সুলভ মূল্যের মাংস পাচ্ছে না রাজধানীর বাইরের মানুষ

খান রুবেল, বরিশাল
প্রকাশ: ২৫ মার্চ ২০২৩, ১৮:৪৯

গরুর মাংস। ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষে রাজধানীর ২০টি স্থানে ‘সুলভ’ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি শুরু করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর প্রাঙ্গণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
আগামী ২৮ রমজান পর্যন্ত চলবে এই কার্যক্রম। তবে এ সুযোগ ঢাকার বাইরের মানুষের জন্য না রাখায় ক্ষোভ জানিয়েছে বরিশালের মানুষ। তাদের প্রশ্ন, সরকারি এই সুযোগ শুধু ঢাকায় কেন? অন্য অঞ্চলের মানুষ কী দোষ করলো?
নগরীর চাঁদমারী বঙ্গবন্ধু কলোনির বাসিন্দা দিনমজুর আলতাফ হোসেন বলেন, ঢাকায় বড়লোকেরা থাকে। তাদের টাকা আছে। আমরা যারা বরিশালে থাকি, দিনমজুরী করি তারা দিন আনি দিন খাই। টিভিতে দেখেছি ঢাকায় রোজার মাসে কম টাকায় মাংস, ডিম, দুধ বিক্রি করছে সরকার। ঢাকার মানুষ যদি কম টাকায় কিনতে পারে, তাহলে আমারা কেন পারব না?
জানা গেছে, রাজধানীর ২০টি পয়েন্টে শুরু হওয়া ‘সুলভ’ মূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রমে গরুর মাংস প্রতি কেজি ৬৪০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৯৪০, ড্রেসড ব্রয়লার প্রতি কেজি ২৪০, দুধ প্রতি লিটার ৮০ এবং ডিম প্রতিটি ১০ টাকা দামে বিক্রি করা হচ্ছে।
রমজান মাসে মাংস, দুধ, ডিমের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখা এবং পুষ্টির চাহিদা সহজলভ্য করতে ব্যবসায়ী, উৎপাদনকারী ও সাপ্লাই চেইন সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঙ্গে নিয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এ ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র চালু করেছে। এতে সহযোগিতা করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রবর্তী বলেন, দেশের প্রতিটি জেলায় নির্দিষ্ট স্থানে দোকান বসিয়ে ‘সুলভ’ মূল্যে পণ্য সামগ্রী বিক্রি কার্যক্রম শুরু করা বাসদের দীর্ঘ দিনের দাবি। সরকার এ কার্যক্রম শুরু করেছে সেটা ভালো খবর। এর সাথে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাও জোরদার করতে হবে।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র ঢাকার কয়েকটি স্থানে এই কার্যক্রম শুরু করে বাজার সিন্ডিকেট ঠেকানো যাবে না। তাছাড়া শুধুমাত্র ঢাকায় এই কার্যক্রম শুরু করা মানে দেশের মানুষের মধ্যে বৈষম্যের সৃষ্টি করা। তাই দাবি থাকবে দেশের প্রতিটি জেলায় সরকারিভাবে এই কার্যক্রম শুরু করা হোক। তাছাড়া শুধুমাত্র দুধ, ডিম ও মাংস বিক্রি করলেই হবে না, এর সাথে চাল, ডাল, চিনি, তেলসহ সবধরনের পণ্য সামগ্রী বিক্রির ব্যবস্থা রাখতে হবে।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক গাজী আনোয়ার হোসাইন বলেন, আমি মনে করি এটা একটা স্ট্যান্ডবাজি। কারণ কয়েকদিন ঢাকায় এই কার্যক্রম চলবে তার পরে আর কোন খবর থাকবে না। বর্তমানে এটাই চলছে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করতে পারি সরকারের যদি এরকম ভালো উদ্দেশ্য থেকে থাকে তাহলে এটা বিভাগীয় শহরগুলোতে করলে ভালো হয়। বরিশালে এই কার্যক্রম শুরু করা হলে এতে অন্তত নিম্ন আয়ের মানুষ কিছুদিন তো উপকার পাবে।
বরিশাল জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নুরুল আলম বলেন, ঢাকায় সুলভ মূল্যে মাংস, ডিম এবং দুধ বিক্রি কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। তবে বরিশালে এই কার্যক্রম শুরুর বিষয়ে এখনো কোন দিক নির্দেশনা আমাদের কাছে আসেনি।
প্রসঙ্গত, গত রোজায় গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৮০০, ড্রেসড ব্রয়লার মাংস প্রতি কেজি ২০০, পাস্তুরিত তরল দুধ প্রতি লিটার ৬০ এবং ডিম প্রতি হালি ৩০ টাকায় বিক্রি করেছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। এবার দ্বিতীয়বারের মতো ঢাকায় এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।