প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ স্বাস্থ্যসেবায় অনেকদূর এগিয়েছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৩, ২৩:২৩

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক। ছবি: সংগৃহীত
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার
নেতৃত্বে দেশ স্বাস্থ্যসেবায় অনেকদূর এগিয়েছে। মাতৃ ও শিশু মৃত্যু কমিয়ে আমরা এসডিজি
অর্জন করতে পেরেছি। আগে নানা রোগে লোকজন মরতো, চিকিৎসার ব্যবস্থা ছিলনা বললেই চলে।
কিন্তু আজকে মফস্বলের কমিউনিটি ক্লিনিক বিশ্ব স্বীকৃতি পেয়েছে। এটাকে জাতিসংঘ বিশ্বের
রোল মডেল হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিকসহ হোপের মতো হাসপাতাল গড়ে উঠে উন্নত
স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। উন্নত অস্ত্রোপচার বিভাগসহ ফিস্টুলার হাজারো রোগী
হোপের সেবা নিয়েছে। এটা দেশের জন্য অনন্য নিদর্শন।
আজ মঙ্গলবার (৩০ মে)
বিকেল ৫টায় কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কের রামুর চেইন্দায় হোপ ফাউন্ডেশন কার্যালয়ে নবনির্মিত
‘হোপ মেটার্নিটি এন্ড ফিস্টুলা সেন্টার’ উদ্বোধনীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী আরো বলেন, দেশের
জনগণের স্বাস্থ্যসেবা শতভাগ নিশ্চিত করা সরকারের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই ব্যক্তি পর্যায়
ও বেসরকারি উদ্যোগে স্বাস্থ্যসেবার নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে সেবা নিশ্চিত করা হয়।
হোপ ফাউন্ডেশন এমন একটি সংস্থা। তবে, এটি প্রসব-জনিত ফিস্টুলা নিয়ে যে সেবার কার্যক্রম
চালাচ্ছে তা দেশের জন্য অভাবনীয়। কক্সবাজারের মতো জায়গায় হোপ মেটার্নিটি ও ফিস্টুলা
সেন্টার গড়ে ১০৪ বেডের মাতৃ সেবার আয়োজন দুঃসাহসিক বিষয়। এ কার্যক্রম সত্যি অতুলনীয়।
হোপ ফাউন্ডেশনের বোর্ড
অব ডিরেক্টর্সের সদস্য ডা. সিরাজুল ইসলাম শিশিরের সভাপতিত্বে উদ্বোধনীতে স্বাগত বক্তব্য
রাখেন হোপ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ডা. ইফতিখার উদ্দিন মাহমুদ মিনার।
হোপের কান্ট্রি ডিরেক্টর
কে এম জাহিদুজ্জামানের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর
রহমান, রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহমিদা মুস্তফা, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের হাসপাতাল
অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব নাজমুল হক খান, এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক শেখ মনিরুজ্জামান,
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম, কক্সবাজার-২
আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, কক্সবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল,
ফিস্টুলা ফাউন্ডেশনের সিইও কেটি গ্রান্ট প্রমুখ।
হোপ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা
ও চেয়ারম্যান মা ও শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. ইফতিখার মাহমুদ বলেন, মিডওয়াইফারি সেবার
মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির মাধ্যমে প্রসব-জনিত ফিস্টুলা রোধ করা সম্ভব। সেটি
মাথায় নিয়ে হোপ ফাউন্ডেশন ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ
মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিলের অনুমোদন-ক্রমে তিন বছর
মেয়াদী সম্পূর্ণ আবাসিক ‘ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি’ কোর্সটি চালু করেছে। এখান হতে পাশ করা মিডওয়াইফরা
বাংলাদেশ সরকারের পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে সরকারি
হাসপাতালে কাজ করছে এবং অন্যরা বিভিন্ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে
যথেষ্ট সুনামের সাথে দায়িত্বপালন করছে। হোপ হসপিটালটি প্রসব-জনিত ফিস্টুলা চিকিৎসায়
অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে।
সম্পূর্ণ বিনামূল্যে
এ জটিল চিকিৎসা একযুগ ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে অত্যন্ত সুনামের সাথে করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে দেশ থেকে প্রসব-জনিত ফিস্টুলা নির্মূলের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ।
হোপ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান
আরো জানান, প্রসব-জনিত ফিস্টুলা চিকিৎসায় যারা ভালো হয়েছেন তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা
করা হচ্ছে। সুস্থ হওয়া অনেককে ফিস্টুলা অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ দিয়ে প্রশিক্ষণের
ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের নিয়ে আরও বড় স্কেলে কাজ করার পরিকল্পনার আছে। চট্টগ্রাম
বিভাগের এগারটি জেলায় ফিস্টুলা রোগীদের শনাক্ত করে চিকিৎসার আওতায় আনা হচ্ছে। এছাড়াও
বরিশালের চার জেলাসহ ফিস্টুলা রোগী নিয়ে আরও কাজ করছে বিএসএমএমইউ, কুমুদিনী হাসপাতাল
(টাঙ্গাইল), ল্যাম্ব হাসপাতাল (দিনাজপুর)। বর্তমানে হোপ হসপিটাল বছরে ১০০ সার্জারি
করছে। তা বাড়িয়ে ৩০০ করার টার্গেট রয়েছে হোপ ফাউন্ডেশনের।
স্বাস্থ্য বিভাগের মতে,
দেশে মাতৃ-স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সরকার অনেক বেশি সতর্ক। বিভিন্ন যুগোপযোগী কার্যক্রম
চলমান থাকায় বিগত ১০ বছরে মাতৃ-স্বাস্থ্যের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। মিডওয়াইফরা গ্রাম-গঞ্জে
কাজ করায় মাতৃ ও নবজাতকের মৃত্যু কমেছে। মাতৃ স্বাস্থ্যের উন্নতি হওয়ায় কমছে ফিস্টুলা
রোগীর প্রকোপ। তবে, সব ফিস্টুলা রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা একটা বড় চ্যালেঞ্জ।
অসচেতনতায় প্রতি বছরে
হাজারো রোগী তালিকায় যোগ হয়। দেশে সব হসপিটাল একত্রে মিলে সার্জারি করতে পারে ৭০০ থেকে
৮০০ ফিস্টুলা রোগী। এ কারণে নাম্বারটা কমছে না। এখন সমন্বিতভাবে বছরে সার্জারির এ সংখ্যাটা
কয়েক হাজারে নিয়ে যাওয়াটা দরকার। দেশে ৩ থেকে ৪ গুণ ফিস্টুলা সার্জারি বাড়াতে পারলে
আগামী ৫-৭ বছরে এর প্রকোপ অনেক কমে আসবে। এভাবে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রসব-জনিত
ফিস্টুলা নির্মূল অনেকটা সম্ভব হবে।