Logo
×

Follow Us

জেলার খবর

জীবিত হওয়ার আশায় খাটের নিচে লাশ রেখে স্বজনদের অপেক্ষা

Icon

নরসিংদী প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১১ জুন ২০২৩, ২০:৪৮

জীবিত হওয়ার আশায় খাটের নিচে লাশ রেখে স্বজনদের অপেক্ষা

নরসিংদী জেলার মানচিত্র

নরসিংদীর মনোহরদীতে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার আশায় ছয়দিন ধরে নিজ ঘরের খাটের নিচে রাখা হয়েছিল শামীমা সুলতানা নাজমা (৫৬) নামে এক গৃহবধূর মরদেহ। অর্ধগলিত লাশের সাথে পুরো পরিবারের একই সাথে স্বাভাবিক জীবনযাপনের ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনাটি ঘটেছে মনোহরদী উপজেলা সদরের পৌর এলাকার ৭নং ওয়ার্ডে। খবর পেয়ে শনিবার মধ্যরাতে নিজ ঘর থেকে অর্ধগলিত মরদেহটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। পরে মরদেহটি ময়না তদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দীন।

নিহত গৃহবধূ ৪ সন্তানের জননী শামীমা সুলতানা নাজমা ওই এলাকার মোক্তার উদ্দীন তালুকদারের স্ত্রী। পরিবারটি কথিত ফরিদপুরের এক পীরের মুরিদ বলে জানান পুলিশ ও স্থানীয়রা।

পরিবারের সদস্যদের বরাতে ওসি ও এলাকাবাসী জানান, স্ত্রী শামীমা সুলতানা নাজমা ও ৪ সন্তান নিয়ে নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন মোক্তার উদ্দীন তালুকদার। গত সোমবার ভোরে তার স্ত্রী শামীমা সুলতানা নাজমা মারা যান। তিনি মৃত্যুর আগে তার পরিবারের সবাইকে বলে গেছেন, মৃত্যুর তিন থেকে চারদিন পর তিনি পুনরুজ্জীবিত হবেন। এজন্য পীরের ভক্ত পরিবারটি মৃত্যুর খবর কাউকে না জানিয়ে তার মরদেহ বসত ঘরের খাটের নিচে রেখে খুব স্বাভাবিকভাবে দিন কাটাচ্ছিলেন। এতে পাড়াপ্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনদের কেউ এই মৃত্যু ও পরবর্তী ঘটনা টের পাননি। পরে দরজা বন্ধ ঘরের ভেতর থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লে সন্দেহজনক ঘটনা ভেবে প্রতিবেশীরা পুলিশে খবর দেন। পুলিশ শনিবার মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে দরজা ভেঙে ঘরের ভেতরের খাটের নিচ থেকে গৃহবধূ শামীমা সুলতানা নাজমার অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য নরসিংদী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

মরদেহ উদ্ধারের সময় নাজমার স্বামী মোক্তার উদ্দীন তালুকদার ও তার ৪ কন্যা সন্তান ঘরের ভেতরেই অবস্থান করছিলেন। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের থানায় নিয়ে যায়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

প্রতিবেশীরা জানান, পরিবারটির সদস্যরা সবসময় সারা দিন ঘরের দরজা বন্ধ রেখে ঘরের ভেতরেই অবস্থান করতেন। শিক্ষিত পরিবারটির এমন আচরণকে রহস্যজনক মনে করতো এলাকাবাসী। মুক্তার উদ্দীন তালুকদার ও নিহত শামীমা সুলতানা নাজমার ৪ কন্যা সন্তানই স্নাতক-স্নাতকোত্তর পাস। বড় মেয়ে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তবে ১৮ মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার কারণে তার নামে একটি বিভাগীয় মামলা হয়েছে।

মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদ উদ্দীন জানান, পরিবারটি ফরিদপুরের আটরশি এক পীরের মুরিদ ছিলেন বলে জানিয়েছেন। তারা প্রতিদিন ভোর ৩টা থেকে ৬টা পর্যন্ত জিকির করতেন। জিকিররত অবস্থায় ওই গৃহবধূর মৃত্যু ঘটেছে বলে তারা পুলিশকে জানিয়েছে। মরদেহ উদ্ধারের পর ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। এই ঘটনায় লাশের অবমাননার জন্য গৃহকর্তা মুক্তার উদ্দীনকে আসামি করে মামলা হয়েছে বলে জানান ওসি। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫