সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শতভাগ বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা থাকলেও সুনামগঞ্জে বাঁধের কাজ সম্পূর্ণ শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে ৮০ ভাগ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধের কাজ হয়েছে বলে দাবি করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার।

কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি সদস্য বিজন সেন রায়সহ হাওর পাড়ের কৃষক ও সচেতন মানুষজন বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন সর্বোচ্চ ৪০-৪৫ ভাগ কাজ হয়েছে। অনেক বাঁধে এখনো মাটির কাজই শেষ হয়নি। তাই লাখ লাখ কৃষকের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।

কাবিটা নীতিমালা-২০১৭ অনুসারে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রাক্কলন শেষ করে ১৫ ডিসেম্বর ফসল রক্ষায় বাঁধের কাজ শুরু এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি শেষ করার কথা। কিন্তু নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে চলতি বছরে ১১ জানুয়ারির পর পিআইসি ঘোষণা করে পাউবো। এর ফলে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করার সরকারি নির্দেশ থাকলে তা হয়নি।

পাউবো সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে সুনামগঞ্জের ১২টি উপজেলায় ১ হাজার ৭৮টি প্রকল্পে ২০৮ কোটি টাকা বাঁধের কাজে বরাদ্দ রয়েছে। বাঁধের কাজ চলছে। হাওরে ১ হাজার ৭৮টি ফসল রক্ষা বাঁধের মধ্যে ৭৯৩টি বাঁধ, ২১৮টি ক্লোজারের মধ্যে ১৯৩টি ক্লোজারের মাটি ফেলার কাজ শেষ হয়েছে। এ পর্যন্ত বরাদ্দের ১০০ কোটি টাকা ছাড় হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি দ্রুত দ্বিতীয় কিস্তি ও তৃতীয় কিস্তির বিলের টাকা পেয়ে যাবে।

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের তাহিরপুর উপজেলা শাখার নেতা তোজাম্মিল হক নাসরুম জানান, এবারও তাহিরপুরে গুরুত্বপূর্ণ বাঁধের কাজে ঢিলেমি লক্ষ করা গেছে। পাউবো বরাবরই নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করে না। সঠিক সময়ে হাওর প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় তড়িঘড়ি করে বাঁধের কাজ করতে গিয়ে প্রতিটি বাঁধই ঝুঁকিপূর্ণ ও দুর্বল হয়। 

তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. হাসান উদ দৌলা বলেন, চলতি মৌসুমে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে ১৭ হাজার ৩৯৩ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে ৮০ হাজার মেট্রিক টনের বেশি চাল উৎপাদন হবে। এর মূল্য ২৪৪ কোটি ৮০ লাখ টাকার বেশি।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুপ্রভাত চাকমা জানান, আমি সরেজমিন বিভিন্ন হাওরের বাঁধের কাজ পরিদর্শনে গিয়ে দ্রুত কাজ শেষ করার জন্য তাগিদ দিচ্ছি। বাঁধের কাজ প্রায় শেষ পথে। যারা সরকারি নীতিমালা অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী জানান, যারা বাঁধ নির্মাণের সঙ্গে জড়িত তারা বলেছেন নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই করতে পারবে। অন্যথায় কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।