ঝড়ে বিধ্বস্ত বরিশাল, প্রাণ গেলো ঘুমন্ত ব্যক্তির

বরিশাল প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৩, ১৬:৫০

ঝড়ে ডুবে যাওয়া লঞ্চ। ছবি: বরিশাল প্রতিনিধি
বরিশালে আষাঢ়ের প্রথম দিনে ঝড়ের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত হয়েছে বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকা। এসময় লঞ্চডুবি, গাছের নিচে চাপা পড়ে ঘুমন্ত ব্যক্তির মৃত্যু, জেলে নিখোঁজসহ গাছপালা ভেঙে যোগাযোগ ও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) ভোর সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ ছড় শুরু হলে বরিশাল সদর, মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা, মুলাদী এবং বাকেরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এসব ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং থানা পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
তারা জানিয়েছেন, মেহেন্দিগঞ্জের কাজিরহাট এলাকায় ঝড়ের কবলে এমভি ইনজাম নামের একটি লঞ্চ ডুবে গেছে। বরিশাল সদরে গাছপড়ে শেখ মোহাম্মদ রজিত বিহারী নামে একজন নিহত হয়েছে। হিজলায় নদীতে পড়ে এক কিশোর জেলে নিখোঁজ ও তার বাবা আহত হয়েছেন।
মেহেন্দিগঞ্জের কাজীরহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জুবাইর আহমেদ বলেন, সকালে লঞ্চটি হিজলার টেক থেকে ১৫-২০ জন যাত্রী নিয়ে কাজিরহাটের লতা ঘাটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। সেখান থেকে বরিশালের দিকে যাওয়ার কথা ছিল লঞ্চটির।
তবে লতা ঘাটে পৌঁছানোর পূর্বে হঠাৎ আবহাওয়া খারাপ হয়ে গেলে লঞ্চটিকে পূর্ব ভংগা সংলগ্ন নদীর চরে উঠিয়ে দেয় চালক। এরপর যাত্রীরা লঞ্চটি থেকে নিরাপদে নেমেও যায়। কিছুক্ষণ পর ঝড় শুরু হলে লঞ্চটি কাত হয়ে একাংশ ডুবে যায়। বর্তমানে লঞ্চটিকে উদ্ধার কাজ চলছে।
হিজলা-বরিশাল রুটে চলাচলকারী এমভি ইনজাম লঞ্চের সুকানি নিজাম বলেন, সকাল সাড়ে ৬ টার দিকে হিজলা থেকে ১৬ জন যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করি। সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে ঝড় শুরু হয়। এতে লঞ্চের তলা ফেটে যায়। দ্রুত লঞ্চটি তীরে নোঙর করে যাত্রীদের নামিয়ে দেই৷ যে কারণে কোনো হতাহত বা নিখোঁজের ঘটনা ঘটেনি। সবাই নিরাপদে আছেন।
বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। লঞ্চটি থেকে যাত্রীরা নিরাপদে পাড়ে নেমেছে। ঝড়ে লঞ্চটির পিছনের অংশ ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া অংশ তুলতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
অপরদিকে বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের রাঢ়ীমহল গ্রামে আকস্মিক ঝড়ে ঘরে গাছ পড়ে ঘুমিয়ে থাকা শেখ মোহাম্মদ রজিত বিহারী (৭৫) নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে।
চরবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহতাব হোসেন সুরুজ জানান, বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) ফজরের নামাজ পড়ে স্ত্রী ও দুই ছেলেসহ নিজের টিনের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন বৃদ্ধ রজিত বিহারী। হঠাৎ ঝড়ে তার ঘরের ওপর একটি চাম্বল গাছ উপড়ে পড়ে। এতে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। তবে স্ত্রী ও দুই সন্তান অক্ষত রয়েছেন।
অপরদিকে হিজলা উপজেলার চরকিল্লা গ্রামের আবুল কালাম রাঢ়ীর ছেলে মাসুদ রাঢ়ী (১৮) মাছ ধরার সময় নদীতে পড়ে নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় তার বাবা আবুল কালাম রাঢ়ী হিজলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
হিজলা উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবিদ হাসান বলেন, মেঘনা নদীতে মাছ শিকার করতে গিয়ে বাবা কালাম ও ছেলে মাসুদ ঝড়ো বাতাসে নৌকা উল্টে নদীতে পড়ে যায়। বাবাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে অন্য জেলেরা হাসপাতালে ভর্তি করেছে। তবে ছেলে নিখোঁজ রয়েছে।
তিনি দাবি করেছেন, ঝড়ে উপজেলার অন্তত ২৫টি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙে পড়েছে বেশকিছু গাছ। রাস্তার ওপর গাছ পড়ে থাকায় সকাল থেকে বরিশালের সঙ্গে বাস চলাচল দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল। পরে গাছ অপসারণ করা হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
তিনি জানান, গাছ পড়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে থাকা একটি অ্যাম্বুলেন্স দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। হাসপাতাল চত্বরের বেশকিছু গাছ ভেঙে পড়েছে। হাসপাতালের এসিও ভেঙে পড়েছে। তাছাড়া গাছ পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহও এখনো বন্ধ রয়েছে।
বরিশাল আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক প্রণব কুমার রায় জানান, বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) সকাল ৬টা ৫৫ মিনিট থেকে দমকা বাতাস বইতে শুরু করে। সকাল ৭টা ১০ মিনিট পর্যন্ত দমকা বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হয়েছে। এসময় ২৯.৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে এবং ঘণ্টায় ৪৬ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো বাতাস বয়ে গেছে।