Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

রঙিন সুতোয় সাদা-কালো স্বপ্ন

Icon

শেরপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৭ এপ্রিল ২০২৩, ১৫:০৯

রঙিন সুতোয় সাদা-কালো স্বপ্ন

সীতা রানী কোচ। ছবি: প্রতিনিধি

মানুষের রঙিন স্বপ্ন থাকে। তবে কারও কারও জীবনে স্বপ্নের রঙ রঙিন নাও হতে পারে। তাদের স্বপ্ন হয় সাদা-কালো বা ফ্যাকাসে। এমনই একজন সীতা রানী কোচ। বয়স ষাট পেরিয়েছে। নিবাস তার গারো পাহাড়ের সীমান্ত ঘেঁষা জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার পোড়াগাঁও ইউনিয়নের অবহেলিত গ্রাম খলচান্দা কোচ পাড়ায়।

সেখানে কেবল সীতা রানী কোচই নয়, রয়েছেন আরও প্রায় ৩০০ কোচ সম্প্রদায়ের বসতি। সীতা রানী কোচ গারো পাহাড়ের কোচ পল্লীর একটি মাটির ঘরে বসবাস করেন। স্বামী সঞ্জয় কোচ কৃষি কাজে জড়িত।

দুই পুত্র সন্তানের জননী সীতা রানী সারা দিন ঘর-গেরস্তের কাজের ফাঁকে ফাঁকে মাটির উঠোনে বসে রঙিন সুতোয় সাদা-কালো স্বপ্ন বোনেন। তারা তাদের পরিধেয় শাড়ি বা তাদের ভাষায় রাঙ্গাপাতি তৈরি করে থাকেন। প্রতিটি সুতোর ফাঁকে সুতো দিয়ে নিপুণ হাতের কারুকাজে বোনা রাঙ্গাপাতি তৈরি করেন মূলত নারীরাই।

তবে কালের আবর্তে তাদের সেই তাঁতের জৌলুস নেই। যেটুকুন রয়েছে তা শুধু তাদের জীবন ধারণ আর প্রয়োজনের তাগিদে। সেই তাঁতের রঙিন সুতোর ভাঁজে ভাঁজে তাদের মেধা ও শ্রম ক্রমেই দিন দিন ফ্যাকাসে হয়ে যাচ্ছে। তাদের পরিবারের নানা কাজের ফাঁকে ফাঁকে কাপড় বুননের কাজ করে থাকেন বলে তাদের কিছুটা পুষিয়ে যায়।

সীতা রানী কোচ জানান, একটি রাঙ্গাপাতি তৈরি করতে সুতোর দাম পড়ে ৩০০ টাকা। আর সেই সুতো দিয়ে সনাতনী হাতের তৈরি তাঁতের মাধ্যমে রাঙ্গাপাতি তৈরি করতে সময় লাগে পাঁচ দিন। এরপর সেটি বিক্রি করে মূল্য পায় ৮০০ টাকা। সুতোর দাম বাদ দিলে তার শ্রমের মূল্য দাঁড়ায় দিনপ্রতি ১০০ টাকা।

যদিও তারা এটি দূরের কোনো বাজারে বিক্রি করে না। তাদের নিজেদের পরিধানের পাশাপাশি আশপাশের কোচরা যাদের তাঁত নেই তারাই কিনে নেয়। বাজারেও এটির মূল্য ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা। তবে নিজের পরিধানের জন্য তৈরি করলে নিজের শ্রমটাই মজুরি হিসেবে থেকে যায়। 

কোচদের আধুনিকতায়ন ও নানা প্রতিকূলতায় তাদের এই শত শত বছর ধরে সনাতনী বিলুপ্তপ্রায় তাঁত শিল্প নিয়ে কারও কাছেই কোনো অভিযোগ-অনুযোগ নেই। সরকারের কাছেও তারা কখনো সাহায্য সহযোগিতার কথা জানায়নি। বলতে গেলে সে রাস্তাটি তারা জানেনই না। তাই তো নীরবে-নিভৃতে গারো পাহাড়ের সবুজে ঘেরা উঁচু-নিচু টিলার ভাঁজে ভাঁজে তাদের সে স্বপ্নগুলো সাদা-কালো রয়ে গেছে। 

এ অঞ্চলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী গারো, কোচ, হাজং, ডালু, বানাই, বর্মণদের অস্তিত্বই হয়তো একদিন হারিয়ে যাবে।

স্থানীয় কোচ নেতা ও অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক পরিমল কোচ জানান, আমাদের এ গ্রামের কোচরা রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, শিক্ষা -স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে সকল বিষয়েই পিছিয়ে আছে। জীবনের তাগিদে অন্যত্র পাড়ি জমাচ্ছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের অস্তিত্ব, ঐতিহ্য ও শিল্প।


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫