-6417ee5376bd3.jpg)
বেতবাড়ি মাঝির ঘাট এতিমখানা। ছবি: সংগৃহীত
এতিমখানায় কাগজে কলমে এতিম শিক্ষার্থীদের নাম থাকলেও বাস্তবে রয়েছে ভিন্নতা। মানুষের আবেগ অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে এতিমদের নামে সরকারের দেওয়া বরাদ্দের কোটি কোটি টাকা কর্মকর্তাদের যোগসাজশে করা হচ্ছে লোপাট। ময়মনসিংহ জেলার ৮২টি বেসরকারি এতিমখানায় একই চিত্র।
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার পয়ারকান্দি এলাকায় ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হামিদা সুলতানা এতিমখানা। সম্প্রতি সন্ধ্যার পর এতিমখানাটিতে গিয়ে পাওয়া যায় ১১ জন ছাত্র। এর মধ্যে দুজনের বাবা নেই। বাকিরা স্কুলের পাশাপাশি এতিমখানায় আরবি পড়ছেন। অথচ ছয় মাস অন্তর অন্তর ২৮ জন এতিমের নাম দিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তোলা হচ্ছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। এসব বিষয়ে সঠিক কোনো উত্তর নেই প্রতিষ্ঠান পরিচালকদের।
এতিমখানার শিক্ষক মাওলানা শহীদুল ইসলাম বলেন, আমরা ২৮ জন এতিম ছাত্রের বরাদ্দ পাই। এর ডাবল এতিম তো দূরের কথা অর্ধেকও নেই। তবে নিয়ম অনুযায়ী সেটি ঠিক নয়। আমরা গরিব অসহায় ছাত্রের পেছনেই টাকা খরচ করছি।
একই অবস্থা ফুলবাড়িয়ার জামিয়া আরাবিয়া বাহ্রুল উলূম মাদ্রাসা ও ভালুকজান বাজার এতিমখানার। সরকারিভাবে ১৬ জনের টাকা উত্তোলন করলেও বাস্তবে তিনজন ছাত্রের দেখা মেলে। তাও আবার তারা এতিম নন।
এই এতিমখানার সাধারণ সম্পাদক আবু হানিফা নোমান বলেন, আমাদের মাদ্রাসাসহ তিনটি বিভাগ চালু। বেশ কয়েকটি রুমও আছে। যেখানে এতিমরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। সমাজসেবা অধিদপ্তর মনিটরিং করেই আমাদের বরাদ্দ দেয়। আমরা অন্যদের মতো ভুয়া না। তবে তিনি কোনো এতিমদের তালিকাও দেখাননি।
বেতবাড়ি মাঝির ঘাট এতিমখানার সাধারণ সম্পাদক আলহাজ গিয়াস উদ্দিন বলেন, প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর ২ লাখ ২৮ হাজার টাকা উত্তোলন করে এতিমদের খাওয়া বাবদই খরচ করে থাকি। মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার কথা জানিয়ে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আ. কাইয়ূম বলেন, সরকারের নিয়ম অনুযায়ী প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের মোট এতিমের অর্ধেকের প্রত্যেকজনকে প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা করে সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়।
এই টাকাটা ছয় মাস পরপর প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটি উত্তোলন করে। এই হিসাবে গত ২০২১-২২ অর্থবছরে দ্বিতীয় কিস্তিতে ময়মনসিংহ জেলায় ১ হাজার ৭৭৩ জন এতিমের নামে ক্যাপিটেশন গ্র্যান্ট বরাদ্দ ও মঞ্জুর করা হয়। উত্তোলন করা হয়েছে ২ কোটি ১২ লাখ ৭৬ হাজার টাকা। গত বছরে প্রায় সাড়ে ৪ কোটি টাকা এতিমখানায় সরকারি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সমাজসেবা কার্যালয়ের একার পক্ষে সেগুলো মনিটর করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়।