কক্সবাজারে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা: উপকূলে ফিরে এসেছে জেলেরা

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ২১ মে ২০২৩, ১৩:৫৭

উপকূলে ফিরে এসেছে জেলেরা। ছবি: কক্সবাজার প্রতিনিধি
কক্সবাজারসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে সাগরে মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার (২০মে) থেকে আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। ইতোমধ্যে সাগর থেকে উঠে এসেছে কক্সবাজারের লক্ষাধিক জেলেসহ সারাদেশের ১০ লক্ষাধিক জেলে।
১৯টি উপকূলীয় জেলার ১০ লাখেরও বেশি জেলে নদী ও সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
মৎস্য অধিদপ্তরের উপপ্রধান (সামুদ্রিক শাখা) মুহাম্মদ তানভীর হোসেন চৌধুরী বলেন, ২০ মে থেকে সাগরে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। সাগরে মাছ সংরক্ষণ ও প্রজননের জন্য এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সাগরে মাছ ধরার জন্য যে অনুমতি দেওয়া হয়, শনিবার মধ্যরাত থেকে তা বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৪ সাল থেকে এ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
সুন্দরবন অঞ্চলে জুন, জুলাই, আগস্ট-এই তিন মাস মাছ ধরাসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ থাকে। সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকার সময়ের সঙ্গে সমন্বয় করে এই অঞ্চলে অতিরিক্ত ১২ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। সুন্দরবন অঞ্চলে ২০ মে থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মাছ ধরা বন্ধ থাকছে। এ অঞ্চলে ৩ মাস ১২ দিন মাছ ধরা বন্ধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করবে বন অধিদপ্তর।
কক্সবাজার জেলার প্রায় ৬ হাজার ফিশিং ট্রলার বা বোট ৬৫ দিন নামতে পারবে না সাগরে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বদরুজ্জামান জানিয়েছেন, লক্ষাধিক জেলে দুই মাস ৫ দিনের জন্য সাগর থেকে উঠে এসেছেন কূলে।এর মধ্যে জেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ৬৪ হাজার ৭৬৪ জন। এসব জেলেদের সরকার খাদ্য ও নগদ টাকা বিতরণ করেন প্রতি বছর। এবছরও তাই করা হবে।
কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞা পালন করতে সমুদ্র থেকে উপকূলে চলে এসেছে সকল মাছ ধরার ট্রলার। নিষেধাজ্ঞার ৬৫ দিন জেলেরা জাল বুনন, জাল টোনা ও বোট মেরামত করে এই সময় পার করে দিবেন।
কক্সবাজার মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নেতৃবৃন্দ বলেন, এই ৬৫ দিন জেলেদের প্রণোদনা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। কারণ জেলেরা অন্য কোন পেশায় অভ্যস্ত নয়। এসব দরিদ্র মানুষের কথা ভুলে গেলে চলবে না। অনেক জেলে পরিবার আছে একজনের আয়ের উপর দিয়ে চলে ৭-৮ জনের সংসার। আবার জেলেদের প্রণোদনার খাদ্য ও নগদ অর্থ লোপাট হওয়ার আশঙ্কা ও থেকে যায়। তাই এ কাজে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, জনপ্রতিধির পাশাপাশি মৎস্যজীবী নেতৃবৃন্দকে ও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়ার জেলে আবুল কালাম বলেন, নিষেধাজ্ঞার এই সময়ে আমাদের আর্থিক সংকট তৈরি হবে। যার কারণে সরকারী প্রণোদনা বৃদ্ধির পাশাপাশি, সকল জেলেদের কাছে সহায়তা পাঠানো দরকার। বছরে কয়েকবার সাগরে মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, যার ফলে আমাদের টাকা পয়সাও জমা থাকে না। এছাড়াও ঋণের বোঝা রয়েছে।
১১ মে সচিবালয়ে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মন্ত্রী বলেন, সামুদ্রিক মাছের প্রধান প্রজননকালে ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ কার্যক্রমের উদ্দেশ্য হচ্ছে মাছের নির্বিঘ্ন প্রজনন নিশ্চিত করে মৎস্যসম্পদ বৃদ্ধি করা। এসময় সব বাণিজ্যিক মৎস্য ট্রলারের সমুদ্রে যাওয়া বন্ধ রাখা হবে। যান্ত্রিক ও আর্টিসানাল মৎস্য নৌযান ঘাটে বাঁধা থাকবে। স্থানীয় প্রশাসন, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও সশস্ত্র বাহিনী মাছ ধরা বন্ধ রাখার কাজে সহায়তা করবে।
সভায় মোট ১২টি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। তার মধ্যে রয়েছে সমুদ্রযাত্রার প্রবেশপথগুলোতে নজরদারি জোরদার করা, মৎস্য নৌযানের সমুদ্রযাত্রা শতভাগ বন্ধ নিশ্চিত করা, দেশের সমুদ্রসীমায় বিদেশি নৌযানকে মৎস্য আহরণে বিরত রাখা, নৌযান নোঙরস্থলে আবদ্ধ রাখা, সমুদ্রের তীরবর্তী বরফকলগুলো সীমিত পর্যায়ে চালু রাখা, মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশনের সমুদ্রতীরবর্তী মাছ অবতরণকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা, সব মাছ ধরার নৌযানকে পর্যায়ক্রমে ট্র্যাকিংয়ের আওতায় নিয়ে আসা, সাগরে মাছ ধরায় নিয়োজিত থাকা সব নৌযানকে ১৯ মে এর মধ্যে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা।