মানুষের জীবনমান পাল্টে দিয়েছে নৌবন্দর

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১২ মার্চ ২০২৩, ০৯:১১

আশুগঞ্জ নদীবন্দর। ছবি: প্রতিনিধি
বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও সারকারখানার জন্য সারাদেশে সুপরিচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলা। প্রতিদিন আশুগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হচ্ছে প্রায় ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। আর দেশের অন্যতম ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান আশুগঞ্জ সারকারখানা থেকে সার যাচ্ছে আওতাভুক্ত সাত জেলায়। তবে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যের কারণে আশুগঞ্জ এখন হয়ে উঠেছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক শহর।
মেঘনা নদীর তীরের এই শহর এখন পুরো জেলার অর্থনীতির লাইফলাইন হয়ে দাঁড়িয়েছে। মূলত নদীবন্দরের কারণেই ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসার লাভ করেছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এসব ব্যবসায় প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে ৫০ কোটি টাকারও বেশি। আর কর্মসংস্থান হয়েছে অন্তত ১৫ হাজার মানুষের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৬৭ দশমিক ৫৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের আশুগঞ্জ উপজেলাটি চট্টগ্রাম বিভাগের সবচেয়ে ছোট উপজেলা। এই উপজেলার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া মেঘনা নদী ঘিরে গড়ে ওঠা নৌবন্দর পাল্টে দিয়েছে অর্থনীতি ও এখানকার মানুষের জীবনমান।
জনশ্রুতি আছে, ১৮৯৮ সালে আশুগঞ্জের গোড়াপত্তন হয়। মেঘনার তীরে পাট এবং আউশ ধান বেচাকেনাকে কেন্দ্র করে গঞ্জ গড়ে ওঠে। সেই থেকেই নামকরণ হয় আশুগঞ্জ। আর এই মেঘনা নদীকে ঘিরে যেসব ব্যবসাকেন্দ্র গড়ে উঠেছে, তার মধ্যে ধান ও চাল অন্যতম। এ দুই ব্যবসায় প্রতিদিন লেনদেন হচ্ছে ১৫ কোটি টাকারও বেশি।
মেঘনার ভিওসি ঘাটে শত বছরেরও বেশি সময় ধরে ধানের বাজার বসছে। ধানের এই বাজারকে দেশের পূর্বাঞ্চলের সবচেয়ে বড় মোকাম ধরা হয়। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ছাড়াও আশপাশের অন্তত ৭ জেলার কৃষকের ধান মোকামে নিয়ে আসেন বেপারীরা।
এছাড়া ধানের মোকাম ঘিরে আশুগঞ্জে সারাবছরই জমজমাট থাকে চালের ব্যবসা। জেলায় চালকল আছে প্রায় দুইশ। এর অর্ধেকেরও বেশি আশুগঞ্জে। এসব চালকল থেকে প্রতিদিন ১০ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের চাল বাজারজাত হয় দেশের বিভিন্ন স্থানে। আর চালকলগুলোতে কর্মসংস্থান হয়েছে ১০ থেকে ১২ হাজার মানুষের।
আশুগঞ্জ উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সদস্য হাসান ইমরান বলেন, ধানের মোকাম ঘিরে আমাদের চালের ব্যবসাও ভালো চলে। প্রতিদিন অন্তত ১০ কোটি টাকার চাল ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত হয়। সরকারের সহযোগিতা এবং ব্যাংকগুলো যদি সহজ শর্তে ঋণ দেয়, তাহলে ধান-চালের ব্যবসা আরও প্রসারিত হবে। পাশাপাশি আরও বহু মানুষের কর্মের সংস্থান করা যাবে।
আশুগঞ্জ শহর শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি গোলাম হোসেন বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো হওয়ায় আশুগঞ্জ এখন পুরো জেলার ব্যবসা কেন্দ্র। প্রতিদিন এখানে বিভিন্ন ব্যবসায় লেনদেন হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা। বহু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সবকিছুই হয়েছে নৌবন্দরের কারণে। তাই নৌবন্দরটির যদি অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা যায়, তাহলে বাণিজ্য বেড়ে দ্বিগুণ হবে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ ও ভৈরববাজার নদীবন্দরের উপ-পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, আশুগঞ্জে একটি কন্টেইনার টার্মিনাল পোর্ট করা হচ্ছে। এ পোর্ট থেকে সরাসরি মোংলা এবং চট্টগ্রাম থেকে অভ্যন্তরীণ পথে কন্টেইনারগুলো আশুগঞ্জে আসবে। এখানে জেটি যেমন থাকবে, তেমনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে পণ্য ওঠানামার সুবিধাও থাকবে।