
হত্যার ঘটনায় আটককৃত ব্যক্তি। ছবি: যশোর প্রতিনিধি
যশোর শহরের বেজপাড়ায় চারখাম্বার মোড় এলাকায় ফারহানা পারভীন ঊর্মী (২৯) নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একছাত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ গোপনে দাফনের চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু মাগুরার শালিখায় নিয়ে গিয়ে রাতে গোসলের সময় শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে পরিবারের লোকজনের সন্দেহ হওয়ায় পুলিশকে সংবাদ দেওয়া হয়। পরে পুলিশ তার আপন ভাই ফয়েজ রাজ্জাক ফারদিন (২৩) ও মা আইরিন পারভীনকে (৫৫) জিজ্ঞাসাবাদ করলে আসল বিষয়টি জানতে পারে এবং হত্যার দায় স্বীকার করায় তাদের আটক করেছে পুলিশ।
আজ বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে যশোর কোতয়ালি থানায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক সার্কেল জুয়েল ইমরান জানান, নিহত ফারহানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় তিনি মা ও ভাইয়ের সাথে যশোর শহরের বেজপাড়ার চারখাম্বার মোড় এলাকার ইমরান কবীরের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। পারিবারিক কলহের জোর ধরে তাকে তার ভাই ফারদিন শ্বাসরোধে হত্যা করে। এরপর ফারদিন ও তার মা আইরিন পারভীন লাশ গ্রামের বাড়ি মাগুরার শালিখায় নিয়ে যায়। আত্মহত্যা করেছে বলে তাকে দাফনের করার চেষ্টা করা হয়। নিহতের গোসলের সময় তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়। এরপর ফারহানা চাচা রবিউল ইসলাম বিষয়টি শালিখা থানা পুলিশকে অবহিত করে। শালিখা পুলিশের মাধ্যমে অবহিত হওয়ার পর যশোর কোতয়ালি থানা পুলিশ ফারহানার লাশ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। একই সাথে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ফারহানার ভাই ফারদিন ও মা আইরিন বেগমকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। এরপর তারা হত্যার দায় স্বীকার করলে ফারহানার চাচা রবিউল ইসলামের দায়ের করা মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
প্রেস ব্রিফিং এ আরো জানানো হয়, নিহত ফারহানা মাগুরার শালিখা উপজেলার শ্রীহট্ট গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাক মেয়ে। ভাই ফারদিন আমেরিকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশের এলএলবির দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। গত মঙ্গলবার রাতে কি একটা বিষয় নিয়ে ভাইবোনের মধ্যে ঝগড়া হয়। সে সময় ফারদিন তার বোনকে জোরে ধাক্কা মারে। তার বোন মেঝেতে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পায়। পরে শ্বাসরোধে হত্যা করে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরো জানিয়েছেন, নিহতের বাবা আইনজীবী ছিলেন। ২০১৫ সালে তিনি মারা যান। এরপর থেকে তারা যশোরে ওই ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। ফারহানা মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়লে তাকে বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে বাড়িতে নেয়া হয়। আইরিন পারভীনের পিতার বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ির কারোর সাথে যোগাযোগ ছিল না। তারা একাই থাকতো। মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) রাত তিনটার দিকে ফারহানার লাশ একটি প্রাইভেটকারে করে বসিয়ে মাগুরার শালিখার শ্রীহট্টি গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু লাশের মাথায় আঘাত দেখে নিহতের দাদা বাড়ির লোকজনের সন্দেহ হলে পুলিশকে সংবাদ দেয়া হয়। এরপর জানা গেছে ফারহানাকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি আত্মহত্যা করেনি।
এদিকে ফারহানার ভাই ফারদিন ও মা আইরিন বেগমকে আদালতে হাজির করলে ফারদিন হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।