
সুনামগঞ্জের মাছের সুনাম ছড়িয়ে আছে দেশজুড়ে। ছবি: সংগৃহীত
হাওর বেষ্টিত জেলা সুনামগঞ্জ। এ জেলার একটি প্রবাদ আছে-মৎস্য পাথর ধান সুনামগঞ্জের প্রাণ। হাওরের রাজধানী কিংবা মাছের রাজধানী যে নামেই ডাকা হোক না কেন দেশের মিঠা পানির সর্ববৃহৎ জলাধার সুনামগঞ্জ জেলা।
দেশের অন্য কোনো অঞ্চলে মাছ কম-বেশি হলেও হাওরের মৎস্য সম্পদের জন্য এখনো বিখ্যাত এই জেলা। আদিকাল থেকেই সুনামগঞ্জের মাছের সুনাম ছড়িয়ে আছে দেশজুড়ে। আর এই সুনাম এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও চলে গেছে।
হাওর অধ্যুষিত এ জেলায় কলকারখানা না থাকায় প্রাকৃতিক জলজ খাবার খেয়ে বৃষ্টির বিশুদ্ধ পানিতে নদী, বিল ও হাওরে মাছ বেড়ে ওঠে। আর পানি দূষণমুক্ত হওয়ায় এই মাছ খেতে খুবই সুস্বাদু। সুনামগঞ্জে ছোট বড় প্রায় ১ হাজার বিল রয়েছে। যে বিলগুলো থেকে ৯০ হাজার মেট্রিক টন বিভিন্ন প্রজাতির মাছ উৎপাদন হয়। যার বাজারমূল্য ৫ হাজার কোটি টাকা। দেশের ২৬০ প্রজাতির মধ্যে শুধু সুনামগঞ্জের হাওর ও নদীতে ২০০ প্রজাতিরও অধিক মাছ পাওয়া যাচ্ছে।
তাই হাওর ও নদীতে উৎপাদিত এই মাছ স্থানীয়দের আমিষের চাহিদা পূরণ করেই শেষ হয়নি, সুস্বাদু হওয়ায় রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশেই এই মাছের প্রচুর চাহিদাও রয়েছে। এছাড়াও দেশের আমিষের চাহিদা পূরণ করে ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের ৫০ থেকে ৬০টি দেশেও রপ্তানি করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার বড়দৈই বিলে প্রায় ২৫০ জেলে মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত সময় পার করেন। জেলেরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাল দিয়ে মাছ ধরেন। পরে নৌকায় করে সেই মাছ বিলের খলায় (বিলে মাছ রাখার জায়গাকে খলা বলা হয়) নিয়ে আসেন।
জেলেরা প্রায় ২০০ প্রজাতির ভিন্ন ভিন্ন সাইজের মাছ ধরে সাজিয়ে রাখছেন। তার মধ্যে ১০ থেকে ১৫ কেজি ওজনের রুই, বোয়াল, কাতলা, গ্রাসকার্প ও কার্পজাতীয় মাছ। একইভাবে চিতল, কালি বাউশ, শোল, গজার, পাবদা, টেংরা, কই, শিং, মাগুরসহ প্রচুর পরিমাণে ছোট মাছ ধরে খলায় থরে থরে সাজিয়ে রাখা হয়। প্রতিদিন সকাল থেকে পরের দিন ভোর পর্যন্ত বিলে এই কর্মযজ্ঞ চলতে থাকে। এই বিল থেকে প্রতিদিন ছোট বড়, মিলিয়ে প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন হয়েছে। যার বাজারমূল্য প্রায় ২৫ কোটি টাকা।
সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জের হাওরগুলোতে দুইভাবে মাছের উৎপাদন হয়, হাওর নদীর মুক্ত জলাশয় এবং ইজারাদারের তত্ত্বাবধানে। সুনামগঞ্জে নদী-খাল ছাড়াও এক হাজারের মতো জলাশয় বা বিল রয়েছে। মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির মাধ্যমে স্থানীয়রা মুক্তজলাশয় ইজারা নেন সরকারের কাছ থেকে।
আর জলাশয়গুলোকে স্থানীয়ভাবে বিল বলা হয়। ইজারাদার প্রতি দুই বা তিন বছর পর পর বিলে মাছ ধরেন। এই দুই তিন বছর হাওরে বিলে পোনা ছাড়া, গাছের ডাল দিয়ে অভয় আশ্রম বানানোসহ প্রাকৃতিকভাবে মাছের রক্ষণাবেক্ষণ করেন ইজারাদাররা।
বড়দৈই বিলের ইজারাদার মনোয়ার পীর জানান, আমাদের এই বিলের মাছ দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। দুই থেকে তিন বছর পরপর মাছ ধরার কারণে মাছের সাইজ অনেক বড় হয় এবং গুণগত মানও ভালো হয়।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা প্রশান্ত দে জানান, প্রাকৃতিক জলজ উদ্ভিদ খাওয়া মাছ খেতে খুবই সুস্বাদু। এ জেলার হাওর ও নদীর মাছ ৫০ থেকে ৬০টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে।