
সেরনিয়াবাত খোকনকে অভিনন্দন জানিয়ে আনন্দ মিছিল। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি
সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার মাঝি চূড়ান্ত করলো কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে আবুল খায়ের সেরনিয়াবাত খোকন।
আজ শনিবার (১৫ এপ্রিল) আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তাকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে। সভা শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের সামনে মেয়র প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন।
এরপর পরই আবুল খায়ের সেরনিয়াবাত খোকনকে অভিনন্দন জানিয়ে নগরীতে পৃথক আনন্দ মিছিল করেছেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী অনুসারী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন আওয়ামী লীগের কয়েকজন মনোনয়ন প্রত্যাশী। তাছাড়া সাদিক আবদুল্লাহ্কে পুনরায় দলের মনোনয়ন না দেয়ায় ইফতার পরবর্তী মিষ্টি বিতরণ করেছেন তার বিদ্রোহী গ্রুপের নেতাকর্মীরা।
এদিকে সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়ার পরে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন আবুল খায়ের সেরনিয়াবাত খোকন।
তিনি বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে দায়িত্ব তাকে দিয়েছেন তা সঠিকভাবে পালনের চেষ্টা করবেন। তিনি বরিশালের আওয়ামী লীগ এবং সাধারণ জনগণকে সাথে নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
তবে প্রার্থী পরিবর্তন হলেও নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কাটেনি বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতাদের। তারা বলছেন, যে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে সেটা ঘরোয়া নির্বাচনের প্রার্থী। এ প্রার্থী দিয়ে নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটলেও জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না।
জানা গেছে, আগামী ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দলীয় কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন সাতজন। এদের মধ্যে আলোচনায় ছিলেন বর্তমান মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এবং তার চাচা আবুল খায়ের সেরনিয়াবাত খোকন।
দলীয় নেতারা বলছেন, এবারের মনোনয়ন প্রাপ্তির লড়াইটা বিগত সিটি করপোরেশন নির্বাচনের থেকে ব্যতিক্রম ছিল। কেননা একই পরিবার থেকে চাচা-ভাতিজা মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও লড়াইটা ছিল ভিন্ন আঙ্গিকে। বরিশাল জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে প্রকাশ্যে সমর্থন জানালেও খোকন সেরনিয়াবাতের নেপথ্যে ছিলেন সাদিক আবদুল্লাহ বিরোধীরা। আর শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন দৌড়ে সাদিক বিরোধী শক্তিই জয়ী হয়েছে বলে মনে করছেন দলীয় নেতারা।
যদিও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম জাহাঙ্গীরের বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তাছাড়া এ নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোন প্রতিক্রিয়া জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন মহানগর আওয়ামী লীগের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। তারা আপাতত হাই কমান্ডের নির্দেশনার কথা বলছেন।
তবে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনভাবেই যাবেন না জানিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নেতা বলছেন, আওয়ামী লীগ থেকে যাকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে তিনি বরিশালের রাজনীতিতে একবারেই নতুন। মনোনয়নের পরে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগকে অবশ্যই ভূমিকা রাখতে হবে। বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। নির্বাচনের বিষয়ে তার দিক নির্দেশনার গুরুত্বের কথা বলেন দলীয় নেতারা।
যদিও মনোনয়ন ঘোষণার পর পরই সাদিক আবদুল্লাহ বিরোধী শিবিরের নেতাকর্মীরা নগরীতে আনন্দ মিছিল করেছে। এরমধ্যে নগরীর আমতলা মোড় থেকে শনিবার দুপুরে মিছিলটি বের হয়ে অশ্বিনী কুমার হল চত্বরে শেষ হয়। মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর এনামুল হক বাহার, ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মেজবাহুল ইসলাম দিপুসহ নেতাকর্মীরা।
এছাড়া নগরীর বৈদ্যপাড়া এলাকা থেকে একটি আনন্দ মিছিল বের হয়। এই মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন ২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউর রহমান বিপ্লব, সরকারি ব্রজমোহন কলেজের ছাত্র কর্মপরিষদের সাবেক সহ-সভাপতি ও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী মঈন তুষার প্রমুখ।
নৌকার মনোনয়ন পাওয়া আবুল খায়ের সেরনিয়াবাত খোকনকে অভিনন্দন জানিয়ে বের হওয়া আনন্দ মিছিলে অংশগ্রহণ করেন মেয়র পদে দলের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিনসহ সিটি করপোরেশনের ১০টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা। পরে মিছিলকারীরা নগরীর বান্দরোডে পানি উন্নয়ন বোর্ডে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীমের সাথে সাক্ষাত করেন।
এদিকে, মনোনয়ন পাওয়ার পরে সাংবাদিকদের কাছে নিজের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আবুল খায়ের সেরনিয়াবাত খোকন। তিনি বলেছেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে যেই দায়িত্ব দিয়েছেন আমি তা সঠিকভাবে পালনের চেষ্টা করবো। কেননা এটা বড় এবং একটি পবিত্র কাজ। বরিশাল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার কথা জানান তিনি।
তবে আওয়ামী লীগ যে প্রার্থী দিয়েছে সেটা ঘরোয়া নির্বাচনের প্রার্থী মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল- বাসদ বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, এই প্রার্থী দিয়ে জনগণের অধিকার এবং আশার প্রতিফলন ঘটবে না।
এছাড়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির বরিশাল বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন বলেছেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছে, এটা নিয়ে আমাদের কোন মাথা ব্যথা নেই। কারণ প্রার্থী যেই আসবে সেই স্বৈরাচারী। তারা তো আওয়ামী লীগের বাইরে না। তাদের নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে, সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না।