লক্ষ্মীপুরে স্বামীকে হত্যার দায়ে স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৩, ১৬:০১

প্রতীকী ছবি
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দিঘলীতে মিলন হোসেনকে (৬০) শ্বাসরোধ করে হত্যার দায়ে স্ত্রী জাহানারা বেগমকে (৫১) যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন আদালত। একই সাথে তার ১০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আজ বুধবার (৩১ মে) দুপুরে জেলা দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দিয়েছেন। নিহত মিলনের আচার-আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে স্ত্রী জাহানারা বেগম তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছে, দাবি স্বজনদের।
রায়ের সময় দণ্ডপ্রাপ্ত জাহানারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মামলার বাদী তাদের ছেলে সাফায়েত হোসেন। তাদের বাড়ি সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের দক্ষিণ খাগুরিয়া গ্রামে।
মামলা ও আদালত সূত্র জানা যায়, ২০২২ সালে নিহতের বাড়ির পাশের একটি বাগানে সুপারী গাছের সাথে হাতবাঁধা মিলনের মরদেহ পাওয়া যায়। পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠায়। পরদিন মিলনের ছেলে সাফায়েত হোসেন বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ সন্দেহভাজন হিসেবে নিহত মিলনের স্ত্রী জাহানারা বেগমকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এতে তিনি স্বামীকে হত্যার দায় স্বীকার করেন এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
জবানবন্দিতে তিনি জানান, স্বামী মিলনের সাথে তার ৩৫ বছরের দাম্পত্য জীবন। তাদের তিন ছেলে এবং দুই মেয়ে। বিয়ের পর মিলন অস্বাভাবিক আচরণ করে আসতো। খিটখিটে স্বভাবের স্বামী মিলন বিভিন্ন সময়ে নির্যাতন করতো তাকে। এছাড়া সংসারে মনযোগী না হয়ে তিনি তার মনমতো চলতেন। এ নিয়ে দাম্পত্য কলহ লেগেই ছিলেন তাদের মধ্যে। ঘটনার সময় রমজান মাস ছিল। রমজানের শেষ ১০ দিন স্ত্রী জাহানারা তার স্বামী মিলনকে মসজিদে এতেফাকে বসতে বলেন। এতে তিনি গালমন্দ করেন। ঘটনার রাতে জাহানারা বেগম তার স্বামীকে ঘরের পেছনের একটি বাগানে নিয়ে গিয়ে সুপারী গাছের সাথে গরুর দড়ি দিয়ে হাত বেঁধে ফেলে। পরে একটি লাইলনের দড়ি গলায় পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মরদেহ ফেলে রাখেন। পরদিন সকালে জাহানারা নিজেই পরিবারের সদস্যদেরকে স্বামীর মৃত্যুর সংবাদ জানান এবং দুর্বৃত্তরা তাকে হত্যা করেছেন বলে দাবি করেন। পরে পুলিশের কাছে তার আচরণ সন্দেহজনক হলে জিজ্ঞাসাবাদে পরিকল্পিতভাবে স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করেন। ২০২২ সালের ১৫ জুন জাহানারা বেগমকে স্বামী হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দেন পুলিশ।
জেলা জজ আদালতের পিপি জসিম উদ্দিন বলেন, আদালত সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ঘটনার ১৩ মাসের মাথায় হত্যার দায়ে জাহানারা বেগমের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দেন৷