, বনের ভেতরে বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞাসহ একাধিক উদ্যোগ নেওয়ার কারণে পাবলাখালী অভয়ারণ্য চিরহরিৎ রূপ পেয়েছে।

বনের ভেতরে চলতে চলতে সারোয়াতলী ইউনিয়নের বাসিন্দা সূর্যলাল চাকমার সঙ্গে কথা হয়। তার বয়স ৫০ ছুঁইছুঁই। তিনি জানান, আমি ছোটবেলা থেকে বনটি দেখে আসছি। ছোটবেলায় বনের ভেতরে যে বৃক্ষগুলো দেখেছি সেগুলো এখনো রয়েছে। দিনে দিনে গাছগুলো উঁচু হয়েছে। এখানে অসংখ্য বড় বড় গাছ রয়েছে। বাইরে থেকে কোনো বহিরাগত গাছ কাটার জন্য প্রবেশ করতে পারে না।

স্থানীয়রাও রিজার্ভ ফরেস্ট থেকে কখনোই গাছ কাটে না। ‘বন না থাকলে ঝিরিতে পানিও থাকবে না’ এটি এখানকার মানুষ বিশ্বাস করে। ফলে কেউ গাছ কাটে না এবং অন্যদেরও কাটতে দেয় না। পাবলাখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য ও পাবলাখালী গেম সেঞ্চুয়ারি রেঞ্জে সেগুন, গর্জন, গামার, সিভিট, লম্বু, তেলসুর, চাপালিশ, জলপাই, উড়ি আম, খুদে জাম, হরীতকী, বহেড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ দেখা গেছে।

পাবলাখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য রেঞ্জে বন রক্ষায় নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছে রিকো চাকমা, অভিজিৎ চাকমা, জহরুল লাল রুদ্রসহ ৬ বনকর্মী। তারা জানান, আমরা নিয়মিত বন রক্ষায় কাজ করি। শিফট ভিত্তিক বনের ভেতরে টহল দেই। বন রক্ষায় স্থানীয় মানুষেরাও আমাদের সহযোগিতা করে। বনে টহল দেওয়ার সময় আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে করে নিয়ে যাই। বনের শতবর্ষী বৃক্ষ যাতে কেউ কাটতে না পারে সেজন্য আমরা সতর্ক থাকি।

পাবলাখালী রেঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সজীব মজুমদার জানান, গেম সেঞ্চুয়ারি বলতে বোঝায়- একটি নির্দিষ্ট বন এলাকা যে সর্বসাধারণের প্রবেশ অধিকার সংরক্ষিত। বন্যপ্রাণী সকল নিরাপদে বেড়ে উঠবে এবং বন্যপ্রাণীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা যাবে। মূলত বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আবাসস্থল। পাবলাখালীতে আমরা সেটা করতে পেরেছি।

বনকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও স্থানীয় পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর সহায়তায় পাবলাখালী অভয়ারণ্য সমৃদ্ধ হয়েছে। এছাড়া বনে  মাতৃবৃক্ষ টিকে থাকায় এটি বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। মায়া হরিণ, ভল্লুক, অজগরসহ নানান প্রজাতির সাপ, বন মোরগ, শূকর, ময়না, টিয়াসহ নানান প্রজাতির পাখি দেখা যায়। তবে বন রক্ষায় জনবল অপ্রতুল।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা অজিত কুমার রুদ্র জানান, পাবলাখালী গেম সেঞ্চুয়ারি রেঞ্জ ও পাবলাখালী বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য পুরোটাই সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এটি রক্ষায় একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে বনের ফাঁকা অংশে বৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে।

২০২০-২১ অর্থবছরে প্রাকৃতিক পুনর্জন্ম সহায়তাকরণ প্রকল্পের আওতায় ২০ হেক্টর জমিতে দশ হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। এছাড়া বন রক্ষায় ২০ বছর মেয়াদি ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যা খসড়া পর্যায়ে রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে বন আরও নিরাপদ হয়ে উঠবে। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫