Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

সভায় এসপির বিরুদ্ধে এমপির বিষোদগার

Icon

ফরিদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৩, ২২:০৪

সভায় এসপির বিরুদ্ধে এমপির বিষোদগার

ফরিদপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা। ছবি: সংগৃহীত

ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর চৌধুরী লাবু বলেছেন, বর্তমান পুলিশ সুপার ফরিদপুরে আসার পর নগরকান্দায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। নগরকান্দাকে সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য করা হয়েছে।

তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার (১১ মে) বিকেলে সহস্রাধিক ব্যক্তি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নগরকান্দা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা করেছে, কার্যালয়ের চেয়ার ভাঙচুর করেছে, এমনকি বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবিও নিচে ফেলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ছবি বাইরে এনে ভাঙচুর করা হয়েছে। কার্যালয়ের সাইনবোর্ড ও কাঁচ ভাঙা হয়েছে। পুলিশ চেয়ে চেয়ে দেখেছে।

তিনি আরো বলেন, ওই সময় ঘটনাস্থলে শত শত পুলিশ উপস্থিত ছিল। তাদের সামনেই সব ঘটনা ঘটল। পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করল না। মনে হয়েছে, তাদের জামাই আদরে নেওয়া হচ্ছে।

আজ রবিবার (১৪ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার। সভায় পুলিশ সুপার মো. শাজাহান উপস্থিত ছিলেন না।

নগরকান্দা, সালথা ও সদরপুরের কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব বলেন, কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান একজন সন্ত্রাসী। তিনি চাঁদাবাজি করেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ডাঙ্গী ইউনিয়নের মুরাদ নামে এক ব্যক্তি সন্ত্রাসী কাজ করে যাচ্ছে, তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এই এসপি সাহেব ফরিদপুরে আসার পর আমার নগরকান্দা সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে।

সভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক। তিনি বলেন, সংসদ সদস্য এভাবে ঢালাও ভাবে পুলিশ কর্মকর্তার নামে অভিযোগ না দিয়ে চিঠি আকারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের দিলে ভালো হতো, শোভন হতো।

তিনি সংসদ সদস্য শাহদাবের উদ্দেশে বলেন, আপনি একজন সংসদ সদস্য। এভাবে সরকারি কর্মকর্তার বিষয়ে না বললে ভালো হতো।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ্ ইশতিয়াক বলেন, মাননীয় সংসদ সদস্য একজন বিজ্ঞ মানুষ। এসপি সাহেব সম্পর্কে এ বক্তব্য এখানে না দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে পারতেন। এ বক্তব্য সারা দেশে পুলিশ বাহিনীর মধ্যে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সুমন রঞ্জন সরকার বলেন, আমি মনে করি এসপি, ডিসি, সংসদ সদস্য এক একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠান যদি মুখোমুখি দাঁড় করানো হয় তবে তা আমাদের জন্য ভালো হবে না। নির্বাচনের আগে নানাভাবে পানি ঘোলা করা হয়ে থাকে। পানি যাতে কেউ ঘোলা করতে না পারে সেদিকে আমাদের নজর রাখতে হবে। সবাই যদি নিজে সৎ থেকে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে কাজ করি, তাহলে সমাজে অপরাধ কমে আসবে। নিজে আইন মানব, অন্যকে আইন মানাতে সহায়তা করব।

জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানে রাজনৈতিক ঐক্যমত্য প্রয়োজন। নেতাদের মধ্যে নেতৃত্বে প্রতিযোগিতা অনেক জায়গায় আছে। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা আলোচনায় বসে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান করলে ভালো হয়। জনপ্রতিনিধি প্রশাসন সবাই এক সূত্রে বাঁধা। সবাইকে এক সাথে মিলেমিশে কাজ করতে হবে।

সভার শেষে সংসদ সদস্য শাহদাব বলেন, আমার বক্তব্য কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে নয়। আমার বক্তব্য জেলা পুলিশের প্রধান ব্যক্তির বিরুদ্ধে। কেননা, উনি দায়িত্বে আছেন এবং ওনার দায়িত্বের অবহেলায় এসব ঘটনা ঘটছে।

সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাবিবুর রহমান, ফরিদপুর পৌরসভার মেয়র অমিতাভ বোস, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক, সালথা উপজেলা চেয়ারম্যান ওয়াদুদ মাতুব্বর, চরভদ্রাসন উপজেলা চেয়ারম্যান মো. কাউসার প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, নগরকান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগ দুইভাগে বিভক্ত। এক ভাগে রয়েছে সংসদ সদস্য শাহদাবের অনুসারীরা। অপর অংশে উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন মিয়ার অনুসারীরা।

গত ১১ মে বিকেল ৪টার দিকে উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ‘বিশেষ সভা’ করতে যাওয়ার পথে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। জামাল মিয়ার সমর্থকরা সংখ্যায় বেশি হওয়ায় সংসদ সদস্যের সমর্থকরা পালিয়ে যায়। এই সময় জামালের সমর্থকরা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে যায়। জামাল সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দিয়ে দ্রুত ফিরে যান। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জামালের সমর্থকরা ফিরে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের চেয়ার ভাঙচুর অবস্থায় দেখা গেলেও দেওয়ালে টাঙানো বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও সাজেদা চৌধুরীর ছবি ঠিক ছিল। এর কিছু পরে ছবিগুলো নিচে নামানো অবস্থায় দেখা যায়। 

নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিরাজ হোসেন বলেন, ওই ঘটনায় দুটি অভিযোগ থানায় জামা পড়েছে। অভিযোগ দুটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫