Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

হাতি-মানবের দ্বন্দ্বে ২২ দিনে প্রাণ গেলো ৬ জনের

Icon

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১ মে ২০২৩, ১৯:৪৯

হাতি-মানবের দ্বন্দ্বে ২২ দিনে প্রাণ গেলো ৬ জনের

ভারত থেকে বাংলাদেশে আসা বন্য হাতি। ছবি: ময়মনসিংহ প্রতিনিধি

২২ দিনের ব্যবধানে ময়মনসিংহ বিভাগের দুই জেলায় হাতি-মানবের দ্বন্দ্বে ছয়জন মানুষের প্রাণহানিসহ এক বন্য হাতির মৃত্যুতে সীমান্ত এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফসল ও ঘরবাড়ি রক্ষার পাশাপাশি হাতি আতঙ্কে নির্ঘুম রাত পারকরছেন মানুষজন। পরিবেশবাদীরা বলছেন, বনাঞ্চল রক্ষা না করলে হাতি-মানবের দ্বন্দ্ব আরো বাড়বে।

গত দুই মে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট সীমান্তের কান্দাপাড়া গ্রামে ফসল রক্ষা করতে গিয়ে বন্য হাতির আক্রমণে প্রাণ দিতে হয় পল্লী চিকিৎসক ইদ্রিস আলীকে (৫০)। এর আগে ২২ এপ্রিল ঈদুল ফিতরের দিন একই উপজেলায় হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা যান ফরজুল ইসলাম (৩০) নামে আরেক কৃষক। কৃষক ফরজুলের মৃত্যুর চার দিন আগে পাশের উপজেলা ধোবাউড়ায় হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে প্রাণ যায় শিশু সুমন আহমেদের (১২)। ১৯ এপ্রিল উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া ইউনিয়নের রানীপুর গ্রামে তিনি মারা যান। ১৪ এপ্রিল শেরপুরের শ্রীবরদীর সিংগাবরুনা ইউনিয়নের বালিঝুরি রেঞ্জের মালাকোচা বিটে বন্য হাতির আক্রমণে প্রাণ হারান আব্দুল করিম (২৮)। একই উপজেলার মালাকুচা এলাকায় ১ মে প্রাণ যায় আব্দুল হামিদের (৫৫)।

জেলার নালিতাবাড়ীর মধুটিলা ইকোপার্কসংলগ্ন কালাপানি এলাকায় বোরো ক্ষেতে ২৫ এপ্রিল হাতির আক্রমণে গুরুতর আহত হন বিজয় সাংমা (৫২)। জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৭ এপ্রিল রাতে মারা যান তিনি। সর্বশেষ গত ৬ মে ঝিনাইগাতি উপজেলার পশ্চিম বাকাকুড়া গ্রামের কৃষক নুহু মিয়ার বৈদ্যুতিক ফাঁদে এক হাতির মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় বন বিভাগ ওই কৃষককে আসামি করে একটি মামলাও করেন।

হালুয়াঘাটের গাজীরভিটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মান্নান বলেন, গত কয়েকদিনে আমার ইউনিয়ন হাতির আক্রমণে দুইজন প্রাণ হারিয়েছেন। আমার এলাকাবাসী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। এভাবে আর কতো দিন চলবে হাতি-মানবের দ্বন্দ্ব। সরকার দ্রুত সীমান্ত এলাকায় ফাঁদ বসিয়ে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিবে এটাই আমার দাবি।

একই উপজেলার ভূবনকুড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সুরুজ মিয়া বলেন, আমার ইউনিয়নে হাতি তাড়ানোর ফাঁদে একজন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সীমান্ত এলাকার মানুষ হাতির ভয়ে নির্ঘুম রাত পার করছে। অনেকে নিজ বাড়ি ছেড়ে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছে। সন্ধ্যার পরেই ৩০ থেকে ৩৫টি হাতি দল বেঁধে এক সাথে পাহাড় থেকে নেমে খাবারের সন্ধানে ফসল নষ্ট করা শুরু করে। ফসল রক্ষা করতে গেলেই মানুষের ওপর চড়া হয় হাতির পাল। বনবিভাগ পরিকল্পনা অনুযায়ী উদ্যোগ না নিলে কোনোভাবেই মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দিতে পারবে না।


ময়মনসিংহ বন বিভাগের গোপালপুর বিট (হালুয়াঘাট ও নালিতাবাড়ী এ বিটের অংশ) কর্মকর্তা মাজাহারুল হক বলেন, হাতি ঠেকাতে তার অংশে ইতোমধ্যে দুই কিলোমিটার সৌরবিদ্যুতের ফাঁদ বসিয়েছেন। আরো কিছু কাজ চলছে। আরো অন্তত ২৫ কিলোমিটার ফাঁদ বসানো হলে অনেকটাই হাতি প্রবেশ বন্ধ করা যাবে বলেও জানান তিনি।

হাতি এবং মানবের দ্বন্দ্বে প্রাণহানির ঘটনার উদ্বেগ জানিয়ে ময়মনসিংহ পরিবেশ রক্ষা উন্নয়ন আন্দোলনের সভাপতি অধ্যক্ষ ড. শাহাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, এ থেকে নিরসনে উভয় দেশের সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। বনায়ন বাড়াতে হবে। একটা সময় প্রচুর বনাঞ্চল ছিল। মানবজাতি সেগুলো ধ্বংস করার কারণে খাবার না পেয়ে হাতির পাল লোকালয়ে চলে আসছে। মানুষের ফসল ও ঘরবাড়ির ক্ষতি করছে। মানুষও পাল্টা হাতির ওপর চড়া হওয়ায় হাতি-মানবের দ্বন্দ্বে উভয়েই মারা যাচ্ছে।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আ.ন.ম আব্দুল ওয়াদুদু বলেন, ২০১৪ সাল থেকে ২০২৩ এই দীর্ঘ ৯ বছরে ময়মনসিংহ বিভাগের চার জেলার সীমান্তবর্তী এলাকায় হাতির আক্রমণে প্রাণ হারিয়ে ৩৫ জন মানুষ। এই সময়ের মধ্যে মানুষের হামলাসহ নানা কারণে ৩০টি হাতিও মারা গেছে। আহত হয়েছেন আরো ৩২ জন। প্রায় দুই হাজারের অধিক হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। ভাংচুরের ঘটনা ঘটেছে আরো দুই হাজার। সরকার ৯ বছরে প্রায় ৬৯ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।

হাতি-মানবের দ্বন্দ্ব নিরসনে অনেকটা অসহায়ত্ব প্রকাশ করে তিনি আরো বলেন, চার জেলার ১৬০ কিলোমিটারের মতো সীমান্ত রয়েছে। এসব সীমান্তের করিডোর দিয়ে ভারতের মেঘালয় থেকে প্রায় শতাধিক বন্য হাতি বর্তমানে বাংলাদেশে প্রবেশরত রয়েছে। হাতির প্রবেশ বন্ধে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে শেরপুরের ঝিনাইগাতি সীমান্তে ১৩ কিলোমিটার ব্যাপী সৌরবিদ্যুতের ফাঁদ নির্মাণ করা হয়েছিল। আর্থিক সংকটের কারণে সংস্কার না করায় তা নষ্ট হয়ে পড়েছে। নতুন ভাবে সেখানে ৮ কিলোমিটার সৌরবিদ্যুতের ফাঁদ নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। গোপালপুরে দুই কিলোমিটার সৌরবিদ্যুতের ফাঁদ নির্মাণ করা হয়েছে। আরো ২৫ কিলোমিটার সৌরবিদ্যুতের ফাঁদ নির্মাণ করার পাশাপাশি সীমান্তে কাঁটাযুক্ত গাছ লাগানোর প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। এসব বাস্তবায়ন হলেই বন্য হাতির আক্রমণ অনেকটাই কমে আসবে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫