Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

মশার রাজত্বে অসহায় নগরবাসী

Icon

খান রুবেল, বরিশাল

প্রকাশ: ৩১ মার্চ ২০২৩, ১৪:৫৮

মশার রাজত্বে অসহায় নগরবাসী

মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার হলেও মশার বংশবিস্তারে ক্ষেত্রগুলো নষ্ট হয়নি। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি

বরিশাল নগরীতে মশক নিধন কার্যক্রমে সিটি কর্পোরেশনের গতি ফিরেছে কয়েকগুণ। এজন্য বাড়ানো হয়েছে নিধন যন্ত্র এবং ওষুধের পরিমাণ। বেড়েছে মাসিক খরচও। কিন্তু এতো কিছুর পরেও নিধন হচ্ছে না মশা। বরং মানুষের স্বাভাবিক জীবনে ঘরে-বাইরে সবখানে জ্বালা বাড়াচ্ছে মশা। এক কথায় মশার রাজত্বে অসহায় হয়ে পড়েছে নগরবাসী, এমনটাই দাবি তাদের।

তবে সিটি কর্পোরেশন বলছে, মশক নিধন কার্যক্রম জোরদার হলেও মশার বংশবিস্তারে ক্ষেত্রগুলো নষ্ট হয়নি। জমে থাকা পানি, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং পানির প্রবাহ না থাকায় নিধনের থেকে বিস্তার ঘটছে বেশি।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, ৫৮ বর্গ কিলোমিটার বরিশাল নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। বর্তমান সময়ে মানুষের যন্ত্রণার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘মাশা’। দিনরাত মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে আছে নগরবাসী। ঘরে-বাইরে, মসজিদ-মন্দিরে, বাজার, এমনকি যানবাহনেও মশার উপদ্রব বেড়েছে বহুগুণ।

মশক নিধন কার্যক্রম এবং ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ভেটেরিনারি সার্জন রবিউল ইসলাম জানান, মশন নিধন কার্যক্রম পরিচালনায় সিটি কর্পোরেশনের সক্ষমতা পূর্বের থেকে বহুগুণ বাড়ানো হয়েছে।

বর্তমানে ৩০টি ওয়ার্ডে মশন নিধনে সকাল এবং বিকালে ৬টি টিম নিয়মিত কাজ করছে। এ সংখ্যক টিমে ৭০ জন কর্মী রয়েছে। এরমধ্যে মশক নিধনে ৫টি টিম স্প্রে নিয়ে সকালে এবং একটি ফগার টিমে ১১টি মেশিন নিয়ে বিকালে কাজ করছে।

এই কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে মশক নিধনে স্প্রের ওপর বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি লার্ভিসাইট ওষুধ দিয়ে স্প্রে করে মশার লার্ভগুলো ধ্বংস করতে। এই কার্যক্রম সকালে পরিচালনা করা হয়। এজন্য প্রতিদিন ১৬ লিটার ওষুধ স্প্রে করা হচ্ছে। এটা দিয়ে লার্ভা ধ্বংস করা হলে মশার বিস্তার যেমন কমবে তেমনি বড় মশাও কমে যাবে।

এছাড়া বিকালে একটি ফগার টিম কাজ করে। ১১টি ফগার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন এক একটি ওয়ার্ডে ১৩০ লিটার করে এডালটিসাইট ওষুধ দেয়া হচ্ছে। এই ওষুধের দিয়ে বড় মশা ধ্বংস করা হচ্ছে। যে কারণে নগরীতে মশার উপদ্রোপ অনেক কমেছে।

তবে নগরবাসীর দাবি ভিন্নটা। তারা বলছেন, সিটি কর্পোরেশনের দেয়া ওষুধে নিধন হচ্ছে না মশা। বরং বাইরে ওষুধ দিলে মশাগুলো আশ্রয় নিচ্ছে ঘরের মধ্যে। হুল ফোটাচ্ছে মানুষের শরীরে।

নগরীর পুলিশ লাইন্স রোডের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, মশার উপদ্রোপ বর্তমানে বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই রমজান মাসেও মশার যন্ত্রণায় মানুষ শান্তিতে সেহরি, ইফতার এমনকি রাতে তারাবি নামাজ পর্যন্ত আদায় করতে পারছে না। মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছেন সবাই।

পুলিশ লাইন্স মসজিদের তারাবি নামাজ আদায় করা হুমায়ুন কবির বলেন, এটি একটি সুসজ্জিত মসজিদ। যেখানে এসি চলে। কিন্তু সেখানেও মশা থেকে নিস্তার পাচ্ছি না। মশার কয়েক জ্বালালে তার মধ্যেও মশায় কামড়াচ্ছে।

বান্দরোডের বাসিন্দা আল আমিন বলেন, গোটা নগরজুড়ে মশার রাজত্ব সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও গিয়ে এক মিনিট শান্তিতে দাঁড়াতে পারছি না। চারদিক থেকে মশা ঘিরে ধরছে। কামড়িয়ে রক্ত খাচ্ছে। ঘরের মধ্যে কয়েল জ্বালিয়েও মশা তাড়ানো যাচ্ছে না।

নগরীর পলাশপুরের বাসিন্দা সাগর বলেন, মাঝে মধ্যেই দেখেছি সিটি কর্পোরেশন থেকে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় মশক নিধনে স্প্রে এবং ফগার মেশিন দিয়ে ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। কিন্তু এতে মশা নিধন হচ্ছে না। বরং বাইরের মশাগুলো ফগার মেশিনের ধোয়া এবং শব্দে ঘরের মধ্যে গিয়ে ঢুকছে।

এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. রবিউল ইসলাম বলেন, ওষুধে মশা নিধন হচ্ছে না এটা মানুষের ভুল ধারনা। পূর্বে এমন একটা সমালোচনা ছিল। তবে আমরা প্রমাণ করে দেখিয়েছি যে ওষুধে মশা নিধন হচ্ছে। আমরা মশার ওষুধ দিয়ে মানুষ ডেকে নিয়ে তাদের দেখিয়েছি মশাগুলো কিভাবে মরে পড়ে থাকছে।

মশার উপদ্রবের বিষয়ে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম নিয়মিত চলে। তবে শুধু ওষুধ ছিটিয়ে মশক নিধন সম্ভব নয়। কারণ খাল, পুকুর, ডোবা এবং ড্রেনে পানি প্রবাহ নেই। যে কারণে জমে থাকা পানি নামতে পারছে না। তাই সেখানেই মশার বংশ বিস্তার ঘটছে।

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে নগরীর মধ্যে যেভাবে বাড়ি-ঘর তৈরি হচ্ছে তাতেও মশক নিধন কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিছু কিছু এলাকায় মানুষের হাঁটার জায়গা থাকে না। যে কারণে ওইসব এলাকায় ওষুধ দেয়াও সম্ভব হয় না। আবার বাড়ির আঙিনা পরিষ্কার করা হয় না। ঝোপ-ঝাড়ের মধ্যে মশার বংশ বিস্তার ঘটছে।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস বলেন, আমরা চেষ্টা করছি নগরবাসীকে মশার যন্ত্রণা থেকে রক্ষা করতে। এ কারণে আমাদের মশক নিধনে ফগার এবং স্প্রে বাড়ানো হয়েছে। পূর্বে যেখানে মাত্র ২-৩টি ফগার মেশিন ছিল সেখানে তার সংখ্যা এখন ১১টি। পূর্বে ফগার মেশিনে মাত্র ১৫০ লিটার জ্বালানি তেল লাগতো। এখন প্রতি মাসে এক হাজার লিটারের বেশি তেল লাগছে।

তিনি বলেন, শুধু ওষুধের দিকে তাকিয়ে থাকলেই হবে না। বাড়ি আঙিনাসহ এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। যেসব স্থানে পানি জমে থাকে সেগুলো পরিষ্কার করতে হবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় মশক নিধন কার্যক্রম আরো জোরদার করা সম্ভব বলে জানান এই কর্মকর্তা।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫