যশোর সদর উপজেলার চান্দুটিয়ায় সোহেল রানা (৩৫) নামে এক প্রবাসীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার (১২ এপ্রিল) রাতে বুকভরা বাওড়ের পাশে তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত সোহেল রানা হালসা গ্রামের আব্দুর রউফ বিশ্বাসের ছেলে। স্বজনদের অভিযোগ, স্ত্রীর পরকীয়ার জেরে দুর্বৃত্ত ফারাবির নেতৃত্বে সোহেলকে খুন করা হয়েছে। তবে স্ত্রী খুশি মিম দাবি করেছেন, ফারাবি তাকে উত্ত্যক্ত করতো। কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেওয়ায় ফারাবি ক্ষিপ্ত হয়ে সোহেলকে হত্যা করেছে। সোহেল রানার মৃতদেহ যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। সোহেল রানা দুবাই থেকে দ্বিতীয় রমজানে বাড়ি ফিরেছিলেন।

নিহতের ছোট ভাই শাকিল জানান, সোহেল রানা ৪ বছর আগে আলমনগর গ্রামের আব্দুল আলিমের মেয়ে খুশি মিমকে বিয়ে করেন। দাম্পত্য জীবনে বোরহান মাহি নামে আড়াই বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন সোহেল রানা দুবাই চলে যান। স্বামী প্রবাসে থাকার সুযোগে খুশি মিম আলমনগর গ্রামের ফজলুর রহমানের ছেলে ফারাবির সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন।

শাকিল আরো জানান, এরই মধ্যে দ্বিতীয় রমজানে দুবাই থেকে বাড়ি ফেরেন। বুধবার রাতে ভাইপো জিসানকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেল করে শ্বশুরবাড়ি যাচ্ছিলেন সোহেল। এসময় চান্দুটিয়ার বুকভরা বাওড় পাড় সংলগ্ন আলতুর দোকানের দক্ষিণ পাশে পৌঁছালে ফারাবির নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে সোহেল রানাকে এলোপাতাড়ি কোপানো হয়। জিসানের মাধ্যমে খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়। সেখানে চিকিৎসক রাত ৮ টা ৪০ মিনিটের দিকে সোহেলকে মৃত ঘোষণা করেন।

হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক শোভাশিষ রায় জানান, সোহেল রানার শরীরের একাধিক স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে।

ছোট ভাই শাকিল জানান, স্ত্রীর পরকীয়ার কারণে তার ভাইকে পরপারে চলে যেতে হলো। তিনি ভাই খুনের সঠিক বিচার দাবি করেছেন।

এদিকে, নিহতের স্ত্রী খুশি মিম জানান, একই গ্রামে বাড়ি হওয়ায় সুবাদে ফারাবি তার পূর্ব পরিচিত। তার সাথে পরকীয়া সম্পর্ক ছিল না। ফারাবি তাকে বিভিন্ন সময় উত্ত্যক্ত করতো। কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ার জেরে ফারাবি উগ্র হয়ে ওঠে। স্বামী সোহেল রানা বাড়ি ফেরার পর তাকে হুমকি দিয়ে বলে ‘তোকে স্বামীর সংসার করতে দেবো না, তোর স্বামীকে আমি খুন করবো’।

খুশি মিম জানান, তিনি কুপ্রস্তাবে সাড়া না দেয়ায় ফারাবি তার স্বামী সোহেলকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। তার একমাত্র ছেলে এতিম হয়ে গেলো। ফারাবির কঠিন শাস্তির দাবি করেন খুশি মিম।

স্থানীয় একটি সূত্র জানিয়েছে, স্বামী প্রবাসে থাকার সুযোগে খুশি মিম একই গ্রামের ফারাবির সাথে পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়ে। মুঠোফোনে প্রতিনিয়ত তাদের কথা হতো। খুশির পরিকল্পনায় পথের কাটা পরিষ্কার করতে ফারাবি সোহেল রানাকে খুন করেছে। খুশি মিমের মোবাইল ও ফেসবুক আইডি চেক করলে খুনের পরিকল্পনার সত্যতা মিলতে পারে। 

জেলা পুলিশের মিডিয়া সেল থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে চান্দুটিয়া মঠবাড়ির মধ্যবর্তী স্থানে সোহেল রানাকে কুপিয়ে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।