
যমুনা চরের বেলে-দোআঁশ মাটিতে তুঁত গাছ রোপণ। ছবি: প্রতিনিধি
সিরাজগঞ্জে রেশম চাষ করে আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। প্রায় এক যুগ আগে যমুনা চরের বেলে-দোআঁশ মাটিতে তুঁত গাছ রোপণ করে ভালো ফলন পাওয়ায় যমুনায় ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষেরা অনেকটা স্বাবলম্বী হয়েছে। স্থানীয় রেশম উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় নদী ভাঙনকবলিত এসব মানুষ গড়ে তুলেছেন রেশম সমবায় সমিতি। এ সমিতির সদস্যরা পলু পোকা লালন-পালন করে রেশম চাষে ঝুঁকেছেন।
বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জ জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সরকারি সহযোগিতায় রেশম চাষ করে মাত্র এক মাসে গড়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। সিরাজগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার ভাটপিয়ারী, বাগবাটি, খোকশাবাড়ী ও উল্লাপাড়া উপজেলার ঘাটিনাতে ১০১ জন প্রশিক্ষিত নারী-পুরুষ পলু পোকা পালনের মাধ্যমে রেশম চাষ করছেন। সিরাজগঞ্জে যমুনার তীরবর্তী পানি উন্নয়ন বোর্ডের রানীগ্রাম বাঁধের পাশ দিয়ে পতিত জায়গায় রেশম চাষিরা তুঁত গাছ রোপণ করে রেশম চাষের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন।
আগে রেশম চাষ করতে চাষিদের পলু পোকার ১০০ ডিম সংগ্রহ করতে ২০৫ টাকা খরচ হলেও বর্তমানে রেশম উন্নয়ন বোর্ড পলু পোকার ডিম বিনামূল্যে বিতরণ করছে। রেশম বোর্ডের পক্ষ থেকে তুঁত গাছও সরবরাহ করা হচ্ছে। চাষিদের উৎপাদিত রেশম গুটি বোর্ডের মাধ্যমে প্রতি কেজি ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
রেশম চাষি ভূমিহীন হাসনা বানু বলেন, আমার স্বামী ও আমার পরিবারের সবাই মিলে রেশম চাষ করি। রেশম চাষে তেমন কোনো ঝামেলা নেই বললেই চলে। এ রেশম চাষের ওপরই আল্লাহ আমাদের খুব ভালো চালান। আমার থাকার ঘরের এক কোনায় মাচা পেতে পলু পোকা লালন-পালন করি। বছরে চার বার ১০০ করে পলু পোকার ডিম উঠাই।
একবার ডিম উঠালে ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই রেশমের গুটি তৈরি হয়। বর্তমানে প্রতি কেজি রেশম গুটি ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করছি। রেশম বোর্ড ডিম দেয় আবার সেখানেই আমরা রেশম ওজন করে বিক্রি করে দেই।
বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড সিরাজগঞ্জ কার্যালয়ের টেকনিক্যাল সুপারভাইজার জাহিদুল হাসান বলেন, বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড এসব রেশম চাষির মধ্যে আর্থিক সহযোগিতা ছাড়াও পলু পালন ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে। বর্তমানে রেশম চাষের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জের মানুষ বেশ সমৃদ্ধ হচ্ছে। রেশম বোর্ডের পক্ষ থেকে চাষিদের মাঝে নিয়মিত তুঁত চারা বিতরণ করা হচ্ছে। সেই তুঁত চারা ৩ বছর পর যখন ফলনশীল হয়, তখন সেই তুঁত গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করে পলু পালন করা হয়। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পলু পালনের আর্থিক সহায়তা করা হয়।