
কলাগাছের বাকল থেকে তৈরি সুতা দিয়ে বানানো হয়েছে শাড়ি। ছবি: সংগৃহীত
কলাগাছের বাকল দিয়ে এতদিন বাহারি হস্তশিল্প তৈরি হয়ে আসছিল দেশের বিভিন্ন জায়গায়। এবার বান্দরবানে প্রথমবারের মতো কলাগাছের বাকল থেকে তৈরি করা সুতা দিয়ে বানানো হয়েছে একটি পূর্ণাঙ্গ শাড়ি। প্রথমবার বানানো এ শাড়িটি লম্বায় সাড়ে তেরো হাত এবং প্রস্থ আড়াই হাত।
কলাগাছের সুতা থেকে তৈরি করা বিভিন্ন হস্তশিল্প পাইলট প্রকল্প ধরে এই সাফল্য এসেছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি। তিনি জানান, বান্দরবান জেলায় অসংখ্য কলাগাছ রয়েছে। ফল দেওয়ার পর কলাগাছটি কেটে ফেলে দেওয়া হয়। সেই ফেলে দেওয়া কলাগাছ থেকেই সুতা তৈরি করা হয়। বর্তমানে ‘অপরূপা বান্দরবান’ বান্দরবানের ব্র্যান্ডিং। কেউ যদি আর দাবি না করে তা হলে প্রথমবারের মতো কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরি বান্দরবানেরই ব্র্যান্ডিং হবে।
তবে কলাগাছের বাকল (তন্তু) থেকে শাড়ি তৈরি করা এত সহজ ছিল না। এক বছর আগে থেকেই কলাগাছের বাকল থেকে সুতা তৈরি কার্যক্রম শুরু হয়েছিল। বান্দরবানে জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই এখানকার মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়। কলাগাছের তন্তু থেকে সুতা তৈরি করা হয়। সেই সুতা থেকে পর্দার কাপড়, পাপোশ, ব্যাগ, কলমদানি ও বিভিন্ন হস্তশিল্প তৈরি করার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কলাগাছের সুতা থেকে শাড়ি তৈরি করার।
শাড়ি তৈরি করার জন্য একজন তাঁতশিল্পীকে নিয়ে আসা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি আরও বলেন, মৌলভীবাজার থেকে তাঁত শিল্পী রাঁধাবতী দেবীকে বান্দরবানে নিয়ে আসার পর তিনি মত দিলেন এই সুতা থেকে শাড়ি তৈরি করা সম্ভব। প্রথমে একটি ছোট কাপড় তৈরি করার দায়িত্ব দেওয়া হলে তিনি সফল হলেন। তারপর সুতা প্রস্তুত করে বুনন পর্যন্ত দশ দিনে একটি পূর্ণাঙ্গ শাড়ি তৈরি সম্ভব হয়েছে।
তাঁত শিল্পী রাঁধাবতী দেবী জানান, তিনি সিলেটে সমবায় অফিসে হস্তশিল্প নিয়ে কাজ করতেন। তার এলাকায় যারা মনিপুরী শাড়ি বোনেন তারা তাকে বলেছিলেন এ দায়িত্ব না নিতে। তাদের আশঙ্কা ছিল তিনি ব্যর্থ হবেন কিনা। তিনি এ চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন এবং সফলও হয়েছেন।
তবে কলাগাছের সুতাটি মসৃণ নয়। যার কারণে স্থানীয়ভাবে যতটুকু সম্ভব সুতা মসৃণ ও নরম করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই কলাগাছের সুতাকে কীভাবে আরও মসৃণ ও নরম করা যায় তার জন্য গবেষণা করা দরকার। এ ব্যাপারে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানান জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি।