সক্রিয় ১০ সশস্ত্র গোষ্ঠী
নাশকতা বাড়ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৩, ১০:৫৭

রোহিঙ্গা ক্যাম্প। ছবি: প্রতিনিধি
কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারে মরিয়া হয়ে উঠেছে সক্রিয় ১০টি সশস্ত্র গোষ্ঠী। ক্যাম্পভিত্তিক মাদক চোরাচালান, মানব পাচার, হাট-বাজারে চাঁদাবাজি, অপহরণ-মুক্তিপণ আদায়-এসব নিয়ন্ত্রণে হামলা, খুন, অগ্নিসন্ত্রাস মিলে অস্থির হয়ে উঠেছে ক্যাম্প।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্য মতে, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১২৯টি হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আজ পর্যন্ত ১৮টি হত্যাকাণ্ড হলো। আর চলতি মার্চের ২১ দিনে খুন হয়েছেন ৯ জন। এসব ঘটনায় নিহতদের বেশিরভাগ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কমিউনিটি নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক।
সম্প্রতি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এক প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অস্থিরতার জন্য আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিসহ (আরসা) তিনটি সন্ত্রাসী গ্রুপ ও সাতটি ডাকাত দল রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকায় সক্রিয় রয়েছে বলে জানা যায়। এসব সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্বারা আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যাসহ নানা অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে।
উখিয়ার ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক ছৈয়দ হারুন অর রশিদ বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে কয়েকটি দুষ্কৃতিকারী দল সক্রিয় রয়েছে। আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একের পর এক হত্যাকাণ্ড হচ্ছে। সাধারণ রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসার সন্ত্রাসীরা এ ঘটনার নেপথ্যে রয়েছে বলে দাবি করে আসছে। বিষয়টি নিয়ে এপিবিএন তৎপর রয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে।
এদিকে রোহিঙ্গা নেতাদের দাবি, এসব ঘটনার পেছনে কথিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো জড়িত। আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, দুটি কারণে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কমিউনিটি নেতাদের খুন করছে সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো। প্রথমত কথিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর ব্যাপারে কেউ তথ্য দিলে সেটি তারা জেনে যায়। তারপর নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে তথ্যদাতাকে ধরে গুলি ও কুপিয়ে হত্যা করছে।
কারণ ক্যাম্পে তাদের অসংখ্য নেটওয়ার্ক রয়েছে। দ্বিতীয়ত আগে অনেক কমিউনিটি নেতা কথিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সহযোগিতা করত। কিন্তু এখন না করাতে ‘মুনাফিক’ হয়ে গেছে বলে টার্গেট করে হত্যা করছে।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান বলেন, ক্যাম্পে তিন ব্যাটালিয়ন এপিবিএন রয়েছে। সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছে। তারা প্রতিনিয়ত কাজ করছেন। আমরা তাদের সঙ্গে সমন্বয় করছি। এছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কাজ করছে। তারপরও কিছু ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনা নিয়ে আমরা চিন্তিত। সবাই চেষ্টা করছি, কীভাবে ক্যাম্পে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বে থাকা ৮ এপিবিএনের অধিনায়ক (অতিরিক্ত ডিআইজি) মো. আমির জাফর বলেন, ক্যাম্পে বেশ কিছু গ্রুপ কাজ করে। যাদের কাজ হচ্ছে মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, অপহরণসহ নানা অপরাধ নিয়ন্ত্রণ। এসব নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে আধিপত্য বিস্তার একটা বিষয় থাকে। এরা নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে এসব অপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হচ্ছে।