
প্রতীকী ছবি
চুয়াডাঙ্গা শহরের অদূরে ঘোড়ামারা ব্রিজের কাছে একটি মাঠে কাজ করছেন কৃষক বদর উদ্দিন। তিনি তার অর্ধবিঘা জমিতে আখ লাগিয়েছেন। আখের চারপাশে আগাছা জন্মেছে। কিন্তু বেশ কদিন থেকে এ জেলায় তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে সেগুলো পরিষ্কার করার মত কোন শ্রমিক তিনি পাচ্ছেন না। তাই নিরুপায় হয়ে তাকেই কোদাল ধরে আগাছা পরিষ্কার করতে হচ্ছে।
তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, রোদে কাজ করা খুবই কষ্টদায়ক হচ্ছে। কিন্তু করার কিছুই নেই। একটু কাজ করছি, আবার গাছের ছায়ায় এসে বসছি। রোজার মাসে অতি তাপমাত্রার কারণে মাঠে কাজ করা বেশ কষ্টদায়ক হচ্ছে।
ঠিক এমনই কষ্টের কথা জানালেন, শহরের কোর্ট এলাকায় রিকশাচালক সাবান আলী। তিনি বলেন, রোজার মাসে রিকশার ভাড়া একটু কম হয়। সে কারণে রিকশা চালিয়ে সংসার খরচ মেটানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। এরই মধ্যে গরমে আরো অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। ভাড়া একেবারে নেই বললেই চলে।
চুয়াডাঙ্গায় গত ৩ এপ্রিল থেকে দিন জুড়ে টানা তাপ প্রবাহে জনজীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এ জেলায় বর্তমানে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। তীব্র গরমে রোজাদারদের অবস্থাও ওষ্ঠাগত।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা গেছে, খুব সহসায় বৃষ্টি হবে না এ জেলায়। সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে তীব্র তাপমাত্রা অনুভূত হচ্ছে। বেলা যত বাড়ছে রোদের তীব্রতা তত আগুনের ফুলকির মত ঝরছে। বিশেষ করে দুপুরের পর আগুন ঝরা রোদের তেঁজে বাইরে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। এ অবস্থা বিরাজ করছে সূর্য অস্ত যাওয়ার পর্যন্ত।
চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে সবচেয়ে কষ্টে পড়েছে খেটে খাওয়া দিনমজুর, রিকশা-ভ্যান চালক ও কৃষকেরা। তীব্র রোদে মাঠে টিকতে পারছেনা কৃষক ও দিনমজুর। রাস্তায় ভাড়া পাচ্ছেনা রিকশা-ভ্যান চালকরা।
প্রতিদিন সেচ দিতে হচ্ছে বোরো ধান ও সবজি ক্ষেতে। কৃষক আরিফুল বলেন, ধানে সেচ দিয়ে আর পারছিনা। দাম বেশি ডিজেলের। কিনতে গিয়ে আর পেরে উঠছি না। আল্লাহ একটু পানি দিলে বাঁচতাম।
ভ্যান চালক ছাদেক আলী বলেন, রোদে সব পুড়ে যাচ্ছে। দুপুর বেলা মনে হচ্ছে আগুন বের হচ্ছে। রাস্তায় বের হওয়া যাচ্ছে না।
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় এ জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস, এদিন বেলা ৩টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বুধবার (১২ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় এ জেলায় সর্বোচ্চ ৩৮ ডিগ্রি ও এদিন বেলা ৩টায় ৩৯ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ৩৭ দশমিক ৭ ও বেলা ৩টায় ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় জেলায় সর্বোচ্চ ৩৭ ও বেলা ৩টায় ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। রবিবার (৯ এপ্রিল) জেলায় দুপুর ১২টায় ৩৬ দশমিক ৬ ডিগ্রী ও বেলা ৩টায় ৩৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। শনিবার (৮ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ৩৬ দশমিক ৬ ডিগ্রী ও বেলা ৩টায় ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। শুক্রবার (৭ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রী ও বেলা ৩টায় ৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বৃহস্পতিবার (৬ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি ও বেলা ৩টায় ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। বুধবার (৫ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ৩৫ দশমিক ৮ ডিগ্রী ও বেলা ৩টায় ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ৩৪ দশমিক ২ ডিগ্রী ও বেলা ৩টায় ৩৬ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। সোমবার (৩ এপ্রিল) দুপুর ১২টায় ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রী ও বেলা ৩টায় ৩৫ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো।
ইনচার্জ জামিনুর রহমান আরো বলেন, প্রতিদিনই দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড হচ্ছে। গত ১১ দিন ধরে জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। দু’তিন দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই। ফলে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।