
পর্যাপ্ত পানি না ওঠার কারণে মানুষ নানা দুর্ভোগে রয়েছেন। ছবি: সংগৃহীত
যশোর সদর উপজেলার চান্দুটিয়া গ্রামের বাসিন্দা বাবুর আলী। গত ১০ দিন ধরে তার বাড়ির টিউবওয়েলে ঠিকমতো পানি উঠছে না। একই গ্রামের আবুল কালাম জানান, টিউবওয়েল চেপে এক বালতি পানি তুলতে গিয়ে যেন জীবন যায় যায়। বাড়ির পাশের মাঠের স্যালোমেশিনের পানি দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিচ্ছেন।
টিউবওয়েলে পর্যাপ্ত পানি না ওঠার কারণে মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এদিকে শ্যালোমেশিনেও কম পরিমাণে পানি উঠছে। ৪ লিটার তেল ব্যয় হলেও আড়াই বিঘা ধানের আবাদি জমি ভেজানো সম্ভব হয়নি। ফলে চাষিরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি, ছাতিয়ানতলা, খিতিবদিয়া, বাদিয়াটোলা, ঝাউদিয়া, বাগডাঙ্গা, দৌগাছিয়া, সাজিয়ালী, কমলাপুর, গোবিলা, জগহাটি, আব্দুলপুর, পোলতাডাঙ্গা, চান্দুটিয়া, আরিচপুর, দৌলতদিহি, কাশিমপুর, যোগীপাড়া, চৌগাছা উপজেলার ফুলশারা, বাড়িয়ালী, আফরাসহ বিভিন্ন গ্রামের টিউবওয়েলে পর্যাপ্ত পানি না ওঠার কারণে মানুষ নানা দুর্ভোগে রয়েছেন।
যশোর বিএডিসির (সেচ) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল রশিদ জানান, এবার বৃষ্টিপাত নেই বললেই চলে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ৩০ ফুট নিচে নেমে গেছে। বিগত বছরের এপ্রিল থেকে পানির স্তর নিচে নেমেছে। কিন্তু এবার মার্চের শুরুতেই এমন অবস্থা দেখা দিয়েছে। এতে কৃষকের সেচ খরচ বেড়েছে।
প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল রশিদ জানান, যশোর জেলায় গভীর নলকূপ রয়েছে ১ হাজার ৮৬৭টি। এসব নলকূপ দিয়ে ২৫ হাজার ২২৩ হেক্টর জমিতে পানি দেয়া হয়। আর শ্যালো টিউবওয়েল রয়েছে ৬৩ হাজার ৭৯৩টি। যা দিয়ে ১ লাখ ২৩ হাজার ৪৮২ হেক্টর জমিতে সেচ কাজ করা হয়।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদ পারভেজ জানান, জেলায় ২৪ হাজার ৩২৩টি অগভীর নলকূপ রয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী যশোর সদরে পানির স্তর ৩৫ ফুট নিচে চলে গেছে। ফলে অগভীর নলক‚পগুলো অচল প্রায়। বর্তমানে সাবমারসিবল পাম্প ও তারা টিউবওয়েলে কিছুটা স্বাভাবিকভাবে পানি উঠছে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাইবুর রহমান মোল্যা জানান, বৃষ্টিপাত না হওয়া ও অপরিকল্পিত সাবমারসিবল পাম্প স্থাপনে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামিয়ে দিচ্ছে।
সাধারণত পানির স্তর ২৬ ফুটের নিচে নামলে হস্তচালিত নলকূপ থেকে পানি ওঠে না। আর যদি ৩০ ফুটের নিচে যায় তাহলে বাড়িতে মোটর দিয়ে পানি তোলাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। এভাবে ভূগর্ভের পানির স্তর খালি হয়ে পড়লে তা পূরণে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে।