সেতু ভেঙে আ.লীগ নেতার রড চুরি, বর্ণনা দিলেন রিকশাচালক

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১০ মে ২০২৩, ২১:৩২

রড চুরি করে নেওয়া ভাঙা সেতু। ছবি: খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি
খাগড়াছড়ির পানছড়িতে সেতু ভেঙে আওয়ামী লীগ নেতার রড চুরির ঘটনায় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন অটো রিকশা চালক মো. নাজমুল।
গত সোমবার (৮ মে) মামলার আসামি মো. নাজমুল সিজেএম আদালতে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করেন। পরদিন মঙ্গলবার (৯ মে) সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদ আলমের আদালতে উপস্থিত হয়ে মো. নাজমুল বলেন, তাকে পানছড়ির ঠিকাদার উত্তম দেবের ম্যানেজার এমরান রমজান মাসের কোন এক সকাল ৭ টায় মোবাইলে ফোন করে উত্তমের বাসায় যেতে বলেন। নাজমুল উত্তম বাবুর বাসায় যাওয়ার পরে সেখানে থাকা অনেকগুলো রড নাজমুলের অটোরিকশায় করে এমরানের বাসায় দিয়ে আসতে বলেন। রডগুলো সিমেন্ট লাগানো পুরাতন ছিল। এমরান ও নাজমুল মিলে রড অটোতে তুলে এমরানের বাড়িতে রাখার জন্য রওয়ানা হয়। এমরানের বাড়ির সামনে একটি উঁচু টিলা থাকায় অটোরিকশা উঠতে না পারায় এমরান নাজমুলকে রডগুলো নাজমুলের বাড়িতে রাখতে বলেন। এর কয়েকদিন পর পুলিশ গিয়ে নাজমুলের বাড়ি থেকে রড উদ্ধার করে। এসময় নাজমুল তার শ্বশুর বাড়িতে ছিলেন।
উত্তমের ম্যানেজার এমরান নাজমুলকে ফোন করে জানায় উদ্ধারকৃত রড পানছড়ির ব্রিজ থেকে চুরি করা। পুলিশ নাজমুলের পিতার ঘরের পিছন থেকে রড উদ্ধার করায় মামলা হয়েছে, নাজমুল যেন বাড়িতে না আসে। পরদিন পানছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নং ওয়ার্ডের জব্বার মেম্বার নাজমুলকে ফোন দিয়ে জানায় যে নাজমুল যেন বাড়িতে না আসে আর পুলিশ যদি নাজমুলকে ধরে ফেলে তাহলে সে যেন বলে এই রড ‘জয়নাথ বাবুর’ কাছ থেকে ৪০ টাকা কেজি দরে কিনেছে। জব্বার মেম্বার নাজমুলকে আরো বলেন, তুই পালিয়ে থাক, তোকে ৫০০০ টাকা পাঠাচ্ছি, তুই উত্তম বাবুর নাম বলবি না, তোকে ২০ লাখ টাকা খরচ করে হলেও ছাড়িয়ে আনবো। এসময় জব্বারের ফোন থেকে ঠিকাদার উত্তম জব্বারের মোবাইল দিয়ে নাজমুলকে বলে তুই পালিয়ে থাক, নিশ্চিতে ঘুমা, তোর সিম ভেঙে ফেল।’
আটকের আগে মো. নাজমুল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তাকে ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে।’
সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহান ইশতিয়াক ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
এর আগে পানছড়িতে সেতু ভেঙে রড চুরির ঘটনায় ফাঁস হওয়া ৫ মিনিট ৫১ সেকেন্ডের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়। সেখানে পানছড়ি উপজেলার ঠিকাদার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক উত্তম দেবের সম্পৃক্ততা উঠে আসে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবির ওসি সামসুজ্জামান বলেন, ‘রড চুরির ঘটনায় অটোরিকশা চালক আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আমাদের তদন্তও চলছে, তদন্ত শেষে যারা জড়িত তাদের নাম উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিব।’
উল্লেখ্য, খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৪টি কালভার্ট দিনে দুপুরে ভেঙে রড নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা রড চুরির ঘটনায় দোষীদের খুঁজে বের করতে ডিবিকে তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।