
নিহত শামসুর রহমান খোকার ছেলে মোশারেফ হোসেন মোশা ও ভাই তাহের আলী। ছবি: যশোর প্রতিনিধি
দীর্ঘ ২৩ বছর পর যশোর সদরের জোড়াদাহ (হৈবতপুর) গ্রামের শামসুর রহমান খোকা হত্যা মামলায় ছেলে ও ভাইকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেওয়া হয়েছে আরও ৬ জনকে।
আজ বুধবার (৩১ মে) বিশেষ দায়রা জজ ও বিশেষ জজ (জেলা ও দায়রা জজ) আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সামছুল হক এক রায়ে এ আদেশ দিয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশেষ পিপি সাজ্জাদ মোস্তফা রাজা।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, নিহত শামসুর রহমান খোকার ছেলে মোশারেফ হোসেন মোশা ও ভাই তাহের আলী।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, ২০০০ সালের ১১ মে রাত ৯টার দিকে শামসুর রহমান খোকাকে সালিসের জন্য প্রতিবেশি মেহের আলীর বাড়িতে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই রাতে তিনি আর বাড়ি ফেরেননি। অনেক খোঁজাখুঁজি করে তাকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে ১৮ মে কোতয়ালি থানায় জিডি করে স্বজনরা। পরবর্তীতে ২৩ আগস্ট নিখোঁজ শামসুর রহমান খোকার স্ত্রী ছায়েরা খাতুন নিজের তিন ছেলেসহ ৮ জনকে আসামি করে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হত্যা ও গুমের অভিযোগে মামলা করেন। আদালতের নির্দেশে অভিযোগটি ২৯ আগস্ট কোতয়ালী থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়।
মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, শামসুর রহমান খোকা তার নিজ পুত্রবধূসহ পরিবারের নারীদের সাথে জোরপূর্বক অনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলেন। বিষয়টি জানাজানির পর পরিবার ও অন্যদের মধ্যে চরম অসন্তোষ দেখা দেয়। এ নিয়ে সালিশ বিচারও হয়। নিখোঁজ শামসুর রহমান খোকা হত্যা ও গুমের মামলায় ২০০১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আজগর আলীকে আটক করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সুবর্ণমায়া গ্রামের ডাক্তার জিন্নাত আলীর বাথরুমের সেফটি ট্যাংকের ভিতর থেকে শামসুর রহমান খোকার কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ২০০০ সালের ১১ মে ছেলে মোশারফ হোসেন মোশা, ভাই তাহের আলী ও আজগর আলী গ্রামের মাঠের মধ্যে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর লাশ কাধে করে নিয়ে ওই সেফটি ট্যাংকের ভিতর ফেলে রেখে ছিল।
আটক আসামিদের দেওয়া তথ্য ও সাক্ষীদের বক্তব্যে হত্যার সাথে জাড়িত থাকায় তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই শাহদারা খান তদন্ত শেষে ২০০২ সালের ৯ মে নিহতের ছেলে মোশারেফ হোসেন, ভাই তাহের আলীসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দেন।
বিচারকালে আজগার আলী মারা যাওয়ায় ৮ জনের বিরুদ্ধে বিচার শুরু হয়। দীর্ঘ সাক্ষী গ্রহণ শেষে আসামি মোশারেফ হোসেন মোশা ও তাহের আলীর বিরুদ্ধে হত্যা ও গুমের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাদের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাস করে সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।
হত্যা ও গুমের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় অপর আসামি নিহত শামসুর রহমানে দুই ছেলে ওয়াদুদ হোসেন, মওদুদ হোসেন, মৃত মীর আলীর ছেলে ইনছার আলী, মেহের আলী, ময়না গাজীর ছেলে নুর ইসলাম, মৃত আক্কাচ আলীর ছেলে শহিদুল ইসলামদের খালাস দিয়েছেন বিচারক। রায় শেষে সাজাপ্রাপ্ত মোশা ও তাহেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন বিচারক।