ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামগুলোতে গড়ে উঠেছে অবৈধ ছানা তৈরির কারখানা।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার গাজীর বাজার সংলগ্ন রাকড়া গ্রাামে অনুমোদনহীন এসব কারখানার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিয়মিত ছানা তৈরি করে বাজারজাত করা হচ্ছে। আসছে ঈদ উপলক্ষে মিষ্টি জাতীয় খাদ্যের চাহিদা বেশি হওয়ায় এসব কারিগররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। আসল দুধের পরিমাণ কম দিয়ে গুঁড়ো দুধ এবং বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ঘি, ছানা ও এক প্রকার আঠা। এমনকি গরুর গোয়ালের মতো নোংরা পরিবেশে তৈরি এসব ছানা যাচ্ছে ঝিনাইদহ, কালীগঞ্জ, মাগুরা, যশোরসহ আশপাশের নামিদামি মিষ্টির হোটেল গুলোতে। 

রাকড়া গ্রামের গোবিন্দ ঘোষের কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির গোয়াল ঘরে কারখানাটিতে অনুমোদনহীন গুড়ো দুধ দিয়ে চলছে ছানা তৈরির কাজ। গোয়াল ঘরের চালে ঝুলছে অপরিষ্কার কাপড়ে মোড়ানো ছানা।

গোবিন্দ ঘোষের বাড়ির পাশেই তার ভাই জয়দেব ঘোষ বাড়ির গোয়াল ঘরে গড়ে তুলেছে মিনি ছানা তৈরির কারখানা। তিনি দাবি করেন, গুঁড়ো দুধ দিয়ে ছানা তৈরি করেন না। স্থানীয় ঘোষদের নিকট থেকে দুধ সংগ্রহ করে সেই দুধ দিয়ে ছানা তৈরি করেন।

একই গ্রামের বাবলু ঘোষের কারখানায় গিয়ে দেখা মেলে গুঁড়ো দুধ এবং ছানা তৈরির বিষাক্ত কেমিক্যালের অস্তিত্ব। তিনি বলেন, সব সময় গুঁড়ো দুধ ব্যবহার করা হয় না। আমন নামের এক প্রকার এক কেজি গুঁড়ো দুধের সাথে এক কেজি আসল দুধ দিয়ে ২ কেজি ছানা তৈরি করা যায়। এতে ভালো মুনাফা পাওয়া যায়।

তিনি আরও বলেন, গাভীর দুধ দিয়ে এক কেজি ছানা তৈরি করতে নূন্যতম ৫ কেজি দুধের প্রয়োজন হয়। এতে মুনাফা কম হয়।

গাজীর বাজারে আরেকটি বড়সড় কারখানার মালিক সত্যজিৎ ঘোষের বিরুদ্ধে অভিযোগ তার বাড়ির গোয়ল ঘরে ছানা তৈরির কারখানা স্থাপন রয়েছেন তিনি। যে কারখানায় দীর্ঘদিন ধরে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে, মশা, মাছির, গরুর মল-মূত্রের মধ্যে এবং নোংরা পানি দিয়েই ছানা তৈরি করে এই অঞ্চলের নামিদামি মিষ্টির হোটেলে বিক্রি করে আসছেন।

তাকে ক্ষতিকর কেমিক্যালের ব্যবহারের কথা জিজ্ঞাসা করলে কোন কথা না বলে মাথা নিচু করে থাকেন।

কোলাবাজারের মাইধরপুর রোড়ের পাশে বনের ভেতরে আরেকটি অবৈধ ছানা তৈরির কারখানার সন্ধান মেলে। কারাখানাটি ৪/৫ বছর আগে স্থাপন করেন মাগুরা জেলার বাঘাট এলাকার রিপন ঘোষ।

তার কারখানায় সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছানা তৈরির দুধের ভেতর মশা মাছিতে ভর্তি হয়ে গেছে। ময়লা পানির ভেতর ছানা ভিজিয়ে রাখা হয়েছে। যে পানি দিয়ে অতিরিক্ত দূর্গন্ধ বের হচ্ছে। তিনিও বিষাক্ত কেমিক্যাল ও আসল দুধের পরিমাণ কম দিয়ে অধিকাংশ গুড়ো দুধ দিয়ে নোংরা পরিবেশে তৈরি করছেন ছানা, ঘি এবং এক প্রকার আঠা। যে আঠা তৈরির কোন অনুমোদন নেই। এই আঠা ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে থাকেন। এসব কারখানার মালিকরা বৈধ কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেনি।    

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলা উদ্দিন-আল-আজাদ বলেন, কারখানা গুলোতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহার করে ছানা তৈরি করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গুড়ো দুধ দিয়ে ছানা তৈরি, অস্বাস্থ্যকর ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল ব্যবহার করলে এগুলো বন্ধ করে দেওয়ার জন্য যে সহযোগিতা লাগে আমি করবো।

কালীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ইশরাত জাহান বলেন, অনুমোদনহীন, নোংরা পরিবেশে, গুড়ো দুধ এবং বিষাক্ত কেমিক্যাল দিয়ে ছানা তৈরির কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে অতি দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।