Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এজেন্ট

Icon

রাজশাহী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ২৮ মার্চ ২০২৩, ২০:০৩

গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে উধাও ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এজেন্ট

ভুক্তভোগী গ্রাহকরা টাকা পাওয়ার দাবিতে শাখাটির সামনে অবস্থান করেন। ছবি: প্রতিনিধি

রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার মৌগাছি বাজারে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট মেসার্স সরকার ফার্মেসী গ্রাহকের প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা না করে পালিয়ে গেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বিক্ষুব্ধ গ্রাহকরা বলছেন, এজেন্ট শাহিনের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাত, লাখ টাকায় প্রতিদিন দুই হাজার টাকা সুদ গ্রহণ, গ্রাহক হয়রানি ও সুদের টাকা উঠাতে আদালতে মামলা করে ব্যবসায়ীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিসাধন করেছেন। সুদের টাকা দিতে না পেরে এলাকা ও ব্যবসা ছেড়েছেন অনেক ব্যবসায়ী এরকম অভিযোগও রয়েছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি ও ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালেও কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। 

আজ মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) সকালে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা টাকা পাওয়ার দাবিতে শাখাটির সামনে অবস্থান করেন। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে ব্যাংকের গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে মোহনপুর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবেশ শান্ত করেন। 

ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এজেন্ট মেসার্স সরকার ফার্মেসীর মালিক উপজেলার বাটুপাড়া গ্রামের ইদ্রিস সরকারের ছেলে শাহিন আলম। বর্তমানে সে ও তার ম্যানেজার খোরশেদ গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। 

এজেন্ট ব্যাংকের ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, ব্যাংক হিসাবে টাকা জমা দেয়ার রসিদ, কারেন্ট বিল পরিশোধের রসিদ দিলেও সেই অর্থ জমা করেননি এজেন্ট ব্যাংকের মালিক শাহিন ও ম্যানেজার খোরশেদ। একারণে বিপাকে পড়েছেন গ্রাহকরা। টাকা পাওনার তালিকায় একজন ভিক্ষুকও রয়েছেন।

বিক্ষোভরত গ্রাহকরা বলেন, নুড়িয়াক্ষেত্র গ্রামের মুজাহার আলী গত ১৬ মার্চ কৃষি ব্যাংক থেকে টাকা তুলে করে মৌগাছি বাজারে ডাচ্ বাংলা ব্যাংক এজেন্ট শাখায় ৫০ হাজার টাকা জমা দেন। কিন্তু পরদিন সেই টাকা তুলতে গেলে তিনি জানতে পারেন তার একাউন্টে কোন টাকা জমা নাই। হরিফলা গ্রামের মোস্তফা তার ব্যাংক হিসাবে ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা জমা করে পরবর্তীতে ৮০ হাজার টাকা তোলেন। বাকি ৯০ হাজার টাকা তুলতে গিয়ে তার একাউন্টে মাত্র ১০ হাজার টাকা জমা আছে বলে জানতে পারেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে দিনের পর দিন তালবাহানা করতে থাকেক শাখার মালিক শাহিন ও তার ম্যানেজার।

আরেক ভুক্তভোগী কালিগ্রামের মেহের আলী ৮ লাখ টাকা একাউন্টে জমা করেন। কিন্তু সেই টাকা জমার রসিদ দিলেও একাউন্টে জমা হয় মাত্র ৫৬ টাকা। 

এদিকল বাটুপাড়া এলাকার হামিদের স্ত্রী অহিজান ভিক্ষাবৃত্তি করে ব্যাংকে রেখেছিলেন ৪৫ হাজার টাকা। তার টাকাটিও হজম করেছেন ব্যাংক এজেন্ট। 

এছাড়া বাটুপাড়া গ্রামের শিউলি বেগম জমা রাখেন ৯০ হাজার। উত্তোলন করেন মাত্র ৩৫ হাজার টাকা। পরবর্তীতে ৫৫ হাজার টাকা তুলতে গিয়ে একাউন্টে মাত্র ৫ হাজার টাকা আছে বলে জানতে পারেন। একারণে তার সংসার ভাঙার উপক্রম হয়েছে। তিনি আর টাকা ফেরত পাননি। মৌগাছি গ্রামের রেজিয়া বিবি ৫৬ হাজার টাকা জমা রেখে ৫ হাজার টাকা উত্তোলন করেন। বাকি ৫১ হাজার টাকার কোন হদিস নাই। বাটুপাড়া গ্রামের যাদু বেগম ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা জমা করেন; কিন্তু তার একাউন্টে কোন টাকাই জমা হয়নি।  হরিহরপাড়ার মিনারুল জমা রাখেন ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা কিন্তু কয়দিন পর উত্তোলন করতে গিয়ে দেখেন তার একাউন্টে কোন টাকা নাই।

নুড়িয়াক্ষেত্র গ্রামের অনেক বিদ্যুৎ গ্রাহক বিল পরিশোধ করতে টাকা জমা দেন এ শাখায়। গ্রাহককে বিদ্যুৎ বিল জমার রশিদ দিলেও বিল পরিশোধ না করায় বৈদ্যুতিক লাইন বিচ্ছিন্ন করেছেন বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বলেন যদি ব্যাংক কর্তৃপক্ষ আমাদের টাকার ব্যবস্থা না করে দেন তাহলে আমরা আন্দোলনসহ কঠোর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।

এব্যাপারে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এজেন্ট মেসার্স সরকার ফার্মেসীর মালিক শাহিন আলমকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

মৌগাছি ইউপি চেয়ারম্যান আল আমিন বিশ্বাস বলেন, এজেন্ট ব্যাংকের এই শাখা খোলার পর জনগণ হাতের কাছে সেবা পাওয়ায় বিশ্বাস নিয়ে টাকা পয়সা সেখানে জমা রাখে। এসুযোগকে কাজে লাগিয়ে এজেন্ট শাহিন পান ব্যবসায়ীদের চড়া সুদে টাকা দেন। গ্রাহকের টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ পেয়েছি। সে স্থানীয় না। তার সুদের ব্যবসার ব্যাপারে অনেকবার বিচার করেছি। সে স্থানীয় আদালতকে মানে না। আমার ভোটারদের টাকা আত্মসাত করার কারণে তাকে ছাড় দেওয়া হবে না। 

এবিষয়ে মোহনপুর উপজেলার এই ব্যাংকের সিনিয়র এরিয়া ম্যানেজার তাপস কুমার দাশকে ফোন করা হলে তিনি এবিষয়ে কিছুই জানেন না বলে ফোনটি কেটে দেন। পরে তার নাম্বারে যোগাযোগ করলে তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।

মোহনপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সেলিম বাদশাহ বলেন, মৌগাছি বাজারে ডাচ্ বাংলা এজেন্ট শাখায় প্রতারিত গ্রাহকরা জড়ো হওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শাখাটি তালাবদ্ধ পায়। এসময় মালিক পক্ষের কাউকে পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫